somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা !!!

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের সংবিধানের ১১অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবতার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। অনেকে মনে করেন নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, নির্বাচিত সরকার মানেই গণতান্ত্রিক সরকার। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় শুধুমাত্র ভোটাভুটির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক যাত্রাপথের সূচনা হয়নি। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে গণতন্ত্রের ভিত তৈরী হয়েছে জনগণের কতগুলো মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এবং আইনের শাসনের মাধ্যমে । ভোট প্রয়োগ করার সুযোগ সৃষ্টি হলেও মানুষের মৌলিক অধিকার সমূহ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হলে গণতন্ত্র বিকশিত হয় না। মৌলিক অধিকার যেমন চিন্তা, বিবেক, বাক স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, সংগঠন ও সমাবেশ করার স্বাধীনতা, পেশা বৃত্তির স্বাধীনতা, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকার যা হরণ করা যায় না। এগুলো মানুষের জন্মগত অধিকার যা আইন দিয়ে রহিত করা যায় না।

আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ না থাকলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। অবাধ সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা ঘটলেও যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম হতে পারে না। অন্যদিকে সংবাদপত্রকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আবার সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অর্থ সবকিছু রিপোর্টিং করার স্বাধীনতা নয়, জনস্বার্থের বিষয়গুলো তুলে ধরাই মূলত স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের আড়ালে কিছু সংবাদপত্রের মালিকরা ব্যক্তি ও গোষ্ঠি স্বার্থে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নামে কোন কোন সময় যা পরিবেশন করেন তাকেও যথার্থ অর্থে নিরপেক্ষ স্বাধীনতা বলা যায় না। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রহসনে পরিণত হতে পারে। অবাধ তথ্য প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পূর্বশর্ত। গণতন্ত্রের স্বার্থেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অপরিহার্য। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়। একটি সুষ্টু গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীন সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম অপরিহার্য। গণমাধ্যম বা সংবাদপত্র যে কোন বিষয়ের উপর জনমত সংগঠনের ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করতে পারে অত্যন্ত সফলভাবে। অপরাধ প্রতিরোধ ও গণমাধ্যমের রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। যে কোন ঘটে যাওয়া অপরাধ সম্পর্কে ভীতি তৈরী করতে গণমাধ্যমের রয়েছে অনেক শক্তি। পাশাপাশি অপরাধ প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের একটি উক্তি হলো- The all security of all is in free press. অর্থাৎ সকলের সকল নিরাপত্তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মধ্যে নিহিত।

যে সমাজে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিদ্যমান এবং গণমাধ্যম মুক্ত ও স্বাধীন সে সমাজই আলোকিত। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আইনের শাসন,গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এ বিষয়গুলো একটি অপরটির পরিপূরক। গণতন্ত্র এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবেও স্বীকৃত। সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ৩৯ নং অনুচ্ছেদে এ ব্যাপারে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্র সমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জন শৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার এবং (খ) সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল। তবে এ কথাও সত্য কোন স্বাধীনতা বা অধিকারই আইনের ঊর্দ্ধে নয়। বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের আরও বিকাশ ঘটুক, দেশ ও জাতি আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করুক- এটাই প্রত্যাশা ।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×