ফিরে এসেছিলো রায়ান গুড। সে এসেছিলো তার দু:খিনি মা'কে খুঁজতে। মা মানেই যে মায়া, মা মানেই এক মমতাময়ী নারী। আর আপনারা এও জানেন নারীর অহংকার তার মাতৃত্বে। কিন্তু যার রক্তমাংসে তিল তিল করে গড়া আপন আত্মজ সেই নিষ্পাপ শিশুর জন্মটা এমন কলংকিত হবে কেন? কেন সন্তানকে ছুড়ে ফেলে কোন মা কলংক (!!) মুছতে চাইবে? সে প্রশ্ন আমাকে করবেন না।

না- রায়ান গুড তার জনককে কখনো জানতে চায়নি, ঘৃণায় বার বার বিকৃত হয়েছে তার মুখ। সে বলেছে, তার কোন পিতা নেই- তার শুধু আছে এক চিরদু:খী মা। সে শুধু একবার তার মাকে দেখতে চেয়েছিলো। কিন্তু সে মায়ের দেখা পায়নি। তাই শেষবার যাওয়ার সময় সে বলেছে- এই সবুজ দেশটাই আমার মা। যখন মায়ের কথা মনে হবে তখন এই দেশে ছুটে আসবো, আর দু'চোখ ভরে দেখবো শ্যামল রূপ।

রায়ান গুড- তুমি অনেক কিছুই ভুলোনি। তুমি ক্ষমা করোনি তোমার জনককে। তুমি তার বিচার চেয়েছ। প্রকাশ্য জনসভায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হলে তুমি উল্লাসিত হবে। জনতার মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে স্লোগান দেবে, প্রয়োজনে নিজেই তার গলায় ফাঁসির দড়ি পরিয়ে দিতে তোমার হাত এতটুকুও কাঁপবে না। তুমি এতটুকু করুণা দেখাবে না তার জন্য।

অথচ দ্যাখো- এখন আমরা অনেক কিছুই পারি খুব সহজে। আমাদের রক্তের সাথে যারা বেঈমানী করেছে, যারা আমাদের ভাষার সাথে বেঈমানী করেছে তারা এখন আমাদের প্রতিনিধি হয়ে আমাদের ছিনিয়ে আনা পতাকা নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় সারা জনপদ। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের আগুনঝরা দিনগুলোর কথা ভুলে গেছি, ভুলে গেছি নির্যাতিত মা-বোনদের আকুল হাহাকার, ভুলে গেছি একাত্তর-আমাদের নতুন জন্মের সন্ধিক্ষণের কথা- ইতিহাস। রায়ান গুড তুমি কষ্ট পেও না। তুমি তো একটা মা পেয়েছো। কিন্তু দ্যাখো আমরা আমাদের মা'টাকেই হারিয়ে ফেলেছি।