ছোটবেলায় একটা কবিতা পড়েছিলাম, কবির নাম মনে না থাকলেও কবিতাটা মোটামুটি মনে গেঁথে আছে -----
নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো
যুগ জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আলো।
সবাই মোরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে
নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে।
বিশ্বজনে নিঃস্ব করে, পবিত্রতা আনে
সাধক জনে নিস্তারিতে তার মতো কে জানে?
বিনামূল্যে ময়লা ধুয়ে করে পরিষ্কার,
বিশ্ব মাঝে এমন দয়াল মিলবে কোথা আর?
নিন্দুক সে বেঁচে থাকুক বিশ্ব হিতের তরে,
আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে।
আমি জানি তোমরা আমায় নিয়ে কথা বলো। কখনো আমায় নিয়ে হাসাহাসি কর। তোমাদের আড্ডায় যখন বিনোদন বা উপহাসের বিষয়বস্তু দরকার হয়, তখন আলোচ্য বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আমিও থাকি। কারণ? কারণ তো একটাই, মানুষ মাত্রই গসিপ করতে, নিন্দা করতে, অন্যকে নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসে। সেখানে আলোচ্য ব্যক্তির যতই গুণ থাকুক না কেন, সেগুলো নিয়ে খুব একটা কথা হয় না। আলোচনায় উঠে আসে ব্যক্তির ছোট ছোট দোষ বা সমস্যা, অথবা তার এমন কোন বৈশিষ্ট্য, যা তোমাদের চিন্তাভাবনার সাথে যায় না। কখনো আবার হয়তো এমন কোন ব্যাপার নিয়ে হাসাহাসি করছো যা তোমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে মোটেও হাস্যকর নয়; কিন্তু অন্যদের হাসিতে যোগ না দিলে পাছে তারা তোমাকে নিয়েও হাসে, এই ভয়ে হাসছো।
একবার কি ভেবে দেখেছো, যাদের সাথে মিলে তুমি/তোমরা আমার নিন্দা কর, তারা তুমি না থাকলে তোমাকে নিয়েও হাসির ফোয়ারা ছোটায়? কখনো বা ভ্রু কুঁচকে তোমার/তোমাদের দোষগুলো নিয়ে বিরক্ত বিরক্ত কথা বলে? হয় তো জানো না। বা জানলেও বিশ্বাস করতে চাও না। হয় তো তোমাদের মনে হয়, তোমাদের নিয়ে সিরিয়াসলি বদনাম করার লোক দুনিয়ায় থাকতে পারে না। সবাই তোমাদের ভালোবাসে, অথবা ভয় পায়। Well, you are wrong!
উপরের কবিতাটা আমার যখন তখন মনে পড়ে। কারণ এর সবগুলো কথাই একশ’ ভাগ সত্যি। তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কথাবার্তায় আমি কষ্ট পাই? আমার কিছু এসে যায়? নাগো, না। মাঝে মাঝে যে বিরক্ত হই না, তা নয়। কিন্তু কষ্ট পাই না। কারণ তোমাদের আলোচনার কল্যাণে আমি নিজেকে আরো ভালো করে চিনতে শিখেছি, বুঝতে শিখেছি। পাশাপাশি মানুষের চরিত্রের হরেক রূপ আমার সামনে পরিষ্কার হচ্ছে। তোমাদের একই অঙ্গে এতো রূপ দেখে আমি প্রায় প্রতিদিনই নতুন শিক্ষা পাই। বিশ্বাস কর, তোমরা একেকজন একেকটা জ্ঞানভাণ্ডার!
ফেসবুকে কিন্তু মাঝে মাঝে ভালো কিছু উক্তি পাওয়া যায়, সেগুলোতে সোজা ভাষায় অনেক বড় বড় জীবনদর্শন লেখা থাকে। তেমনই একটা উক্তি কিছুদিন আগে পড়েছিলাম -- কেউ যদি তোমার পেছনে তোমায় নিয়ে আলোচনা করে, তবে দুঃখ করো না; তারা এ কারণেই তোমায় নিয়ে কথা বলে কারণ তোমার জীবন তাদের জীবনের চেয়ে অনেক বেশি আনন্দময়। আসলেই মনে হয় তাই। কোন দোষ নিয়ে কেউ বিরক্তি প্রকাশ করলে আলাদা কথা, কিন্তু আমার কোন বৈশিষ্ট্য বা কোন পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে যখন-তখন আলোচনা করার মানে তো একটাই -- তোমাদের জীবন এতটাই বোরিং যে তোমাদের নিজের কোন কাজ নাই, আমাকে নিয়ে আলোচনা করতে তোমাদের ভালোই লাগে। নিন্দুকের নিন্দার কারণ অনেক সময় এটাই; আমার মাঝে বা আমার জীবনে এমন কিছু হয় তো আছে, যা তাদের মাঝে বা তাদের জীবনে নেই! এটাও নিজের সম্পর্কে জানার মতো বড় একটা ব্যাপার, তাই না?
(ছবি: curiano.com)
সুতরাং বন্ধুরা, নিন্দুককে ঘৃণা করবেন না। বরং তাদের নিন্দা আর সমালোচনায় খুশি হোন। তারা আপনার জীবনদর্শনকে সমৃদ্ধ করতে, আপনাকে নিজের সম্পর্কে জানাতে দিনরাত ‘আন্তরিকভাবে’ কাজ করে যাচ্ছে! নিন্দুক, I Love You!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৩৭