ধর্মীয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন.....
সনাতন ধর্মাবলম্বী আমার দুইজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছেন। একজন দেবু, আমার বাল্যবন্ধু- যার কথা বিভিন্ন সময় আমি স্যোশাল মিডিয়ার লিখেছি। আমরা স্কুল কলেজে একসাথে পড়িনি কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সহপাঠী(সাবজেক্ট/ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন)। বর্তমানে একটি বহুজাতিক কোম্পানির বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান পদে কর্মরত। দেবুর বাবা ছিলেন আমার বাবারও বন্ধু। আমাদের দুই পরিবারের সম্পর্ক শতবর্ষী। দ্বিতীয়জন আমাদের প্রতিবেশী একই বিল্ডিংয়ে ফ্রন্টডোড় নেইবার। বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট। আমি যখন ঢাবি থেকে মাস্টার্স পাশ করি তখন তিনি ঢাবিতে আইন বিভাগে ভর্তি হন। পাস করেই হাইকোর্টে প্রাক্টিস শুরু করেন এবং সহকারী এটর্নি জেনারেল থেকে তরতরিয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল। হয়তো শীঘ্রই হাইকোর্টের বিচারপতি হবেন। ১৫ বছর আমরা প্রতিবেশী। আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। পারস্পরিক সুখ দুঃখের সহমর্মি। সম্পুর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের হয়েও আমার বিরুদ্ধে দুটি মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেতে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন, যেখানে আমার দলের ব্যারিস্টার সাহেবেরা চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় আমার মামলা নেয়নি। এই দুই পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের পারস্পরিক সকল সামাজিক, ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানে পরস্পর একই পরিবার হয়ে যাই।
দেবুর স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে অনার্স-মাস্টার্স। পার্ফেক্ট গৃহীনি সে-ই সংগে কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন পালনকারী। একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার- এককথায় নাস্তিক। দেবুও ধর্মকর্মে তেমন সিরিয়াস না। অন্যদিকে প্রতিবেশী বন্ধুর স্ত্রী ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স। দেশ সেরা একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দুই সন্তানের একজন সদ্য কলেজ, ছোট জন স্কুল গোয়িং। এই পরিবারের সবাই কট্টর ধর্মীয় অনুশাসন বিধিবিধান পালন করেন। আবার অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এই দুই পরিবারের সবাই হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, ইসকন এবং মোদির ইন্ডিয়াকে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী মনে করেন। সব চাইতে মজার ব্যাপার হলো- দুই বন্ধুই মনে করেন 'হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ' একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন এবং আমাদের দেশে যতগুলো সাম্প্রদায়িক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার বেশীরভাগের জন্যই একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন এবং সহযোগিতা রয়েছে... (সেই দলটির নাম বলা যাবে না)
উল্লেখ্য দুটি পরিবারের পারিবারিক সামাজিক অবস্থান প্রকাশ করার কারণ হলো- এই দুটি পরিবারই অত্যন্ত আধুনিক মনস্ক হয়েও ধর্মীয় অনুশাসনে কতটা শ্রদ্ধাশীল, উচ্চ শিক্ষিত মেধাবীরই কেবল ধর্মের মাধুর্য বুঝতে পারে এবং তাদের পূর্বপুরুষের পারিবারিক কিছু ঐতিহ্য এখনো অত্যন্ত যত্নের সাথে পালন করছেন সেটা বলার জন্যই।

ছেলে বেলায় আমাদের অনেক মুসলিম পরিবারেও পিতল কাসার তৈজসপত্র ব্যবহার করতেন। আমাদের বৃহত্তর যৌথ পরিবারে প্রত্যকের জন্য আলাদা আলাদা পিতলের প্লেট, গ্লাস থাকতো। আবার সেইসব প্লেট গ্লাসে নাম খোদাই করা থাকতো। মুসলমান সম্প্রদায়ের সেই পিতল কাসার ব্যবহার হারিয়ে গিয়েছে আধুনিক সিরামিক পোরসেলিনের তৈজস পত্রের কাছে। কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বী আমার দুই বন্ধুদের বাড়িতে এখনো পিতল কাসার তৈজসপত্র ব্যবহার করা হয় প্রত্যাহিকতায় অত্যন্ত যত্নের সাথে। আরও মজার ব্যাপার ওদের ঘরে অত্যন্ত দামী ডাইনিং টেবিল থাকলেও ওরা বাড়িতে পরিবারের সবাই একত্রে খাবার খায় ফ্লোরে বসে। এমনকি এই ঢাকা শহরে কলাপাতার ব্যবহারও আছে!

কয়েক দিন আগে অন্যান্য বছরের মতো এবছরও রাখীবন্ধন উপলক্ষে আমাদের দাওয়াত দিয়ে দুই বৌদি আমার হাতে রাখী পরিয়ে দিয়েছেন। প্রতিবেশী দাদার মেয়ে আমার ছেলেদের হাতে রাখী পরিয়ে দিয়েছে পরম শ্রদ্ধা ভালোবাসা সম্মান দিয়ে।

সনাতন ধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি শুভ জন্মাষ্টমী। হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী পালন করেন। দ্বাপর যুগের শেষ দিকে মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
হিন্দু পুরান মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টম তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের আরও বিশ্বাস, দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের মাঝে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেন।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ আমাদের দাওয়াত ছিলো দেবুর বাড়িতে এবং প্রতিবেশী দাদার ফ্ল্যাটেও।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




