somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সভ্যতা এবং আমরা

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই ছোটবেলা থেকে আজ এই বড়-বেলা অব্ধি রোমান্টিক বাংলা ছবিতে যখন নায়ক কোনো নায়িকা-কে একান্ত অন্তঃরঙ্গ ভাবে আদর করতে যায়, তখন নায়িকা তার ফরসা গাল লাল করে নিমরাজি ভাব নিয়ে নায়ক-কে লাই দেয়ার ভঙ্গিতে বকা(আপাতঃ) দেয়- ‘যাঃ, অসভ্য!!’ আর নায়িকার এই গালি আমাকে সারা জীবন-ই দ্বিধা দ্বন্ধে ফেলে দেয়।
মাথায় ঘুরপাক খায়-‘ একি মুসিবত? নায়ক তো পুরা দস্তুর জামা কাপড় পড়া…ন্যাংটি তো নাই বা মাথায় তো কোনো পাতা লতাও নাই…মাশাল্লাহ, চেহারাও খারাপ না…তার মধ্যে আবার তার শিক্ষাপ্রতিষ্টানের জ্বল জ্বলে তারা…তাইলে পরে এমন লোক অসভ্য হইল কিভাবে? আর যদি সে অসভ্য হয়েও থাকে তাইলে তারে নায়ক কেন বানাইলো?’

সেই চিন্তা থেকেই মাথায় আসলো তাহলে কি সভ্যতা-র মানে আলদা কিছু? সভ্যতা আসলে কি? আর যদি কেউ জামা কাপড় পড়ে বা লেখাপড়া করে সভ্য না হয় তাহলে আমরা(আজকের দুনিয়ার মানুষেরা) কি সভ্য? হলে কত টুকু? এই সভ্যতার শুরুই বা ঘটলো কবে থেকে?

আজকের সময়ে গোটা পৃথিবীতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলে আমাদের মনে হতে পারে বরতমান প্রেক্ষাপটে উন্নতদেশ গুলই হচ্ছে সভ্যতার ধারক, বাহক বা পথপ্রদরশক। তাইতো তিনারা হলেন আমাদের সব কিছুর নিয়ন্ত্রক, দান ও ত্রান দাতা এবং শুভাকাংখী। তিনারা-ই আমাদের কে শিক্ষা দেন কিভাবে মানব দরদী(!?!) হতে হয়। আহা! কত মহান তিনারা…কিন্তু আমরা এই তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশ গুলোই যত নষ্টের গোড়া। সভ্যতা কি জিনিস তা জানে না, এরাই আসলে পৃথিবী-র জঞ্জাল। পুরো দুনিয়াটকে ময়লায় ভরিয়ে দেয়। আর তাই আমাদের-কে সভ্য বানাতে যুগে যুগে তিনারা(উন্নতদেশ বা ওস্তাদেরা) আমাদের দেশে এসেছেন, আমাদেরকে ঘোড়া পিটিয়ে মানুষ করার মত নানা ভাবে পিটেছেন, শুষেছেন, মায়ের মত(!!!) শাসনও করেছেন বটে।।কিন্তু আফসোস!!! সভ্য আমরা আজও হলাম না…ইনারাই হলেন আমাদের নায়ক, পুরো বিশ্বের পরিচালক। কিন্তু তা সত্বেও কেন আমাদের মত অনুন্নত/উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ মানুষ-ই তাদের-কে নায়িকার মত করে(আল্লাদী ঢং-এ)নয় বরং তীব্র ঘৃণা নিয়েই বলে-‘অসভ্য’??

এর কারন হিসেবে আমরা যদি একটু নেড়েচেড়ে সভ্যতার ইতিহাস দেখি তাহলে কিছু জিনিস খুব সহজেই পরিলক্ষিত হয়। আর সেগুলো হল-বাস্তবিক অরথে কারা সভ্য আর কারা সভ্যতার লেবাস মুখে লাগিয়ে চুরি, বাটপারী, দস্যুতা করে বেরিয়েছে এবং এখনও বীর বিক্রমে তা চালিয়ে যাচ্ছে।

সভ্যতা-র হাতেখড়ি হয়ে ছিল যে কয়েকটি জিনিসের মাধ্যমে তার মধ্যে ‘আগুন এবং চাকা’-র আবিষ্কার সবচে’ গুরুত্বপূন্ন। পাথরে পাথরে ঘষে ঘষে প্রথম আগুন ধরাতে শিখে আফ্রিকার এক অসভ্য জাতি, আর আমাদের কত্তারা( উন্নতদেশ) সভ্যতার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে আবিষ্কার করেছেন- পারমানবিক বোমা। কিন্তু তিনারা এর ব্যবহার করেছেন/ করতে চাচ্ছেন শুধুই বিশ্ববাসীর হিত তথা কল্যানের জন্য, আর তার উৎকৃষ্ট প্রমান মেলে হিরোশিমা নাগাসাকি-র মত জঞ্জালে ভরা দেশের দিকে তাকালে।আর তাই তো তিনারা জঞ্জাল মুক্ত করতে সচেষ্ট থাকেন সদা। অন্যদিকে এশিয়ার মাইনরে প্রথম চাকার আবিষ্কার ঘটলেও ‘ট্যাঙ্ক’ বা ‘যুদ্ধযান’ এর আবিষ্কার করেন ইউনাইটেড কিংডম বা সভ্য(!?!) ব্রিটিশরা।

প্রথম সভ্যতার বিকাশ তথা উন্মেষ ঘটে উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ায়, তাও খ্রিস্টের জন্মের ৩০০০ বছর আগে। যখন কিনা আমাদের কত্তাদের জন্ম হয়নি ভালোমত। যাই হোক, সেই প্রাচীন যুগে যখন মানুষেরা একসাথে মিলেমিশে একত্র হয়ে বসবাস করত তখন তারা(আদিম অসভ্য মানুষেরা) গাছের ডাল, পাথর দিয়ে হাতিয়ার বানাতো নিজেদেরকে বন্য-হিংস্র পশুর হাত থেকে রক্ষা করতে এবং নিজেদের খাদ্যের যোগানদানে শিকারের কাজে, ঠিক যেমন এখন আমাদের কত্তাদেশেরা আবিষ্কার করেছে- একে৪৭, মিসাইল, রাইফেল সহ প্রভৃতি অস্ত্র, যা ঠেকিয়ে তিনারা বিশ্বের নায়কের ভুমিকা পালন করছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। তাদের যখন-ই রাক্ষুসে ক্ষিদে ধরে তখনি তারা তাদের সুসজ্জিত অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করে দেন তাদের শিকারের বিরুদ্ধে।

প্রাচীনকালে নিগ্রোদের দেশ(আজকের আফ্রিকা)-কে বলা হত ‘নুবিয়া’ যার মানে ‘সোনার দেশ’। অথচ ভাগ্যের কি পরিহাস! আজ তাদের-ই সেই সব খনি জবর-দখল করে, তাদেরকে দাসে পরিনত করে আমাদের কত্তারা এমনি বেহাল দশা করেছে সামগ্রিক পৃথিবীর মানচিত্রেও তাদের এই সোনার দেশ-কে আস্ত মানুষের খুলি/কংকালের মত মনে হয়।

সভ্যতার ধারক কাপড়ের আঁশের যোগানের সূচনাও ঘটে আফ্রিকার-ফাউমি ও বাডিরিয়ানদের শন চাষ থেকে। আর এতো সবারি জানা যে, আমাদের দেশে একদা বিখ্যাত মসলিন তৈরী হত, যাকে ধ্বংস করে দিতে সকল মসলিন শ্রমিকের হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে দেয়া হয়েছিল। তাতে কি? আমাদের অবশ্যি বাবুদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত(?!?) কেননা বাবুরা এসে আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে টাই গলায় বেঁধে সাহেব বা সভ্য মানুষ হতে হয়।

কত্তারা আমাদের এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছিলেন ব্যবসার চিন্তা নিয়ে।তাই তিনারা নিজ গুনে আবিষ্কার করেন-চিনি, মদ ও সুগন্ধি। মদের বোতল আমাদের মত অসভ্যদের হাতে তুলে দিয়ে আমাদের বানালেন-দেবদাস, আর তিনারা হলেন ব্যবসায়ী। আমাদের মত অসভ্যদের গায়ে বেজায় গন্ধ দেখে তিনারা আমাদের জন্য নানা রকম সুগন্ধি নিয়ে এলেন, যাতে করে রাতের বেলা প্রিয়ার কাছে গেলে সে সুগন্ধে বিভোর হয়ে পড়ে। আর সেই সুগন্ধির মৌ মৌ গন্ধে আমাদেরকে মগ্ন করে রেখে আমাদের করে ফেলেন তাদের কেনা গোলাম বা দাস।

আমাদের ব্রিটিশ বাবুরা অনেক গবেষনা করে আবিষ্কার করেন-কালি, কলম ও কম্পাস। আহা! কি বিশাল তাদের আবিস্কার!! এই তিন ছাড়া তো আজকের যুগের এই সভ্যতার কথা ভাবাই যায় না…তাই নয় কি? এক্ষেত্রেও বলব তবে লিখন পদ্ধতি প্রথম আবিষ্কৃত হয় মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় সভ্যতায়, অতএব বাবুরা এদিক দিয়েও পিছিয়ে গেলেন, তবে এগিয়ে গেলেন তারা কম্পাস তৈরীতে। কারন তাদের নিজেদের কিছুই নেই তাই তারা নিজেদের ঝোলা ভরতে দিকে দিকে ছড়িয়ে পরে উপেনিবেশিকতার জাল নিয়ে। আর এই জাল বিছাতেই তাদের কম্পাসের আবিস্কার।

উপরোক্ত এত কথা থেকে আমরা এটুক অবশ্যি স্বীকার করতে পারি যে, তিনারা(কত্তারা) আসলেই সভ্য তাইতো আমাদের মত গরীব দেশগুলোকে শাসন করে করে শিখাতে পেরেছেন কিভাবে অন্যের পেটে লাথি দিয়ে নিজের ব্যাঙ্ক ব্যলেঞ্চ বাড়ানো যায়, কিভাবে শ্রমিক তার নায্য পাওনা চাইতে আসলে বুটের তলায় পিষে মারতে হয়, কিভাবে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অন্যের সব কেড়ে নিতে হয়, কিভাবে নিজের প্রয়োজনে/নিজের সুবিধায় নীতিমালা প্রয়োগ ও ব্যবহার করতে হয়, এবং কিভাবে নিজেদেরকে জাতি, ধম্মে ভাগ করা যায়।

অতএব, আমরা আর ১বার সমস্বরে আমাদের কত্তা বাবুদের সভ্যতার জয়গান গেয়ে উঠি।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×