নোয়াখালীতে মন্দিরে আগুণ জ্বালিয়ে আজকে জামায়াত শিবির প্রমাণ করলো স্বাধীন বাংলাদেশের ৪২ বছরে তারা একাত্তরের চেতনায় বিন্দুমাত্র উদ্বুদ্ধ হয় নি, বরং তারা সাংগঠনিক ও আদর্শিক দিক থেকে এখনও একাত্তরের চেতনাবিরোধী একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
১৯৭১ সালে যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করে তারা এ দেশের সংখ্যালঘু ও স্বাধীনতাকামীদের উপরে নৃশংসতায় সহযোগিতা করেছিলো এবং এদের হত্যা ও নির্যাতনে সাংগঠনিক ভাবে নিয়োজিত ছিলো সেই আদর্শ থেকে তারা সরে আসে নি।
আদালতের রায় মেনে না নিয়ে, জনগণের প্রত্যাশা ও ন্যায়বোধের বিরোধিতা করে তারা আজকে পুনরায় যেভাবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস শুরু করলো এটাকে প্রতিরোধ করতেই হবে।
যে রাজনৈতিক গোষ্ঠী পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে লিপ্ত তাদের সাম্প্রদায়িক চেহারা উন্মোচিত, তাদের সাম্প্রদায়িক থাবা থেকে আমাদের প্রতিবেশীদের রক্ষা করতে হবে আমাদেরই। এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করা প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী নাগরিকের দায়িত্ব। আপনারা আপনাদের প্রতিবেশীদের উপরে আক্রমন প্রতিরোধ করেন, আজ পুনরায় একাত্তরের ঐক্যের প্রমাণ দিতে হবে আমাদের, এই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এখানে মানুষ মানুষকে ধর্মে নয় সংস্কৃতিতে আপন ভাবে। আজকের প্রতিরোধ আমাদের সংস্কৃতি রক্ষার প্রতিরোধ।
শাহবাগ এ লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু এবং শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি এক ধরণের স্নেহানুভুতিও কাজ করে , মাত্র ৭ বছর আগের ফেব্রুয়ারীতে সামহোয়্যার ইনে যখন প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী উত্থাপন করা হয়েছিলো, যখন সে সময়ের অতিক্ষুদ্র অনলাইন কম্যুনিটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ন্যায়বোধটুকু উপস্থাপন করা হয়েছিল সে সময়ে কেউ বিশ্বাস করি নি মাত্র ৭ বছর পরেই বিচারের রায় মনঃপুত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তারুণ্য এমন প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলবে। সামহোয়্যার ইনের শুরুর দিনগুলোতে এই ক্মুষুদ্ক্তির কম্যুনিটির ভেতরেও অনেকে ছিলো যারা যুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা বিষয়ে সংশয়ী। যারা মুক্তিযুদ্ধের অর্জন বিষয়ে সন্দিহান ছিলো এবং যারা বাঙালী সংস্কৃতিকে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির উত্তরাধিকার বিবেচনা করতো। এদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আমাদের সে সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির ন্যায্যতা নিয়ে আলোচনা করতে হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যখন নিজেদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে ফখরুদ্দিন সাহেব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর আশ্বাস দিলেন সে সময়েও যেভাবে অন লাইনের তরুণ ব্লগারেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কয়েকলক্ষ মানুষের সাক্ষর সংগ্রহ করলো স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তখনও জানা ছিলো না এমন গণজাগরণের বীজ ভেতরে পুষে রেখেছে আজকের তারুণ্য। তবে ভেতরে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা আর আশা নিয়ে ছিলাম।
আজ গণজাগরণ মঞ্চের পাহাড়ায় যারা নিয়োজিত তারাও তরুণ, এদের অধিকাংশই সরাসরি ব্লগের সাথে যুক্ত না, কিন্তু মূল উদ্যোক্তাদের অনেকেই ব্লগার। নোয়াখালীতে যার গ্রামের বাসায় হামলা হলো, সেও ব্লগার, নোয়াখালী গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী, শুধুমাত্র ধর্মীয় বিদ্বেষের কারণে তার বাসায় আর মন্দিরে হামলা হয়েছে এমন না বরং প্রতিপক্ষ হিসেবে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের টার্গেট করছে তারা।
তারা এভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে দেশে এক ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে, সরাসরি সংঘাতে যাবে, আরও মানুষকে হত্যা করবে। ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপরে আক্রমনের সম্ভবনা আরও বাড়বে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে, আমাদের প্রতিরোধের সময় এসেছে,
গণজাগরণ মঞ্চ থেকে এর আগে ঘোষণা এসেছে ২৬শে মার্চের ভেতরে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আইনী কার্যক্রম শুরু করবে হবে, কিন্তু সাঈদীর রায় ঘোষণার পর যেভাবে পরিকল্পিত সন্ত্রাস চালানো হলো সারা দেশ জুড়ে, সেভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ক্ষুন্ন করে দেশজুড়ে এক ধরণের অস্থিরতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলো,যেভাবে রাষ্ট্রের নীতিবিরোধী কার্যক্রম শুরু করেছে জামায়াত শিবির, তাদের অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি অনুরোধ ঘোষিত আলটিমেটাম পরিবর্তন করে আগামী ৭ই মার্চের ভেতরে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করার আলটিমেটাম দিতে হবে। এই মঞ্চ ব্লগারদের মঞ্চ, এই মঞ্চ জনগণের মঞ্চ, জনগণ আর ব্লগারদের জনমত যাচাই করে দেখা হোক, আজ রাতে জনমত যাচাই করে তারা যদি নিশ্চিত হয় সিংহভাগ মানুষই আসলে আলটিমেটাম এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে আগামী কালই নতুন আলটিমেটাম আসুক
গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ঘোষণা আসুক ২৬শে মার্চ নয় একাত্তরের চেতনা বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠনকে আগামী ৭ই মার্চের ভেতরে নিষিদ্ধ করতে হবে। সুললিত প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে ঘোষণা নয় বরং স্পষ্ট দাবি উঠুক জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ার সমাপ্তি হোক ৭ই মার্চ।