চা উপাখ্যানঃ
ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন চা খোর মানুষ। শুধু লাঞ্চ টাইম বাদ দিলে সকাল আটটা থেকে আমার চা পর্ব শুরু আর শেষ করি সন্ধ্যা সাতটায়।পৃথিবীর নানান দেশের নানান প্রকার চা খুঁজে বের করে চায়ের স্বাদ নেয়া আমার অন্যতম নেশা! চা সম্পর্কে কিছু জানার নেশাও কম নয়। তাহলে শুরু হয়ে যাক-চা খেতে খেতে(পান করা) চা সম্পর্কে কিছু লেখাঃ-
চা-কে কেন্দ্র করে চীনে একটি জনপ্রয়ি উপাখ্যান প্রচলিত আছে। তা হলো এই, ‘৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত বৌদ্ধ র্ধম সাধক বোধিসত্ত্বের মৃত্যু হয়। বোধিসত্ত্ব হলেন পরোপকারী এবং জ্ঞানের সাধক। প্রায় সব সময়ই তিনি ধ্যান করতেন। ধ্যানে বসে একবার তার এতই ঘুম পাচ্ছিল যে, ধ্যানে একাগ্রতা আসছিল না। তখন তিনি হঠাৎ খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে দু’চোখের পাতা কেটে মাটিতে ফেলে দেন। মাটিতে পড়া চোখের পাতা থেকে গাছ জন্মে। একদিন বোধিসত্ত্ব ওই গাছের কিছু পাতা খেয়ে নেন। এতে তার ঘুম দূর হয়ে যায়, ধ্যানের সহায়ক হয়-এ কথা তিনি বুঝতে পারলেন। তখন তিনি ওই গাছের গুণ ও খাওয়ার কথা শিষ্যদের বলেন। এ গাছই চা।’
চা সম্পর্কে দ্বিতীয় উপাখ্যানটিও চীনের। চিনের এক রাজা গভীর অরণ্যে শিকার করতে গিয়ে চা পাতা আবিষ্কার করেন আকস্মিকভাবে। রাজা তার পাত্র-মিত্র নিয়ে গেলেন শিকারে। দীর্ঘ পথ ঘুরে ঘোড়ায় চড়ে চলতে চলতে তিনি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। অরণ্যের এক জায়গায় বিশ্রাম নিতে তাঁবু খাটাতে বললেন। রাজার নিয়মিত অভ্যাস, গরম পানি পান করেন তিনি। রাজার রসুইখানার কর্তা গরম পানি করে রাজাকে পরিবেশন করলেন। রাজা সেই গরম পানিতে পেলেন এক ভিন্ন রকম স্বাদ। পানিও ছিল সামান্য রঙিন। ক্লান্তিও একটু দ্রুত কেটে গেল মনে হলো। ব্যস, এর কারণ খুঁজে রাজা দেখেন, পানি সেদ্ধ করার পাত্রে একটি পাতা পড়ে আছে। ওই পাতার কারণেই পানির স্বাদ ও রঙে ভিন্নতা আসে। আবার খোঁজ, কী গাছের পাতা, কোথায় সেই গাছ। খোঁজাখুঁজির পর সন্ধান পাওয়া গেল। পরীক্ষা চলল। সমাধানও মিলল। ওই পাতার রসে দেহের ক্লান্তি কাটে। তাই সেই পাতা তন্দ্রাহরণী। সবুজ পাতা থেকে রস বের করতে হয় বলে সে শ্যামপর্ণী।
চা খুব সম্ভব চীনা দার্শনিক জগদ্বিখ্যাত কনফুশিয়াসের সময় খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ শতাব্দীতে ব্যবহার শুরু হয়। ৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চীনে চায়ের ওপর কর আরোপ করা হয়। নবম শতাব্দীতে চীন থেকে চা জাপানে পৌঁছলেও জাপানিজরা ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে এর চাষ শুরু করেন। চীনারা দাবি করেন, খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ বছর আগে সম্রাট সিন নাং চায়ের প্রচলন করেন।
১৬০০ শতাব্দীতে চা ডাচদের মাধ্যমে ইউরোপ যায়। এই সম্পর্কে আবার মতভেদ আছে। তবে ১৭০০ শতাব্দীতে চা ইংল্যান্ডে পৌঁছায়। লন্ডনে ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম চায়ের দোকান হয়। ১৬৬৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখনকার ব্রিটিশ সম্রাট দ্বিতীয় চার্লসকে ২ পাউন্ড ২ আউন্স চা উপহার দেন। সেকালে ওই চায়ের দাম ছিল প্রতি পাউন্ড ৪০ শিলিং। ১৬৭৭ সালে কোম্পানি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চীন থেকে চা রফতানি করতে থাকে। তখন চায়ের জন্য সম্পূর্ণরূপে চীনের ওপর নির্ভর করে থাকতে হতো।
জানা যায়, চীনেই চায়ের ব্যবহার প্রথম হয়েছে। চা প্রথম ব্যবহৃত হয় ওষুধ হিসেবে, তারপর পানীয় হিসেবে- সারা বিশ্বে প্রবল প্রতাপে ছড়িয়ে পড়ে।
চায়ের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া চিনেনসিস। চা অতন্ত্রী, তন্দ্রাহরণী। চায়রে মধ্যে এমন স্পেশাল ঘ্রাণ আছে-যার সাথে অন্য কোনো প্রাকৃতকি ঘ্রাণের মিল নেই। সেই ঘ্রাণকে প্রাকৃতকি শ্রেষ্ঠ ঘ্রান হিসেবে উল্যেখ করেছেন বৈজ্ঞানিকগন। চা প্রাকৃতিক ঘ্রাণে শ্রেষ্ঠ বলে চা-কে ঘ্রাণসম্রাজ্ঞী হিসেবে র্বণনা করা হয়েছে চীনা ইতিহাসে। চা বিশ্বের এক নাম্বার জনপ্রিয় পানীয়।
তথ্য সূত্রঃ চীনা গ্রন্থ Suya Lu Cha (যার বাংলা নাম হতে পারে-"সবুজ চা পাতা")।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




