এরিক ফ্রমের ধর্ষকাম:
Erich Fromm তার "Fear of freedom or Scape from freedom" বইয়ে ধর্ষকামী এবং মর্ষকামী চরিত্র নিয়ে দারুণ কিছু কথা বলেছেন। মর্ষকামীর চেয়ে ধর্ষকামী চরিত্র বেশি ইন্টারেস্টিং, তাই এটা তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারলাম না।
উনি বলছেন, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা মূলত ধর্ষকামী মনস্তাত্ত্বিক চরিত্র থেকে উৎপন্ন হয়। এই ধর্ষকামী চরিত্র তিন ধরনের:
(এক). এক ধরনের ধর্ষকামী চরিত্র অন্যদের তার নিজের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে। অন্যদের ওপর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আরোপ করে। জনগণকে নাচের পুতুলে পরিণত করে।
(দুই). আরেক ধরনের ধর্ষকামী চরিত্র শোষণ করে।
(তিন). তৃতীয় ধরনের ধর্ষকামীরা অন্যদের নিরন্তর ভোগান্তিতে রাখে। ধর্ষকামীরা, মর্ষকামীদের থেকে তুলনামূলকভাবে কম সচেতন হয় এবং নিজেদের কাজকে "Justify" বা যৌক্তিক করে তোলে।
উদাহরণ দিয়ে লিখেছেন, যেমন কোন ধর্ষকামী নেতা এই মনোভাব পোষণ করতে পারে যে, যেহেতু আমি জাতির কাছ থেকে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছি, কাজেই জাতির ওপর প্রতিশোধ আমিই নিতে পারি!
মনোবিজ্ঞানে নিষ্ঠুরতা দুই প্রকারঃ মর্ষকামী ও ধর্ষকামী। প্রথমোক্ত জনেরা নিজেরাই নিজেদেরকে কষ্ট দেয়, যণ্ত্রণা দেয়- তাতে সে আনন্দ পায়। এমনও হয়, নিজেকে কষ্ট দিতে দিতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে- তখন কষ্ট দেবার জন্য কারো সাহায্য প্রার্থনা করে। যারা আত্মহত্যা করে বা করার আকাঙ্খা পোষন করে- তারা এ'দল ভূক্ত।
আর ধর্ষকামী যারা, তারা আনন্দ পায় অপর কাউকে কষ্ট দিয়ে। মানুষের এ' দু'টো বৈশিষ্ঠ্যই মনোরোগের আওতায় পড়ে। উক্ত দু'শ্রেণির মানুষই পৃথিবীতে প্রচুর রয়েছে। স্বজন-বন্ধুদের অগোচরেই এ'দের দ্বারা মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে যায়। দূর্ঘটনা ঘটার পূর্বে এ'রোগ গুলোকে চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব। আপাত দৃষ্টিতে দেখে কেউই এদের মাঝে কোন অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাবে না। আর দশটি মানুষের মতোই ওদের চলাফেরা-খাওয়া দাওয়া-সামাজিকতা।
এবার একটি দেশটির দিকে তাকাই।
মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে দেশটিতে। এ'অচলাবস্থা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, চারিত্রিক ইত্যাদি ইত্যাদির। আমরা সবাই এ' রোগ দু'টোতে আক্রান্ত। কেউ মর্ষকামী আর বাকী সকলে ধর্ষকামী। ধর্ষকামী যারা, তারা হেসে হেসে বাসে, গাড়ীতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে মানুষ পুড়ছে। একজন আরেকজনকে পিটিয়ে হত্যা করছে। যে শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায় ছিলো, তাকেও ওরা ছাড়েনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপরাধ মানুষ ধরে পিটিয়ে পিটিয়ে অর্থ দাবী করে, পর্যাপ্ত অর্থ না পেলে গুলি করে মেরে ফেলে। রাজনৈতিক গোয়ার্তুমির কারনে অবাধে বিরোধী পক্ষকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।
আর বাকী যারা, আমরা সাধারণ জনগণ, খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমিক, মজুর সবাই মর্ষকামী। অর্থাৎ নিজেরাই নিজেদের অত্যাচার করতে ভালোবাসি- নিজেদের কষ্ট পাবার পথ সুগম করে দেই। আমরাই ধর্ষকমীদের ক্ষমতা দেই নিজেরা নির্যাতনের শিকার হতে। আমরা সকলেই রোগে আক্রান্ত। আমাদের সুচিৎসার প্রয়োজন।
ধর্ষকামী- মর্ষকামী উভয় রোগের আশু উপশম প্রয়োজন। দুঃখের বিষয়, যেখানে সকলেই রোগী- সেবক হবে কে?
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




