পৃথিবী আসলেই বিচিত্র। সারা বিশ্বে ছাত্র রাজনীতি কেমন, আর আমাদের দেশের ছাত্র রাজনীতি কেমন? ছাত্র রাজনীতি হতে হবে গঠনমূলক। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা ছাত্র রাজনীতির বিপরীত চিত্রই দেখি। এখানে ছাত্র রাজনীতি মানেই হল দু-গ্রুপে মারামারি, বেশ কয়েকজনের আহত হওয়া। ফলশ্রুতিতে ভার্সিটি বন্ধ হয়ে যাওয়া, একটি তদন্ত কমিটি করা এবং কিছুদিন পরে আবার সেটা মিটমাট হয়ে যাওয়া। এটা একটা সাধারণ সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আমরা কেউ এই রীতি ভাঙ্গতে সাহস করি না।
এবার আসি নিজের অভিজ্ঞতার কথা। আমি চুয়েটে ভর্তি হলাম প্রায় দু’বছর পার হয়ে গেল। দু’বছরই দু’বার ভার্সিটি বন্ধ হয়েছে। কারণ একটাই, দু’গ্রুপে মারামারি। প্রতিবারই তা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীর মধ্যে। এটা একটা সংস্কৃতি, যেটি আমরা পালন করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সবর্শেষ গতকাল আগামী ১০ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ হয়ে গেল।
গতকাল চুয়েট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রথমে একটু খুশি হয়েছি এই কারণে যে, পরীক্ষার পিএল(প্রিপারেটরী লিভ) একটু বেড়ে গেল। কিন্তু এরপর একটা খবর আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে। আমার বন্ধুদের উপর হামলা। আমাদের খুব কাছের কিছু মানুষের উপর হামলা।
ওরা কুয়াইশ এর সেখানে আগে হতে জড়ো হয়েছিল। সবগুলো বাস চেক করতেছিল। কেউ আছে কিনা যাদের উপর ওদের ক্ষোভ আছে। চুয়েটের বাস ’তিস্তা’ এসে সেখানে পৌছাঁলে তারা সেখান হতে আমাদের দু’তিনজন বন্ধুকে নামাল আর রড দিয়ে মারতে শুরু করল। চাপাতি দিয়েও একজনের পায়ে আঘাত করল। বাসের আয়না ভাঙ্গল, আবার সেই আয়না দিয়ে পিঠেও মারল। ইট দিয়ে তিন চারজনের মাথায় আঘাত করল। কিন্তু দু’একজনের ভাগ্য ভালো যে ইটের আঘাত এত জোরে পড়েনি। আমাদের সিনিয়র ব্যাচের একজন যিনি বাসে ছিলেন না, কিন' তাকে লোকাল সিএনজি ট্যাক্সি হতে নামিয়ে ওরা মেরেছে।
কিন্তু আমার সবচেয়ে অবাক লাগল বাসে প্রায় ৩০-৪০ জন ছাত্র ছিল।তিন-চারজনকে মারছে এতজন সবাই তা চেয়ে থাকল? বিশ জন নেমেও যদি ওদের ধাওয়া করত তাহলে হয়তো আমাদের বন্ধুরা এভাবে আহত হতো না। কারণ সবাইতো একই প্রতিষ্ঠানে পড়ি।
যারা হামলা করেছে ওদের বেশীরভাগ চুয়েটের ছাত্র, এলাকার সন্ত্রাসীদের সাহায্য নিয়ে তারা এটা করেছে। কিন্তু যাদের উপর হামলা হয়েছে ওরা চট্টগ্রামের স্থানীয়। আমার তো মনে হয় না, ওরা ছেড়ে দিবে? না চাইতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। ক্যাম্পাস আবার উত্তপ্ত হয়ে গেল। কারণ, ক্ষোভের আগুন এত সহসা থামে না।
শেষে আমার একজন বন্ধুর বর্ণণা হুবহু তুলে দিচ্ছি :
“আমাকে সেই ফোন করল, দোস্ত ওরা নাকি আমাদের খুজঁছে। ওরা আমাদের মারবে। দোস্ত, ওরা বাস থামিয়েছে। দোসৱ ওরা আমাদের দিকে আসতেছে। দোস্ত, ওরা আমাদের মারতে শুরু করতেছে।”
এরপর...... ফোন কেটে গেল।
খুব কাছের একজন বন্ধু এই অবস্থাই আছে, আরেক বন্ধুর এই অবস্থায় মনের অবস্থা কী হবে সেটা আপনারাই চিন্তা করুন। ধরুন আপনার কাছের কেউ এই পরিস্থিতিতে পড়েছে, আপনি সাহায্য করতে চাচ্ছেন, কিন্তু আপনি অপারগ। তখন আপনার কেমন লাগবে??

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



