ভোর হচ্ছে। একটু একটু করে আলো ফুটছে চারিপাশে। পরিচিত ঘরে যেন অচেনা এক মায়া ছড়ানো। ঘুম ভেঙ্গেছে অনেকক্ষণ। শুয়ে শুয়ে দেখি আলোর বিস্তার। প্রতি দিনের মত একই স্বপ্ন মাথায় নিয়ে বিছানা থেকে পা ফেলি। আমার খুব প্রিয় একটি স্বপ্ন আছে যা ভোর বেলায় আমায় আছন্ন করে রাখে,স্বপ্নটা এ রকম- আমার ঘুম ভেঙ্গেছে চোখ খোলার আগেই শুনতে পাচ্ছি পাখির কিচিরমিচির। চোখ বন্ধ করেই বিছানায় উঠে বসেছি, পা ফেলেছি মেঝেতে। চোখ মেলেই দেখতে পাই আমি আদিগন্ত সবুজ ঘাসে ছাওয়া এক প্রান্তরে। আমার পা ডুবে যাচ্ছে নরম ঘাসের গালিচায়। শিশির ভেজা মাঠ, দূরে সবুজ অরন্য। আলো আঁধারীর খেলা সেইখানে । হাজার পাখির কলরবে আর ভোরের স্নিগ্ধ বাতাসে আমার প্রাণ জুরিয়ে যাচ্ছে। আমি দৌঁড়ে যাচ্ছি পায়ে শিশির মেখে। বাতাসে উড়ছে আমার এলোমেলো চুল আর সেই অরন্য যেন ডাকছে হাতছানি দিয়ে। অরন্যের আবছা আলোতে দাঁড়িয়ে সে দুহাত বাড়িয়ে। আমি দৌঁড়ে যাই শুধু দৌঁড়ে যাই। কিন্তু মাঠ টা কেন যে এত বিশাল! কিছুতেই ফুরোয় না পথ...
অনেকক্ষণ ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি টের পাই চোখ ভিজে গেছে জলে। প্রতি টি ভোর হয় এই একই স্বপ্ন নিয়ে। একই ব্যাকুলতা নিয়ে। আজকাল কাঁদতে পারি না। এত বেশি ফুলে থাকে চোখ যে বন্ধ করতেও কষ্ট হয়।
প্রচন্ড ব্যথায় আছন্ন হয়ে যাচ্ছি। মাথার ভেতরে যেন ঝড় বইছে। হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যাই নিচে। মা-আ-আ-।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখি দিন গুলি দীর্ঘ থেকে যেন দীর্ঘতর হয়ে এক সময় বিলীন হয়ে যায় রাতের গর্ভে। আমি শুধু অপেক্ষায় থাকি ভোরের। শুধু ওই সময়টায় আমি যেন এই আমি নই। একটি উচ্ছল তরুণী যার ভালোবাসার মানুষটি দাঁড়িয়ে সবুজ বনানীর আলো আঁধারীর মাঝে। তার কাছে যেতে হবে। কতকাল ধরে আমার প্রিয় দু হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। আমাকে যে করেই হোক পৌঁছুতে হবে তার আলিঙ্গনের মাঝে।
প্রবল ব্যাথার ঢেউ আছড়ে পড়ে সারা শরীরে...অচেতন হবার মুহুর্তে যেন দেখতে পাই তাকে...
এক পলক।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১০ রাত ৮:২৫