পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ অনেকটা সময় লেগে যায়, আসলে চুপচাপ থাকাটা সম্ভব না, আমি যথারীতি লিটু ভাইয়ের পাশে আসন গেঁড়েছি, মর্তুজা, লুকু শমিক, জসিম পেছনে, সোনিয়া রিম্পি, যুঁথি এবং ওদের সাথে একজন বসেছে মাঝের সীটে। একে একে কথা শুরু হয়। মানালিতে কাটানো রাতে তেমন সমস্যা ছিলো না, তবে আড্ডা য় আড্ডায় রাতে তেমন ঘুম হয় নি, সকালে উঠে রোটাং পাস যাওয়া, এবং সেখান থেকে ফিরে আসার পর দীর্ঘ আলোচনা সেশনের পর ক্লান্তি লাগছে, সামনের সীটে এপাশ ও পাশ করছি, ঘুম আসছে, ক্লান্ত তবে নিঃসাড় ঘুমিয়ে পড়তে পারছি না, ঘুমাতে গেলেই মনে হচ্ছে পাশের জীয়ারে চাপ পড়তে পারে।
সিগারেট ধরাচ্ছি সামনে একটা, পেছনে একটা মাঝে মধ্যে একটা যাচ্ছে যুঁথির হাতে, সেও সিগারেট খায় এটাই আশ্চর্য বিষয়, তবে এখানে এসে অনেকের নতুন নতুন পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। চৌহান মাঝে ফোঁড়ন কাটলো, কেয়া হুয়া তুম লোগ ইসতারাহ চুপ বায়ঠো হো কিউ?
লিটু ভাই আমাকে বলে, ঐ বেটা কি বলে এইসব। যখন তখন হুককা হুয়া করে ক্যান? বুঝায় বললাম, লিটু ভাই উত্তর দিলো হাম চুপ করে আছে কুছ করার নেহি ইসলিয়ে। গান গাও, চুপ বায়ঠো হো কিউ। সুতরাং আমরা আবারও গানের প্রতিযোগীতা শুরু করলাম, 2 দলে ভাগ হয়ে, এই রকম দলবেঁধে খেলার মজাই আলাদা, তবে আমাদের গানের গলা ভয়াবহ হলেও মেয়েদের গানের গলা ভয়াবহতর, সেই গলা দিয়ে গান গাওয়ার দুঃসাহস, এবং এভাবে আমাদের পরিচিত সব গানই শেষ, হিন্দি গানের জন্য চৌহান বস পাবলিক, ওর কাছে 1930 থেকে 1999 সব সালের গানই পাওয়া যায়, এবং এর মাঝেই রাতের খাওয়ার বিরতি, হঠাৎ ঘোষনা আসে আমরা মাঝে এক জায়গায় থেমে বন ফায়ার করবো, আজ নববর্ষ, 31শে ডিসেম্বর রাত 11 30 এ আমরা পথের মাঝে এক জায়গায় থামলাম গাড়ী, অবশ্যই কোনো একটা রেস্টা হাউজ হবে, সেখানে রান্না করার ব্যাবস্থা আছে, আমাদের বাবুর্চি থার্টি ফার্সট উপলক্ষে ইমপ্রুভ ডায়েটের ব্যাবস্থা করেছে, পোলাও আর রোস্ট জাতীয় কিছু, সামনে আগুন জ্বালানো হয়েছে, বাসের সামনে, সেখানে গানও ছাড়া হয়েছে, তবে ঠান্ডায় আমার অবস্থা গুরুতর। প্রতিবছর নববর্ষের আগে আগে মানুষের ভেতরে অস্থিরতা বাড়ে, মানুষের একটা বছর চলে যাওয়ার কষ্টটার সাথে নিজস্ব প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব মেলানোর কাজও ভালোমতো মাথার ভেতরে চলতে থাকে। সবার নিউ ইয়ার উপলক্ষে কিছু পরিকল্পনা মাথায় থাকে, আমার আগামি বছর এটা করতে হবে ওটা করতে হবে এমন সব সিদ্ধান্ত গ্রহনের বিষয়ও থাকে। এর তুলনায় আমি অনেক দুর্বল প্রকৃতির মানুষ, কখনই নতুন বছর উপলক্ষে কোনো লক্ষ্য নির্ধারন করতে পারি না, আমি সামনের দিন কি করবো এটাই নির্ধারন করতে পারি না ঠিক মতো, একটা বছরের পরিকল্পনা করার মতো মেধা নেই আমার। আমি দিন হিসাবে বাঁচি, তাই আমি এইসব ঝামেলামুক্ত। আগুন থাকলেই আগুনের পাশে পতঙ্গের মতো মানুষের আনাগোনা থাকবেই, অতএব আমরাও আগুন ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকি, একটা পর্যায়ে দেখা গেলো সবাই মোটামুটি বিষন্ন, লুকু মর্তুজা তানভীর একপাশে মদ খাচ্ছে, ওরা ওদের মতো উদযাপন করছে, আমার আসলে কিছুই করার নেই, সোনিয়া নেই কোথাও, দেখি ও বাসের ভেতরে চুপচাপ বসে আছে, বেচারা, রিম্পিও বাসের ভেতরে বসে আছে অন্ধকারে, উৎসবের মাঝেও কেউ কেউ চুপচাপ থাকে, তবে এটা অত্যন্ত বেশি চুপচাপ, তমাল আইভি একসাথে, অসুস্থ বলেই তারা বাস থেকে নামে নি, রুবেলের স্বর্ণাও অসুস্থ, রুবেল স্বর্নার জন্য খাওয়ার নিয়ে বাসে আসলো, তমাল আইভির খাওয়ার নিয়ে বাসে আসলো। পেছনে সবাই মদ খেয়ে মাতাল, উর্মি আগুনের পাশে কড়া ঝাঁকুনি দিয়ে নাচ দিচ্ছে, বেচারাকে কেউ দয়াপরবশ হয়ে মদ গিলিয়েছে, সেই সাথে নাচছে সিরাজ ঝন্টু, পলাশ, চন্দন, তবে হলবাসী ভাইয়েরাই আসলে নববর্ষের প্রকৃত উৎসবটা করলো, ওরা উপভোগ করেছে সত্যিকারের নববর্ষ, কিছু ক্ষন পর দেখি যুঁথি একপাশে একা দাঁড়িয়ে আছে, একেবারে পাথরের মতো চুপচাপ, গিয়ে প্রশ্ন করলাম এনিথিং রং? বললো না, এমনি একা থাকতে ইচ্ছা করতেছে।
সেখানে উৎপাত হওয়ার কোনো মানে হয় না। সোনিয়াকে জিজ্ঞাসা করলাম তার এমন বিষন্নতার কারন কি? তারও কোনো জবাব পেলাম না, আমার কিছুই করার ছিলো না, নাচ নামক জিনিষটা আমার আসে না যে আমি সেই আগুনের পাশে গিয়ে নাচবো, আমি খেয়ে বেশ আয়েশ করে সিগারেট ধরিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন এই অচলাবস্থা কাটবে, কখন আবার ভ্রমন শুরু হবে।
অবশেষে সবার খাওয়া শেষ হলো, সবার নাচ শেষ হলো, আমরা রওনা দিলাম। চারপাশে ঘন কুয়াশা, 10 হাত দুরের জিনিষ দেখা যায় না ঠিক মতো। এর মধ্যেই জীপ চলা শুরু হলো, এবং মাঝে কোনো একটা সময় আমরা আমাদের পেছনের বাসটাকে হারিয়ে ফেললাম, আরও বড় সমস্যা হলো আমি জিপে উঠার সময় বলেছিলাম মানালি যাওয়ার পথে যারা বাসে ঘুমিয়েছে তারা আজকে জেগে চৌহানকে সঙ্গ দিবে, আমার পক্ষে সম্ভব না, আমি ঘুমাবো। মর্তুজা হেভি পার্ট নিয়ে বললো আজকে আমিই জেগে থাকবো, তোদের কাউকেই দরকার হবে না, 1টা বাজার সাথে সাথে মর্তুজার নাক ডাকার শব্দে মুখরিত চারপাশ, যুঁথি সীটের উপরে পা রেখে ঘুমাচ্ছে, সোনিয়া রিম্পির উপরে কাত হয়ে ঘুমাচ্ছে আর সবচেয়ে কোনায় যে ছিলো সে জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুম।
লিটু ভাই পাশের জানালায় মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে আমি পাকা ফলের মতো একটু সুযোগ পেলেই টুপ করে পড়ে যাবো, প্রাণ বাজী রেখে জাগছি, মাঝে মাঝেই চৌহানের কথা ফেড হয়ে যাচ্ছে, আবার কিছুক্ষন পর শুনছি ও কথা বলছে, আমিও হুঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে, যা না বললে কোনো আলোচনা চলে না সেসব বলে যাচ্ছি, চৌহান হুঁমকি দিচ্ছে ঘুমায়ো না, আমারও ঘুম লাগছে, আমি ঘুমালে খবর আছে সবার। আবারও নড়ে চড়ে মাথা উঁচিয়ে তাকাই, একটা সিগারেট ধরাই, নির্ঘুম অবস্থায় সিগারেট টানলে ভয়ংকর তৃষ্ণা লাগে, ভেতরটা খটখটে শুকনা, আর নাক দিয়ে পানি পড়ছে, এই অবস্থায় আরও কিছু ক্ষন লড়াই করলাম, অবশেষে মনে নাই কখন ঘুমিয়ে প ড়েছি। ঘুম ভাঙলো চৌহানের ঠেলায়, আববে উঠ যা, ধাবা আ গেয়া। উঠ যা তু। আমি বিভ্রান্তের মতো চারপাশে তাকাই, কি সমস্যা কোথায় কি বাঘ পড়লো, একটু পরে সম্বিত ফিরে পাই, চৌহান ধাবায় গাড়ী থামিয়েছে, লক্ষ্য একটাই আমরা যেনো চা কফি খেয়ে একটু তাজা হয়ে যাই, একটু জেগে থাকতে পারি। আমরা আগ্রহ নিয়ে চা খেলাম, একটু পা ছুড়ে ক্লান্তি তাড়ালাম লাথিতে, অবশেষে আবার জীপে চড়লাম, এবার লিটু ভাইকে অনুরোধ করে আমি জানালার পাশে বসেছি, ভাব নিয়ে সিগারেট ধরালাম, অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লাম, ঘুমিয়ে পড়লাম এভাবেই সকাল হলো, সারারাত গাড়ী চালিয়েছে চৌহান, পাহাড় থেকে নিচে নামছি আমরা। আমরা বাস খুঁজে পেয়েছি, কখন খুঁজে পেয়েছি জানি না। মাথা ভোঁ ভোঁ করছে আমার, সব মিলিয়ে হিসাব করে দেখলাম গত 1 সপ্তাহে আমি ঘুমিয়েছি 15 থেকে 20 ঘন্টা। শরীর আর চলতে চাইছে না।সকালের আলো চোখে লাগছে ভীষন, ঘুম থেকে উঠেই বিরক্তি চেপে একটা সিগারেট ধরালাম, আমার মুখে পাশে যুঁথির পা, সবাই ঘুমে মগ্ন, মর্তুজাকে ডেকে তুললাম, কি রে বালটা তুই না সারা রাত জাগিস, হারামজাদা সবার আগে ঘুমাইছস তুই। সকালের নাস্তার পর আবারও জীপে, পাহাড় থেকে নিচে নামার পর চারপাশের প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে, এখন সবুজ মাঠ চারপাশে, ক্ষেতে ভরপুর, নদীও আছে, সেই নদীর ব্র ীজও পার হলাম আমরা, কি নদি কে জানে, একজন জানালো পাঞ্জাব নামটাই নাকি 5 নদির নাম থেকে এসেছে, হতে পারে, শতদ্্রু বিশাখা, বিপাশা, এই রকম 5টা নদি নাকি এই পাঞ্জাবের উপর দিয়ে বয়ে গেছে, তা যাক কোনো সমস্যা নাই আমার, আপাতত নদির ব্র ীজটা চলৎকার লাগছে সকালের আলোয়, সেখানেই এক জায়গায় গাড়ী থামিয়ে কিছুক্ষন প্রকৃতি দেখলাম, একটা দুইটা ছবি তোলাও হলো।
আবারও পথ চলা, দুপুরে খাওয়ার জন্য থামলাম কোথাও, বিকালে আবার জীপ চললো, চলছে তো চলছেই,সন্ধ্যায় একজায়গায় থেমে বেশ চা সিগারেট বিস্কুট খাওয়া হলো। আমাদের ঘুমতাজা মানুষেরা এবার গলার জোড়ে গান গাচ্ছে, আমিও গান গাচ্ছি, নিজস্ব সীমানা ছাড়িয়ে, কোনো সুরের কথা মাথায় না রেখে, ব্রায়ান এডামস লালন কোনো শালাকেই ছাড়ছি না, এই গানের জোয়ারে সব ভাষায়া নিতাছি আমরা। সন্ধ্যায় কুয়াশায় ঢেকে গেলো চারদিক, একটা ভীড় রাস্তায় আমরা আটকে আছি, এমনটাই হয়েছিলো দিল্লি থেকে বের হওয়ার সময়, তখন হলুদ হলুদ হেড লাইট জ্বলতে দেখছি কিন্তু আশে পাশে কিছুই দেখছি না, গাড়ীর বডি নেই কোনো শুধু 2টা হলুদ চোখ আছে। এভাবেই চলছে চলছে চলছে, আমাদের বাস এই কুয়াশায় দিকভ্রান্ত হয়ে কোথায় ছিটকে গেলো রাতের খাওয়ার পর। অবশেষে রাত 3টায় আমরা জয়পুরে হোটেলে পৌঁছালাম, হোটেলে নেমেই আমরা যে যার মতো দাঁড়িয়ে আছি, রুমের বিষয় ঠিক করা হলো, আগে থেকেই বলা আছে কয়টা রুম নেওয়া হবে, আমি বললাম ঠিক আছে আমার কাছে চাবি বুঝিয়ে দেন সব ঘরের, আমরা যেসব ঘর নিবো সেসব ঘরের দরজা খুলে আগে গরম পানির গীজার ছাড়েন। এর পর সবগুলো রূমের ফ্লাশ পরীক্ষা করে দেখেন কি অবস্থা। এবং এর পর আমি লুকু শমিক একটা রুম নিয়ে শুয়ে পড়লাম, আসলেই কি যে ভয়ানক রকম ক্লান্ত ছিলাম বলে বুঝাতে পারবো না। এই সুখ কপালে সইবে ক্যানো?
ঘুম ভাঙলো টেলিফোনের আওয়াজে, রিসেপশন থেকে ফোন এসেছে, আমাদের বাসের যাত্রিরা এসে পৌঁছেছে, রুম বরাদ্দ নিয়ে আবার সমস্যা। আমরা যে রুমে ছিলাম সেই রুম অন্য একজনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই খবরে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম, স্তম্ভিত বলা যায়। আমরা আমাদের রুমের চাবি সাথে নিয়ে এসেছি, আমরা হিসাব করে রুম নিয়েছি, সোনিয়াদের জন্য 3 বেড রুম নেওয়া হয়েছে, যেভাবে এত দিন রুম বরাদ্দ চলছিলো সেই হিসেবে সোনিয়াদের রুমে একজনের উঠার কথা, যুঁথি একটা রুম নিয়েছে, আমরা 5 জনে 2টা রুম নিয়েছি, বাকি রুমগুলো খালিই আছে, ওরা সবাই জানে কে কোথায় আছে, কি ভজঘট পাকাইলো বুঝলাম না। যাই হোক ঘুম থেকে উঠে ব্যাগ সহ নীচে নামলাম কারন আমাদের রুম বরাদ্দ করা হয়েছে যাদের তারা আমাদের রুম থেকে বিতারিত করলো।
নীচে নেমে ভয়ংকর মেজাজ খারাপ, আমাদের বলা হলো তোমরা নিজেদের মতো রুম ভাগাভাগি করলে ক্যানো, আমাদের জন্য অপেক্সা করতে পারতে। মেজাজ খারাপ ছিলো, বললাম, হোয়াটা দ্যা ফাক শুড উই সাপোজ টু ডু, উই কেম হিয়ার আরাউন্ড 3 ও ক্লক, এন্ড উই হ্যাড নো আইডিয়া হোয়ার ইউভ বিন, উই শুড ওয়েইট ফর আনসার্টেইন আমাউন্ট ওফ টাইম ফর ইউ ইন দ্যাট টাইম, আমরা কি বয়া বয়া বাল ফেলাবো, আলাপ চোদাও তুমি। একজন ধরে নিয়ে গেলো ওখান থেকে, লুকু ব্যাগ নিয়ে বসে আছে রিসেপশনে, শমিক আমাকে নিয়ে রাস্তায়, আশফাক, তানভীর লিটু ভাই তাদের রুমে চলে গেলো।
আমরা এসে গরম পানির ব্যাবস্থা করেছিলাম সম রুমে তাই কেউ কোনো অভিযোগ করে নি সে রাতে। এর পরও শমিক ধরে নিয়ে আসলো, বাইরে ঠান্ডা হাওয়ায় কিছুক্ষন কাটানোর পর আমারও ঘুম ফিকে হয়ে গেছে, ঘুমাক্রান্ত নই বলেই আবারও অভিযোগের বরাদ্দ সময়টা কাটাতে হলো, একটা রুমের ভয়ংকর অবস্থা ওটা বদলাতে হবে, সুতরাং ওটা বদলে দেওয়া হলো, এর পর সেই 4 তলা হোটেলের প্রতিটা তলার প্রতিটা রুমে গিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো কারো কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, সোনিয়াদের রুমে সোনিয়া আর রিম্পি, ওরা ঠিক আছে, আর কেউ উঠেও নাই ঐ রুমে। আমি কোথায় উঠবো জানি না এখনও, আপাতত জনসংযোগ চলছে, 5টার দিকে আবার শরীর ভেঙে ঘুম আসছে, সবার রুমের তদারকি শেষে আমি গেলাম সোনিয়াদের রুমে, প্রচন্ড ক্লান্ত, বিছানায় শুয়ে পড়েছি ক্লান্তিতে, সোনিয়া কেবল গোসল সেড়ে বাইরে এসেছে, মাথায় তোয়ালে বাঁধা, জিজ্ঞাসা করলাম কি অবস্থা, সোনিয়া আসলো, এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, আমি পুরা বেকুব যাকে বলে, আমার কি করা উচিত বুঝতেছি না, একজন মেয়ে জড়িয়ে বুকের উপর শুলে কিছু একটা বলতে হয়, আমিও বললাম, বললাম কি হইছে, কোনো সমস্যা?
আমার তখন মরার মতো ঘুম লেগেছে, এর পরও একটা ফোন করা দরা দরকার, রিম্পিকে বললাম , গাড়ী চলে না আর, শালার ঘুম লাগছে মরার মতো, ও বললো তুই আমাদের মাঝখানে ঘুমায়া পড়,
আমার এমন ঘুম লাগছে এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাওয়ায় কোনো সমস্যা নাই, এর পর মনে পড়লো লুকু বেচারা একা একা রিসেপশনে বসে আছে, ও কোথায় জায়গা পাইলো একটু জানা দরকার, ওর রুম ঠিক হয়ে গেলে শালার এই খানেই ঘুমায়া পড়বো, কি আছে কপালে।
রিসেপশনে ফোন করলাম, ইজ এনি ওয়ান লেফট ফ্রম আওয়ার গ্রুপ, জানালো একজন বসে আছে ব্যাগ নিয়ে।
রিম্পিকে বললাম লুকু নীচে বসে আছে, আমাকে যেতেই হবে, রিম্পি আবারও প্ররোচনা দিলো লুকু বড় মানুষ, ও নিজের ব্যাবস্থা করে নিবে,তুই ক্লান্ত ঘুমায়া পড়।
আমি পাথরের মতো ভাড়ী 2টা পা নিয়ে আমার নীচে নামলাম, শালার উপমহাদেশে 6তলা না হইলে লিফটের বাধ্যবাধকতা নাই, এই রাজস্থানের হোটেলগুলো বিশাল উঁচা, প্রায় 20 ফুট উঁচা প্রথম তলা থেকে 2য় তলা। নীচে নামলাম, এবং জানলাম লুকুর জন্য কোনো রুম বরাদ্দ না করেই সবাই যে যার রুমে চলে গেছে। হারাধনের হারানো 2 ছেলে আমি আর লুকু বসে আছি রিসেপশনে আশায় আশায় যে কারো মনে পড়বে সাম বডি লেফট আউট।
অবশেষে লুকু রিসেপশনে গিয়ে বললো রুম খালি আছে কোনো?
একটা রুম পাওয়া গেলো, 800 রুপি, কোনো রকম দ্্বিরুক্তি না করেই সেই রুম ভাড়া নিয়ে লুকু আমাকে বললো চল, তুই ও তো রাত্রে ঘুমাবি নাকি?
আমি লুকুর সাথে সেই রুমে চলে গেলাম, বিশাল রুম, বিশাল বিছানা, এক কোনে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম, কিছুক্ষনের ভেতরে ঘুম আসলো। ঘুম ভাঙলো যখন তখন দেখি লুকু একপাশে কুঁকড়ে শুয়ে আছে, আমি বাইরে বের হলাম, দেখ হলো এক জনের সাথে, তখন 10টা বাজে, বললো রাতে কোন রুমে ছিলি?
বললাম লুকু রাতে রুম ভাড়া করেছে, সেই খানে আমি আর লুকু।
এই কথা 5 কান হলো, সবাই এসে আমাকে বলে বোকার মতো কাজ করলি ক্যানো, একটু খোঁজ নিবি না তোরা।
মেজাজটা আগুন হইলো আবারও, শালারা লুকু রিসেপশনে বইয়া ছিলো 5টা পর্যন্ত কোনো শালা খবর নাও নাই ঐ পোলা কই ঘুমাইবো, এখন সবার দরদ উঠলায়া পড়তাছে। জানাইলো লুকুর জন্য একটা সীট বরাদ্দ ছিলো, ওখানে ওকে না দেখে ওরা ভাবছে ও আরেক জনের সাথে গেছে, সেই আরেক জন ভাবছে ও আরেক জনের সাথে আছে, এই সবার মনে করে ফেলানোর মাঝে লুকু বাদ পড়ে গেছে হিসাব থেকে।
বললাম শালারা তোমরা যখন বিভিন্ন রুমের চাবি লইছো তখন লুকু তোমাদের সামনেই বসে ছিলো, ওরে কেউ একটা কথাও জিগায় নাই, তুমি ওরে একটা রুম দিছো, এইটাতো ওরে কইবা, ঐ জানে না কিছু তোমরা এইদিকে মনে করি, ধরে নেই খেলা খেলতাছো।
সবাই একপর লুকুর রুমে গেলো, লুকুকে ঘুম থেকে উঠায়া সরি বললো, লুকু সুন্দর করে বললো ও বিন্দুমাত্র রাগ করে নাই, আসলে ও বুঝতেছিলো না কার রুম কোনটা, কোন রুমে গিয়ে দরজা নক করে বলবে আমি কি ভেতরে আসতে পারি, আজকে কি আপনাদের এখানে আমি ঘুমাতে পারি?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



