শীতের সকালে ঘুম ভাঙল আম্মুর ডাকাডাকিতে | ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে | ঘুম ভেঙ্গেই শুনি পচা গান ধরেছে | মানে আমাদের পাশের বাড়ির মেয়ে , ওর আসল নাম শিল্পী |স্বয়ং বাঁজখাই বোধহয় ওকে উপহার স্বরুপ নিজের গলাটাকে দান করে গেছেন | সাত সকালে গান ধরেছে , শাওন রাতে যদি.......অ্যাঁ...অ্যাঁ...অ্যাঁ...(ভাগ্যিস! কাজী নজরুল ইসলাম শোনেন নি)।মেয়েটা দেখতে ভাল, কিন্তু প্রতিদিন সকালে গলা সাধার নামে আশেপাশের মানুষদের এত কষ্ট দিতে পারে মনে হয় যেন এভাবে চলতে থাকলে শ্রবন শক্তি অর্ধেকের বেশি কমে যাবে। শিল্পীর গলার আওয়াজে মুগ্ধ হয়ে পাড়ার লোকজন ওর নাম রেখেছে পচা । এমনকি সামনা সামনি পচা বলে ডাকা শুরু করেছে । এতে অবশ্য পচার গান সাধনা কমেনি বরং বেড়েছে । ইদানিং সন্ধ্যা বেলাতেও গলা সাধার আওয়াজ পাওয়া যায়। যাই হোক, সকালে নাস্তা করে যখন সিড়ি দিয়ে নামছি তখন দেখি আমাদের বাড়ির দারোয়ান চাচা কপাল জুড়ে শুকনা মরিচ বাটা লাগিয়ে আহা উহু করে কাতরাচ্ছে । কাছে গিয়ে বললাম, কি ব্যাপার চাচা আপনি একি কান্ড করেছেন ! চাচা বললেন , মাথায় ব্যাদনা তাই হুকনা ঝাল বাইট্যা ডইলা থুইছি । বললাম এক্ষুনি মরিচ বাটা ধুয়ে আসুন আমি আপনাকে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিচ্ছি। চাচার হাতে দুইটা প্যারাসিটামল ধরিয়ে দিয়ে ছুট লাগালাম বাসে ওঠার যুদ্ধে । বাসের লাইনে দাড়িয়ে আছি, রীতিমতো স্বচ্ছ জামা পরে এক মেয়ে সামনে দাড়িয়ে আছে । মনেমনে তখন ভাবছি বেশি ফ্যাশান করতে গিয়ে মেয়েটার শীত করছে না? আমিতো পারলে কম্বল মুড়ি দিয়ে বের হতাম। এমন সময় বখাটে টাইপের দুইটা ছেলে পাশ দিয়ে যাচ্ছে আর মেয়েটার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। তাদেরই একজন বলে উঠল, আহারে চৈত মাসের গরমে শ্যইলডা পুইরা গেল আমার গায়ে পানি ঢাল। বহুকষ্টে হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠলাম। পাক্কা দুই ঘন্টা জ্যামে আটকা থেকে ভার্সিটিতে পৌছালাম। ক্লাসে ঢুকতেই আমাদের ক্লাসের আদু ভাই মানে রাফি ভাইয়ের জ্যাকেটের দিকে চোখ গেল। আজকে কেন যে এত মানুষের পোশাকের দিকে চোখ যাচ্ছে বুঝতে পারছিনা । দেখলাম সলমা-চুমকি আর পুঁতি দিয়ে আগাগোড়া খচিত মেয়েদের জ্যাকেট পরে রাফি ভাই বীরদর্পে ক্লাস করছে। রাফি ভাইয়ের একই ক্লাসে পড়তে পড়তে বিয়ে হয়ে গেল, বাচ্চাও হয়ে গেল এখনও পাশ করে বি.এস.সি ডিগ্রী নিতে পারলেন না । আজ মনে হয় ভুলে ভাবির জ্যাকেট পরে চলে এসেছেন । শুরু হল খুশবু ম্যাডামের ক্লাস। পেছনে বসে ম্যারাথন এক ঘুম দিলাম। ঘুম ভাঙল অপুর গলার আওয়াজে।
কি রে এত লম্বা ঘুম দিলি?
রাক্ষস আঁকানো লাল খাতা সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল, একদম খুশবু ম্যাডামের মত দেখতে তাইনা । ম্যাডামটা চরম খ্যাইস্টা।
-হুম ঠিক বলেছিস। এজন্য তো আমি ওনার ক্লাসে ঘুম দেই।
হঠাৎ মোবাইল ভাইব্রেট করছে। দেখলাম ছোট খালা ফোন করেছে।
তুই ক্লাস শেষে একটু বাসায় আসতে পারবি?
- কেন পারবনা খালা।
তোর খালুর সাথে বিশাল ঝগড়া । দুইদিন কথা বলা বন্ধ।
-কি হয়েছে?
কথা নেই বার্তা নেই হুট করে তোর খালু বলল তার শ্বশুর বাড়ির দেশে নাকি রাস্তা দিয়ে হাটলে শিয়াল, কুকুর কিছুই চোখে পরে না ।
সব লোকজন খেয়ে ফেলেছে। শুনেই গেল রাগ হয়ে । তাই আমিও বলেছি আমরা তো শিয়াল কুকুর নিজেরা খাইনা তবে জামাই গেলে খাওয়াই।
জামাইয়ের মুখ হচ্ছে চুলার মুখ। এত বড় হা যে সহজে ভরেনা, তাই শিয়ালের গোশ দিয়ে ভরাই।
-হয়েছে হয়েছে আবার তোমরা কি শুরু করেছো খালা? এসে সব শুনছি। এখন শান্তিতে ক্লাস টা শেষ করতে দাও।
খালা আমার চাইতে তিন চার বছরের বড় । দুইদিন পরপর খালুর সাথে ঝগড়া করবে আর আমাকে গিয়ে মেটাতে হবে।ভার্সিটি থেকে বের হতে বিকাল চারটা বাজল। খালার বাসা মগবাজার তাই মগবাজারের বাসে উঠলাম। বাসে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে দেখছি , কেমন যেন আনন্দ আনন্দ লাগছে । ভাবছি ভালই তো কাটছে দিনকাল।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



