somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

নাগরিক যন্ত্রনাঃ ধানমন্ডিবাসী........

২৮ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাগরিক যন্ত্রনাঃ ধানমন্ডিবাসী........

ঢাকা শহরের আভিজাত্য ছিল এক সময় ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা। ছিমছাম নিরিবিলি বিশাল এলাকা নিয়ে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা গঠিত। মূল ধানমন্ডিবাসী সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড ভিত্তিক ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ধানমন্ডি ১ নম্বর থেকে ৩২ নম্বর ছাড়াও এই ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে আছে- ধানমন্ডি ১৫ নম্বর স্টাফ কোয়ার্টার, মিতালী রোড, মিরপুর রোড, সাতমসজিদ রোড, পিলখানা বিডিআর ৪ নং গেট, পুর্ব রায়ের বাজার এবং কলাবাগান শিশু পার্ক। ততকালীন পুর্ব পাকিস্তানের ঢাকা ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট(ডি আই টি)১৯৫৫ সালে ৫ শত একর জমিতে ৬৮০ টি আবাসিক প্লট নিয়ে প্রথম 'গ্রীণ ধানমন্ডি সাইলেন্ট জোন আবাসিক এলাকা' গঠিত হয়। বর্তমানে কিছু প্লট রিসাইজ করে মোট ৬ শতাধিক প্লটে বসত বাড়ি এবং ২ শতাধিক প্লট বানিজ্যিক ভবন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ২ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ভোটার আছেন ৪২ হাজার। এই ওয়ার্ডে মাত্র একটি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৮ টি কোচিং সেন্টার, ৯৫ টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৬ টি কলেজ, ৪৫ টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ২৪ টি হাসপাতাল, ৫৬ টি ক্লিনিক, ৩২ টি ডায়াগ্নস্টিক সেন্টার, ৩০ তি প্রাইভেট কমিউনিটি সেন্টার এবং ১২ টি মসজিদ আছে। আমি সত্যি জানিনা পৃথিবীর অন্য কোথাও এতটূকুন যায়গায় ৪৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আছেকিনা!

ধানমন্ডি সরকারী গার্লস হাইস্কুল, কামরুন্নেসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাকলী উচ্চ বিদ্যালয়, জুনিয়র ল্যাবরেটরিজ হাইস্কুল, ঢাকা সিটি কলেজ, ইউনিভার্সিটি উইমেন ফেডারেশন কলেজ এবং ডঃ মালেকা আল-রাজী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এমপিও ভুক্ত। বাকী ৯০ টি হাইস্কুল ও ৩২ টি কলেজের শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা অধিদপ্তর এমনকি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনেরও কোন অনুমোদন নেই। এছাড়াও ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়, স্টাম্ফোর্ড এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি ছাড়া অন্যকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেই। ৯৫ পার্সেন্ট ডায়াগন্সটিক সেন্টার, ক্লিনিক, হাসপাতালের অবৈধ রমরমা ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ পরমানু কমিশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন অফিস, ফায়ার ব্রিগেড এমনকি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কোন অনুমোদন নেই। এসব প্রতিষ্ঠান আবাসিক এলাকায় হবার কারনে প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অসহনীয় যানজট লেগেই থাকে। এই এলাকার প্রধান সমস্যা যানজট।

মির্জা হাফিজ রোড, অলি আহাদ রোড, শেখ কামাল রোড, শমসের মবিন চৌধুরী রোড সহ বেশ কয়েকটি রোডের অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। পুরাতন ১৫ নম্বর, ৪ ও ৫ নম্বর রোড এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভয়াবহ রকমের খারাপ। লেকের ওয়াক ওয়েগুলোতে নেই পর্যাপ্ত লাইটিং এর ব্যবস্থা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় দর্শনার্থীদের প্রায়শই পরতে হয় দলবদ্ধ ছিনতাইকারীদের খপ্পরে।

সাতমসজিদ রোডে "তাজ" নামক নির্মানাধিন একটি বাড়ীর সামনে রাস্তার উপড় ছরানো ছিটানো নির্মাণ সামগ্রীর কারনে এলাকায় নাগরিক সমস্যা নতুন আকার ধারন করেছে। অনেকেই বাড়ী বানাচ্ছেন। কিন্তু 'তাজ' নামের বাড়ী বলে কথা- উনার কেয়ারটেকার সহ নির্মাণ শ্রমিকদের বেশুমার ক্ষমতার দাপটে এলাকার সাধারন মানুষ দিশেহারা। ওনার বাড়ীর নির্মাণ সামগ্রী দিনেরপর দিন রাস্তার অনেকাংশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার ফলে পথচারীদের নিদারুণ কস্টের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি- একদার ক্লীন ধানমন্ডির, গ্রীণ ধানমন্ডির, সাইলেন্ট জোন ধানমন্ডি এলাকার নিজস্ব একটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। বর্তমানে সেই নিরাপত্তা নেই। এখানে এখন চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজী এবং মাদক ব্যবসা নিত্তনৈমত্তিক বিশয়। এমন একটা দিন নেই, এমন একটা রাত নেই- যেদিন/ রাত ধানমন্ডি এলাকার কোন বাড়ীর গ্রীল কেটে চুরি হয়না, এমন একটা রাত নেই যেদিন কোননা কোন ফ্লাট বাড়ির গ্যারাজে ঢুকে চোরের দল সিকিউরিটি গার্ডদের হাত-পা বেধে গাড়ির মুল্যবান যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায়না।

আইন শৃংখলা রক্ষার জন্য ৫ নম্বর রোডে একটি বাড়ির সামনে-পিছনে শতাধিক পুলিশ, এলিট ফোর্স RAB, পিজিআর আর বিভিন্ন গোয়েন্দা শাখার গোয়েন্দাদের জমজমাট ভীড়(যদিও সেই বাড়িতে নিয়মিত কেউ বসবাস করেনা)! কিন্তু সাধারন ধানমন্ডি বাসীর কোন নিরাপত্তা নেই। এদিকে ধানমন্ডি আবাহনী ক্রিকেট কন্ট্রোল রুমের সাঁজঘরে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা "ইয়াং ওয়ানস" নামকরন করে দখল করে সেখানে দিন-রাত হাউজী/ জুয়া খেলা এবং নানাবিধ অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। অন্যদিকে লেকের পাড় দখল করে বিভিন্ন নামে অফিস খুলেছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। তারা লেকের পাড়ের জমি দখল করে সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েতুলে সেখানথেকেও চাঁদাবাজী করে এলাকায় একধরনের ভয়াবহ অরাজাতক পরিস্থিতির সৃস্টি করে রেখেছেন। ধানমন্ডি লেকের পাড় এখন সত্যিকার মগের মুল্লুক! এখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলের রাতভর চলে মাইকে উচ্চ ভলিউমে গান বাজনা আর মাদকের হাট, আছে বহিরাগত কতিপয় শিক্ষিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নামধারি বখাটেদের উতপাত। যার ফলে এলাকাবাসী অতিস্ট হয়ে পরেছে।

আমাদের ছেলে বেলার ধানমন্ডি আর বর্তমান ধানমন্ডির মধ্যে বিস্তর ফারাক। বর্তমান ধানমন্ডির দুরাবস্থার মত এমন করুণাবস্থা কোন দিন দেখিনি। বড় বড় প্লটগুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়েগিয়েছে, দোতলা বাড়িগুলো প্রয়োজনে এখন বহুতল ভবনে রুপান্তরিত হয়ে গিয়েছে। ধানমন্ডিতে এখন আর সেই পারিবারিক তথা প্রতিবেশীসুলভ সৌহার্দ কল্পনারও অতীত! এখন বোধহয় সেই গানের কলি সত্যি হয়ে গিয়েছে-"ধানমন্ডিতে ধান পাওয়া ভার, নিঠুর দালান কোঠায়"!

(পোস্টের প্রথম প্যারায় উল্লেখিত তথ্যসুত্র/পরিসংখ্যান ২০০৯ নিয়েছিলাম যখন আমি ধানমন্ডি রেসিডেন্সিয়াল সোসাইটির কার্য্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলাম এবং এই বিষয়ে এই ব্লগে লিখেছিলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৩৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলন পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলনের পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লালবদর নীলা ইস্রাফিল এখন বলছেন ও স্বীকার করছেন যে—
জুলাইয়ের সবকিছুই ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন।
মুগ্ধের হত্যাও সেই ডিজাইনের অংশ।

অভিনন্দন।
এই বোধোদয় পেতে দেড় বছর লাগলো?

আমরা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×