somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউনুসবন্দনা করি সবেঃ এক দিন বাংলাদেশে ভোর হবে।

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ ভোর ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

( উৎসর্গ সেসব শহীদদের যারা এই অর্থনৈতিক নিরীক্ষার কবলে পড়ে মৃতু্যবরন করেছেন, ঋন ফেরারী হয়েছেন, এবং যারা এই ক্রমিক ধারাবাহিক মৃতু্যর জন্য অপেক্ষা করছেন, এবং যারা স্বচ্ছলতার লোভে আবার শ্রমদাসত্বের কবলে পড়েছেন, সেসব বীর সেনানিদের)

মানবিকতার কথা বলে গলার রগ ছিড়ে ফেলা মানুষগুলোও ইশ্বর পেলে মানবিকতা ভুলে যায়-ঈউনুসের নোবেল প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় এই বুঝলাম আমি। ইউনুস নোবেল পেয়েছে, খুবই ভালো খবর, তার এই মাইক্রোক্রেডিটের আইডিয়াটাও পুরোনো, এভাবে গরীবের ভাগ্যউন্নয়ন সম্ভব এমন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়েও সমাজ গিয়েছে, অর্থনীতি এই পরীক্ষন এর আগেও চালিয়েছে। সাফল্য কতটুকু এসেছিলো জানি না, তবে বেশ কয়েকজন এই নিরীক্ষন বন্ধ করেছে একটা পর্যায়ে।

অর্থনীতি এমন একটা বিজ্ঞান যেখানে গিনিপিগ মানুষ ও সমাজ, ইউনুসের এই আইডিয়া প্রয়োগের আগে থেকেই মানুষ গিনিপিগ, অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার গিনিপিগ, যে কোনো অর্থনৈতিক ব্যাবস্থাই মানুষের দৈনন্দিনতাকে ঘিরেই বেড়ে উঠে। তবে সব অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার সমালোচনা করা যায়, এর ত্রুটি বিচু্যতি প্রকাশ করা যায়, এর প্রায়োগিক দিক নিয়েও প্রশ্ন চলতে পারে, এ নিরীক্ষা সার্বক্ষনিক। ব্যাক্তিবিযুক্ত আলোচনা সম্ভব না এই মডেলের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে, যেখানে এই অর্থনৈতিক মডেলের আহবায়ক, পরিচালক, প্রতিষ্ঠাতা ইউনুস, তাই তার প্রায়োগিক অর্থনীতির সমস্যা-দোষ আলোচিত হলে সেখানে ইউনুসও থাকবে।
পুঁজিবাদের কোনো একক নির্মাতা নেই,কার্ল মার্কস সাহেবের সমাজতন্ত্র নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই, বেশির ভাগ বিতর্কই শেষ পর্যন্ত প্রায়োগিক জায়গাটাকে ঘিরে চলে। চীনের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা নিয়ে লোক জন আলোচনা করছে, করছে রাশিয়ার ব্যাবস্থা ও এর সংস্কার নিয়ে, এসব আলোচনা করলে কেউ যদি ভাবে ইশ্বরঅবমাননা হইতেছে তাহলে তাদের বামহস্তের হস্তমৌথুনজাতিয় ভাবনাকে আসলে ফ্লাশ করে ফেলে দেওয়া দরকার।

এক দল মানুষের ধারাবাহিক মৃতু্য, একদল মানুষের ধারাবাহিক নিঃস্ব হওয়া এবং আত্মহত্যার বিষয়টা যদি এমন কোনো মানবিকতাসম্পন্ন মানুষকে স্পর্শ না করে তাহলে তার মানবিকতার বিচারটা ফেলে দিয়ে হাতে জপমালা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়া দরকার।

ইউনুস নোবেল পাওয়ার এখন ব্লগপাতা জুড়ে ইউনুসের আলোচনা হচ্ছে, রমজান এসেছিলো, সবাই রমজান, রামাদান, রামাডান নিয়ে পোষ্ট দিয়েছে, এটাই তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া, মানুষের ভাবনা এভাবেই চলে, ইউনুসের অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে দোষ খুঁজে পাওয়াটা পরচর্চার নাম দিয়ে যেসব মানবতাবাদী মানুষের মৃতু্যকে অস্ব ীকার করে যাচ্ছে তাদের জন্য সামান্য করূনা অনুভব করছি, অনুভব করছি আসলে সবাই মনে মনে উপাস্যই চায়, ওটা মিলে গেলে সবাই মুক্তকচ্ছ হয়েই উপাসনা করে, মানবিকতার জায়গাটা তখন কোথায় গিয়ে পড়লো তা ভাবে না।
আমি এর পরও আশায় আশায় থাকি, এই নিরীক্ষার ফলে যেসব মানুষ 25000 টাকার বাসায় থেকে, 5000 টাকা সঞ্চয় রেখে বছরে 10000 টাকা ঋণ শোধ করে, সেসব মানুষকে দারিদ্্ররেখা অতিক্রান্ত ভেবে রাতের বালিশ ভিজিয়ে ফেলা অন্ধত্ব একদিন কাটবে। একদিন মানুষ বুঝবে, 5000 টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে 10 হাজার টাকা বাৎসরিক ঋণের বোঝা টেনে বেড়ানো আসলে কার্যকর কোনো উন্নয়ন না, এটা কলুর বলদের জোয়াল। এটা শ্রমদাসত্ব, এটা ভুমিদাসত্ব, অভাবের শৃংখল থেকে মুক্ত হতে চেয়ে দাসখত লিখে দেওয়া।

মাইক্রোক্রেডিট ব্যাবস্থার প্রধান ত্রুটি চিহি্নত হয়েছিলো এর অতিরিক্ত ঋণ নির্ভরতা, এই ঋন নির্ভরতা থেকে স্বাবলম্বি হয়ে উঠার পথটা কিংবা দারিদ্্র সীমারেখার উত্তরনের পথটা চিহি্নত হওয়া উচিত ছিলো, তাদের মাসিক উপার্জন, আর ঋন মুক্ততার হিসাব দেখে, এই বাৎসরিক 10000 টাকা শোধা 46% গিনিপিগ কবে ঋণ মুক্ত হবে এর কোনো সময়সীমা দেয় নাই আমাদের ইউনুস সাহেব, আমাদের মানবতাবাদী নতুন ইশ্বর বাংলাদেশের।

আমাদের ইশ্বর খুঁজে পাগল হয়ে ঘুরে বেড়ানো মানবিক মানুষদের ত্রাতা হয়ে এসেছেন শান্তির নোবেল বগলে নিয়ে। যারা ইশ্বরের সমালোচনা পছন্দ করেন না, যারা ইশ্বরনিযুক্ততাকে মৌলবাদিতা চিহি্নত করে একই মৌলবাদিতার চর্চা করে যায়, আমরা আনন্দিত হই, আমরা গর্বিত হই, আমরা সমালোচনা বাদ দেই , আসলেই শান্তিতে নোবেলটা পেয়ে আমাদের নবনিযুক্ত ইশ্বর এবং তার প্রতিষ্ঠানের জন্য যেই কয়জন মানুষ মরেছে এবং মরবে ভবিষ্যতে তারা সবাই ইশ্বরের রাস্তায় শহীদ, তারা জেহাদ করতে করতে মরে গেলো, তাদের সরাসরি বেহেশত নসীব করা হবে, এই বেহেশত তৈরি করবেন আমাদের নতুন ইশ্বর ইউনুস।

আমরা তার নামে জয়ধ্বনি দেই, আমরা মুক্তকচ্ছ হয়ে বন্দনা করি তার। আমাদের নোবেল প্রাপ্ত মানুষটির ভুল হলেও আমরা সেটাকে ইশ্বরোচিত ভুল ভাববো, খামখেয়ালিপনা ভেবে ভুলে যাবো, আমাদের যেসব কাফের বান্দা এখনও নবনিযুক্ত ইশ্বরের বিপরীতে লিখছে, যেমন আমি, তাদের অচিরেই জেল জরিমানা ফাঁসি এবং পাথর ছুড়ে হত্যার বিধান দেওয়া হোক। আমরা দেখি জাতিয়তাবাদী অন্ধত্ব কতটা মৌলবাদী চরিত্র বের করে আনতে পারে আমাদের তথাকথিত মানবিক মানুষদের ভেতর থেকে। কতটা অমানবিক করে ফেলতে পারে আমাদের মানবিক মানুষদের জাতিয়তাবোধ দেখা যাক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ ভোর ৬:৩৫
৯১টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×