somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

অঞ্জনা......

১৯ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

~ অঞ্জনা ~

"নদীর নাম সই অঞ্জনা নাচে তীরে খঞ্জনা,
পাখি সে নয় নাচে কালো আঁখি।
আমি যাব না আর অঞ্জনাতে জল নিতে সখি লো,
ঐ আঁখি কিছু রাখিবে না বাকি।।

সেদিন তুলতে গেলাম দুপুর বেলা
কলমি শাক ঢোলা ঢোলা (সই)
হ’ল না আর সখি লো শাক তোলা,
আমার মনে পড়িল সখি, ঢল ঢল তা’র চটুল আঁখি
ব্যথায় ভ’রে উঠলো বুকের তলা।

ঘরে ফেরার পথে দেখি,
নীল শালুক সুঁদি ও কি
ফু’টে আছে ঝিলের গহীন জলে।
আমার অমনি পড়িল মনে
সেই ডাগর আঁখি লো
ঝিলের জলে চোখের জলে হ’ল মাখামাখি”।।
--------------------------------------------------

"নদীর নাম সই অঞ্জনা..."- আমার খুব পছন্দের একটা নজরুল সংগীত। 'অঞ্জনা' তে আমি মুগ্ধ, বিমোহিত! আমি অঞ্জনার পিছু নিয়েছিলাম সেই স্কুল কলেজ জীবন থেকেই....

"অঞ্জনা নদীতীরে চন্দনী গাঁয়ে
পোড়ো মন্দির খানা গঞ্জের বাঁয়ে
জীর্ণ ফাটল-ধরা, এক কোণে তারি
অন্ধ নিয়েছে বাসা কুঞ্জবিহারী"- আমরা যারা বাল্যকালে বিদ্যাসাগরের 'সহজ পাঠ' বইয়ের এই কবিতা পড়েছি তাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে স্রোতস্বিনী একটি নদীর ছবি। কিন্তু বর্তমানে নদীটি আর নদী নেই, হয়ে গেছে শীর্ণকায় মরা খাল। প্রায় পাঁচশো বছর আগে জলঙ্গীর থেকে প্রবাহিত সেই নদী। জন্ম হলো অঞ্জনার, এক ইতিহাসেরও। শান্ত, ধীর গতির অঞ্জনা ভরপুর বৃষ্টিতে অশান্ত হয়ে উঠতো।

অঞ্জনা নদী অতীত ইতিহাসের সাক্ষ্য- নদীয়ারাজ মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রও নৌপথে অঞ্জনা নদী বেয়ে মুর্শিদাবাদে পৌঁছতেন। নদী এখন খালের তকমা পেলেও ইদানীং সেই অস্তিস্ত্বটুকুও মুছে যাওয়ার জোগাড়।

অঞ্জনার তীরে এ গ্রামটির নাম গাংনী। কিছুটা দূরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চন্দনী গ্রাম, লোকে চেনে চন্দনদহ নামে। ঠাকুর পরিবারের আরও একটা জমিদারি তালুক। বর্ষাকালে কবি এখানে আসতেন অঞ্জনার যৌবন দেখতে। রবি কবি এখানেই লিখেছিলেনঃ
"আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা
আমাদের এই নদীর নাম অঞ্জনা
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে
আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।"

এখানে এসেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কবি নজরুল ইসলাম সহ অনেক লিজেন্ড।

নদী যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে স্থির হয়ে, জঙ্গল হারিয়ে সেখানে ধূসর জনপদ হয়ে। দূষন ঢেকে দেয় আকাশের গাঢ নীল কে, নৌকা আটকে যায় কচুরিপানায়। ঠিক তখন স্বপ্ন আসে ময়ূরপঙ্খী চেপে।
অঞ্জনার চলন কবিতার মত। কবিতা নয় বরং ছোটো গল্প বললে বেশ হয়। শেষ হয়েও যেন হয় না শেষ। যাত্রাপথ বেশী তো নয়। এই নদীতেই ঢেউ উঠতো বর্ষার দিনে। বাকী সময় শান্ত। দুপাশে শষ্যক্ষেত।

সময় কি করে বয়ে যায় কেউ জানে না। ইতিহাসের পাতায় পড়া ঘটনা যেন কত সাবলীল আমাদের কাছে। শতশত বছরের অঞ্জনার ইতিহাসে কাব্য খুঁজে বেড়াই আমরা, অস্তিত্বহীন নদীর যন্ত্রণা খুঁজি না।

আজও কোনো এক মেঘে ঢাকা সকালে বর্ণহীন নারীর রোম্যান্টিকতা লুকিয়ে রাখে আড়ালে, একান্তে, নিজের মধ্যে। প্রকাশ করবে সেই সাহস কোথায়! অঞ্জনাও তাই। পানি শুকিয়ে গেছে বুকের ভিতর, প্রতিবাদ করবে সে সাধ্যি কোথায় তার?

এখনও মেঘ করে অঞ্জনার আকাশে। বৃষ্টি হয়। শস্যে ভরে থাকে দু-পাড়ের জমি। নৌকা বাঁধা থাকে ঘাটে, হাঁস চড়ে বেড়ায় কচুরিপানা সরিয়ে, ছিপ দিয়ে মাছ ধরে কোনো এক প্রেমিক পুরুষ, কিন্তু অঞ্জনা আর জাগে না। নদীর ধারে কাশের বনে দোলা লাগে। কিন্তু অঞ্জনার মনে উৎসবের আঁচ লাগে না, সে জানে ছোটো হতে হতে একদিন শেষ অস্তিত্বটুকুও হারিয়ে যাবে সে ভূমিদস্যুদের রাখ্যুসে পেটে।

অঞ্জনার ইতিহাস বাংলাদেশের অসংখ্য নদীর ইতিহাসের মতোই করুণ। যেসব নদীতে একদা ঢেউ খেলতো, পালতোলা নৌকা চলতো- সেখানে এখন ইট পাথরের অট্টালিকায় বাস করে মানুষ নামের কীট!
--------------------------------------------------

একদা অঞ্জনার তীরবর্তী অঞ্চলগুলি যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল। যাতায়াত সুবিধা, জীবিকা, স্বাস্থ্যকর বায়ু। বাদকুল্লার মূলভাগ অঞ্জনা, জলঙ্গীর শাখানদী। কৃষ্ণনগর পৌর এলাকার বাগেন্দ্রনগর, রাষ্ট্রীয় বালিকা বিদ্যালয়, কুইন্স স্কুল ও জেলা শাসকের বাংলোর গা ঘেষে রোমান ক্যাথোলিক চার্চের সামনে দিয়ে বেজিখালি, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির প্রাচীর ছুয়ে রাজজামাতা দিঘি, চৌধুরি পাড়া, শক্তিনগর ও বারুহহুদার সীমানা দিয়ে দোগাছি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রবেশ করেছে। সেই পথ বেয়ে বাদকুল্লা জনপদের মধ্যে মিশে গেছে। পাটুলি, বল্লভপুর, অঞ্জনগড়, গাংনী, পূর্ববাদকুল্লা, চন্দনদহ প্রভৃতি গ্রামগুলি বাদকুল্লা এলাকার অঞ্জনা নদীর তীরবর্তী গ্রাম। অঞ্জনা সে অন্যদেশেরই হোক, সে বড় আপন, আপন পড়শি লাগে তাকে।

কবি মাইকেল মধুসূদন দও এই নদীর শোভা দেখে বলেছিলেন - "হে অঞ্জনা, তোমাকে দেখিয়া অতিশয় প্রীত হইলাম, তোমাকে কখনই ভুলিব না এবং তোমার বর্ণনা করিতে এূটি রাখিব না"।

কাজী নজরুল ইসলাম কৃষ্ণনগরে বসবাসের সময় অঞ্জনার রূপ দেখে মোহিত হয়েছিলেন এবং প্রেমিক কবি লিখেছিলেন - "নদীর নাম সই অঞ্জনা, নাচে তীরে খঞ্জনা..."।

অঞ্জনা নদী তথ্যঃ গুগল। (পাঠক নাই, তাই পুরনো লেখা চালিয়ে দিচ্ছি)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ পিতা-মাতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি নেই, তাই শূন্য লাগে

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৬

তোমার চলে যাওয়ার পর
ঘরে আর আলো জ্বালাই না,
অন্ধকারে নিজের মতো করে
সবকিছু চিনে নেই।

জানো, আজ সকালে চা বানাতে গিয়ে দেখলাম
চিনি শেষ,
ভাবলাম ঠিক আছে,
মিষ্টি না থাকলেও চা হয়।

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ
তোমার মতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল মাদ্রাসার দেয়াল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯



ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×