শিক্ষার দৈন্যতা.....
আপনার চারপাশের লোকজনকে পাঁচজন জীবিত বৈজ্ঞানিকের নাম করতে বলুন। এবার তাঁদের পাঁচজন বাংলাদেশী জীবিত শিক্ষাবিদের নাম করতে বলুন। (জীবিত কিন্তু জাফর ইকবালের নাম বললে চলবে না)। যদি বা তারা বলতে পারেন, তাহলে জিজ্ঞেস করুন এই বৈজ্ঞানিক এবং শিক্ষাবিদগন কি নিয়ে কাজ করেন। ডিটেল্স নয়, জাস্ট দুই এক লাইনে না হোক দুই একটা শব্দে বললেই পাস।
এবার জিজ্ঞেস করুন পাঁচজন বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম। পাঁচজন ক্রিকেটারের নাম। টিকটক অপু/হৃদয়ের সাথী সংগীদের চৌদ্দপুরুষের নাম-দেখবেন, শুধু নাম নয়, কার কি দক্ষতা, কে কার সাথে প্রেম করে, সব বলে দেবে। বলে দেবে ক্যাটারিনা কাইফের বগলে কি ক্রিম লাগায়, কারিনা কাপুর কি সাবান দিয়ে গোসল করে, আলিয়া ভাটের সম্ভাব্য সন্তান কবে কখন জন্ম নেবে....
জিজ্ঞেস করুন, জী বাংলায় দিনে কয়টা সিরিয়ালে কত নাম্বার সিরিয়াল চলছে- শিশু কিশোর থেকে শুরু করে গৃহকর্ত্রী গৃহকর্মী সবাই ঠ্যা ঠ্যা মুখস্ত বলে দেবে।
বিজ্ঞান আটকে আছে পরীক্ষার নম্বর, উচ্চ মাধ্যমিকের সায়েন্স স্ট্রীম, গ্রেড, ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ, পে প্যাকেজ, আর আইটি ইন্ড্রাস্ট্রিতে। এর বাইরে বিজ্ঞান নেই। ইয়েস স্যার এবং ম্যাডাম, এটাই বাস্তব। এমনকি বিজ্ঞানের স্টুডেন্টরাও বিজ্ঞানের মৌলিক দর্শন জানে না, বিজ্ঞানের ইতিহাস পড়ে না, ফলসিফকেশন কাকে বলে জানে না, হাইপোথেসিস কাকে বলে জানে না।
তাই, চারদিকে এত অবৈজ্ঞানিক চিন্তার রমরমা কেন, সেটা নিয়ে হা-হুতাশ করে লাভ নেই। বিজ্ঞান-মনস্কতা কঠিন অধ্যবসায়ে অর্জনের জিনিষ। সিক্স প্যাকের মত। অর্জনের পরেও নিয়মিত ঘষামাজায় ধরে রাখতে হয়। অবৈজ্ঞানিক চিন্তা হলো ইমোশনাল প্রোডাক্ট, সেটা বাই ডিফল্ট গজায়, ভুঁড়ির মত। তাই তার উদযাপনও সহজ, কেন না তা মনকে একপ্রকারের আরাম দেয়।
আরামের ভুঁড়ি ছেড়ে পরিশ্রমের সিক্স প্যাকের দিকে আমাদের উৎসাহ নেই। সেটা মানুষের দোষ নয়, কেন না স্কুল-কলেজে, সামাজিক ক্ষেত্রে সেই মানসিকতা গড়ে তোলার পরিকাঠামোও নেই, আয়োজনও নেই।
জীবনের সঙ্গে বিজ্ঞান, শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির যোগ যতদিন না ওতপ্রোত হবে, ততদিন এই ট্র্যাডিশন সমানে চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



