(ক) বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা মনে আছে.. তা প্রকাশ করার জন্যই লিখা। পুরা বছরটাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গেছে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে এবং এখনও যাচ্ছে। বিশেষ করে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কথা না বললেই নয়। মতের পার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু তাই বলে জোরপূর্বক হামলা করে মতামত দমনের চেষ্টা কিংবা হামলার পরে মৃত্যুবরণ করা এগুলো আসলেই দুর্ভাগ্যজনক। উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হওয়ার কথা যে জায়গাগুলো ওখানে দলীয় লেজুড়বৃত্তির জন্য সব অর্জনই ম্লান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রদের মধ্যে সহনশীলতা তৈরি করতে পারছে না। এ জন্য আমি বাংলাদেশের রাজনীতিক দলগুলোই দায়ী। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার, গণতন্ত্র আন্দোলনের সময়কার ছাত্র রাজনীতির সাথে এখনকার ছাত্র রাজনীতির তুলনা করলেই দেখতে পাব আসলে আমাদের কি পরিমাণ নৈতিকস্খলন হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা এখন বেশীরভাগ ক্ষমতা এবং অর্থের জন্য রাজনীতি করে যা আগে ছিল না। আপনি চীন কিংবা আমেরিকা কিংবা জাপানের দিকে তাকান, তাদের মত গবেষণা আমরা করতে পারছি না। কিন্তু আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন এ সকল দেশে যাচ্ছে তখন আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরাই ভালো গবেষণা করছে, তাহলে কে দায়ী?

(খ) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দোহাই দেয় টাকা নেই পর্যাপ্ত গবেষণার জন্য। আমি জাপানে দেখেছি যে, সরকারী ফান্ড এর চেয়ে বেসরকারী কোম্পানীগুলোর ফান্ডেই গবেষণা বেশী হয়। আমাদের দেশের কোম্পানীগুলোকে ( যে কয়েকটা আছে) এভাবে আকৃষ্ট করতে হবে, যাতে করে উনারা গবেষণাকে অপচয় মনে না করে বিনিয়োগ মনে করেন। শুধু বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানী করে শিল্পকারখানা করলে আমাদের উন্নতি কিভাবে হবে? গবেষণার পরিবেশের এ অবস্থা সৃষ্টি করবে শিক্ষকরা, কিন্তু উনারাও রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। আবার অল্প কিছু শিক্ষক যারা গবেষণা করে ওদের কেউ পাত্তা দিতে চায় না। যার কারণে একসময় উনারাও আগ্রহ হারায় ফেলেন না হয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে যান। এ অবস্থা থেকে আসলে মুক্তি কে দিবে কেউই জানি না।
(গ) এবার একটু বেতনের কথাই বলি। প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন সবচেয়ে বেশী দেয়া দরকার আমার মতে। কারণ উনারাই একটা জাতির ভিত্তি গড়ে তুলছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে আমার মতে আরও বেশী জনপ্রিয় করা উচিত। কারণ আমার মতে নৈতিকতা, মূল্যবোধ এ বিষয় গুলো ঐ বয়স থেকেই শিখানো শুরু করলে অনেক ক্ষেত্রেই উগ্রবাদীতা, দুর্নীতিকে কন্ট্রোল করতে পারব। পরবর্তী প্রজন্মের জন্যই জরুরী। না হয় দেশ হিসেবে আমরা হারিয়ে যাব। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন-পদমর্যাদা সর্বোচ্চ রাখা উচিত্। না হয় ব্রেইন-ড্রেইন ঠেকানো যাবেনা।
(ঘ) শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি বারবার পরিবর্তন না করে আমার মতে মাধ্যমিক পর্যন্ত একমুখী শিক্ষা চালু করতে হবে। যাতে একজন স্টুডেন্ট সববিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এরপর পছন্দমত বিষয় সিলেক্ট করতে পারবে উচ্চ-মাধ্যমিক হতে। সাথে সাথে কর্মমুখী শিক্ষায় ও শিক্ষিত করতে হবে। যাতে করে এখনকার সময়ের অদক্ষ তকমা মুছে যায়।
সর্বোপরি,শিক্ষার বিষয়ে আরও বেশী মনযোগী হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ, উন্নয়নের শিখরে পৌছানোর জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। রাজনীতি আর শিক্ষা দুটো দুই জিনিস। আমরা দুটো এক করতে গিয়ে নিজেদের ক্ষতি করছি, যা হয়ত এখন আমরা বুঝতে পারছি না, কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে হয়ত পারব।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



