দোষ মিয়ার নাম নিয়ে গোলমাল.....
আমার "দোষ মিয়া" নামটার কথা নিশ্চয়ই পুরনো বন্ধুদের মনে আছে.... যারা আমার 'দোষ মিয়া' নাম করনের বিষয় জানেন না তাদের অবগতির জন্যঃ বাড়ির যে কোনো সমস্যার জন্য, যেমন ধরুনঃ
* পানির পাম্পে সমস্যা "কি পাম্প লাগাইছো- খালি নষ্ট হয়"(যদিও আগে কখনো নষ্ট হয়নি),
* কারেন্ট চলে গেলে জেনারেটর অটো স্টার্ট হয়নি- "এতো দামী জেনারেটর কিনছো অথচ অটো স্টার্ট হয়না- কোন কোম্পানির জেনারেটর কিনছো"!
* চলমান লিফট মাঝ পথে থেমে গিয়েছে- "কোথা থেকে কোন লিফট সার্ভিসিং কোম্পানিকে ধইরা আইন্না মেন্টেনেন্স/সার্ভিসিং কাজ দিয়েছো- এখন লিফট মাঝ পথে হ্যাং হয়ে যায়!"
* "সিড়িতে ময়লার আস্তর জমে আছে- ক্লিনার পরিস্কার কবে করছে খোঁজ খবর রাখোনা- কেয়ার টেকার বিদায় করে দাওনা কেনো!"
* "তিন দিন যাবত কাজের বুয়া আসেনা, সারাদিন ঘরে বসে থাকো- কেয়ার টেকার করেটা কি- কোনো খবর রাখো?"
* "ওয়াসার পানি সরবরাহ কম, রান্নার গ্যাসের প্রেসার নাই- চুলা জ্বলে টিমটিম কইরা, কোনো ব্যবস্থা করতে পারোনা!"
* "ছাদ বাগানের গাছগুলোর পাতা হলুদ হয়ে গেছে- নার্সারিতে যেয়ে একটু আলাপ করে সার/কীটনাশক আনতে পারোনা?"
* "বারান্দার লাইটটা আজ চারদিন যাবত নষ্ট, ঘরে বইসা বইসা করো কি- কেয়ার টেকারকে বলে একটা লাইটটা তো লাগাইতে পারো!"
আপাতত সমস্যার ফিরিস্তি আর লম্বা না করি....এতো এতো দোষ মাথায় নিয়ে আমি ক্লান্ত। তাই স্ত্রী সন্তানদের ডেকে বলেছি- 'আমার পিতৃপ্রদত্ত আকিকা করা নাম বাদ দিয়ে এখন থেকে আমি আমার নাম "দোষ মিয়া" রাখলাম, আমাকে সবাই দোষ মিয়া ডাকবা-- এই হইলো দোষ মিয়া নামের ইতিহাস।
আমার শতকোটি দোষের মধ্যে একটা দোষ- আমি মানুষের নাম মনে রাখতে পারিনা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। তবে সমস্যাটা জেনুইন, স্রেফ ক্যাসুয়াল আলস্য নয়। নবপরিচিত বন্ধুবান্ধব নয়, আমি অজস্র গুরুত্বপূর্ণ বিগশটদের নামও বেমালুম ভুলে যাই। যেমন ধরুন, বর্তমান মন্ত্রীসভার ৩/৪ জন মন্ত্রীদেরও প্রচলিত নামের বাইরে পুরো নাম বলতে পারবোনা- যেমন পলক৷ বিপু, জব্বার- এইরকম। অবশ্য গমরুল, কালা বিলাই, বগি, রাভিশ, দানব খান, বিড়ি খোর টাইটেলগুলো ভুলতে পারিনা। আর সমস্যা জটিল হয় তখনই যখন অনেক নিকটজনের নামও মনে করতে পারিনা।
"আমিতো ভালা না, ভালা লইয়া থাইকো"!
আমাদের দাদা দাদী, নানা নানীদের আমলে এবং তারও আগের আমলে মানুষের হাতে অঢেল টাইম থাকত, তাই নামগুলোও হত বড় বড়। যেমন আমার মাতুল বংশের কয়েজনের নামঃ- মীর তমিজউদদীন আলী মোহাম্মদ ইফতেখারুজ্জামান, মীর আলমগীর মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার উল আলম। পিতৃকুলে মির্জা সাইফুল্লাহ আল করিম উল মাওলা, মির্জা মহিব মোহাম্মদ নকীব উল আসাফউদ্দৌলা। আমার জনৈক হিন্দু বন্ধুর বাবার নাম- শ্রী শ্রী গোপেশ্বর হেমাঙ্গকিশোর রায় ওরফে বুম্বা, ওর জ্যাঠার নাম- শ্রী শ্রী মলেন্দ্রবিকাশ কুমার রায় ওরফে বাঘা।
আমাদের পূর্বপুরুষদের নানাবিধ ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে গিয়েছিল বলেই তাঁদের সময়ের দাম ছিলো, তাই আমাদের বাবা মায়েদের দেওয়া নামগুলো দেখবেন দায়সারা। আমাদের সময়(৬০/৭০ দশকে) খুব সহজ নাম রাখা হতো। যেমন - আমাদের যৌথ পরিবারের আমার ও ফাস্ট কাজিনদের নাম- হিমু, জামী, বিপু, পল ইত্যাদি।
আজকালকার কতিপয় বাবা মা তাদের সন্তানদের নাম রাখার সময় পারলে গোটা প্রমিত বাংলা অভিধান ঝুলিয়ে দেয়! শুধু কঠিন বাংলা শব্দই নয়, রাশিয়ানে রাজকন্যা, টার্কিশে মল্লযোদ্ধা, স্লোভাকিয়ান ফুল, হামুরাবির বংশধর সব শালা নাম। যেখানে আমি পিরিয়ডিক টেবিল মনে রাখতে পারিনা সেখানে এইসব ব্যাকরণ নাম মনে থাকবে!
বেশ কয়েকটা নাম বলছি- সিদ্ধার্থ হেনরিক সৌম্য, পুনশ্চ আবাহন মুগ্ধ, মুগ্ধতা প্রকৃতি ঋদ্ধি, রাজর্ষী প্রিয়া সমস্বর, দ্বীপশ্রী মৃগাংক শ্রেয়সী(এই নামগুলো আমাদের মিডিয়ায় পরিচিত কয়েকজন শিল্পী/কর্মীদের সন্তানদের নাম)। দীপ্ত টিভির একজন রিপোর্টারের নাম সমৃদ্ধি তাবাসসুম। কোলকাতায় একজন উঠতি সাহিত্যিকের নাম- শুদ্ধ সত্য সহজিয়া ঘোষ(এ রকম নাম আরও অনেক আছে যা লিখে আর সময় নষ্ট না করি)।
১২ বছর! মানে একযুগ কেটে গেছে। এই সময়ে অনেক কিছু বদলে গেছে। সমরাস্ত্র বিক্রেতাদের কূটকৌশলে লিবিয়া - সিরিয়া ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। আফগানিস্তানের মোল্লাদের গাবুইরা মাইর খাইয়া আমেরিকা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া এখন আন্তর্জাতিক এতিম রাস্ট্র! করোনায় বিশ্বের ৬২ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। আমরা আমাদের কয়েকজন স্যাংশান খেয়ে তরফাইতাছে.... শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে, ইমরান খানের পতন হয়েছে- আরও কতো কী! বদলায়নি শুধু দোষ মিয়ার দোষের সূচিপত্র বরং আরও দোষ মিয়ার দোষের পরিসংখ্যান বেড়েছে

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


