somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

কাকতালীয়.....

২৩ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাকতালীয়.....

"একদা একটি কাক তাল গাছে বসিবামাত্র একটি পাকা তাল বৃন্তচ্যুত হইয়া মাটিতে পড়িল। কাক ভাবিল, সকলে ভাবিল কাকের ভার সহ্য করিতে না পারিয়া তাল ভূপাতিত হইল। আসলে পাকা তালটি ঠিক সেই সময়েই পড়িত- কাক না আসিলেও পড়িত"- এটাই "কাকতালীয়"- যা আমরা স্কুল জীবন থেকেই শুনে আসছি।
উল্লেখ্য দুটো একই সঙ্গে ঘটা ভিন্ন ঘটনাকে আপাতপক্ষে সম্পর্কযুক্ত মনে হলেও, তা কিন্তু নয়। একে দৈবশক্তির প্রভাব, ভাগ্যের ফের, টেলি-প্যাথি, যোগ, জাদু..... ইত্যাদি ইত্যাদি বলে কেউ কেউ প্রচার করেন ঠিকই, কিন্তু গনিতবিদরা সম্ভ্যাবতার সূত্র দিয়ে আর পদার্থবিদরা সম্পর্ক- শৃঙ্খলা সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন যে প্রতি দশ লক্ষ ঘটনায় এরকম কাকতালীয় ঘটনা একটা ঘটতে পারে।

বাস্তব জীবনে আমাদের কারো কারো এ রকম ঘটনার অভিজ্ঞতা আছে। আপনি হয়তো একা বসে কারো কথা ভাবছেন; ঠিক সেই সময় ঐ ব্যক্তি যদি আপনার সামনে এসে দাঁড়ায়? কিংবা ধরুন, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ভাবতে ভাবতে আসছেন- রাত্রে খিঁচুড়ির সঙ্গে ডিম ভাজি, বেগুন ভাজি হলে......বাড়ি ফিরে রাতে খাওয়ার সময় আশ্চর্যজনকভাবে ঐ পদগুলোই দেখলেন। না, ম্যাজিক নয়, কাকতালীয় এটা। জানজট বা অন্য কোন কারনে যে গাড়িটি ধরা যায়নি, সেটাই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে - এ তো হামেশাই ঘটে। ছেলেবেলায়, মানে রেডিওর যুগে, বেশ কয়েকবার মনে মনে যে গান গুনগুনিয়ে গাইতে গাইতে রেডিও চালু করেছি, শুনেছি সেই গানটাই সম্প্রচার হচ্ছে!

পৃথিবীতে এরকম চমকপ্রদ কাকতালীয় ঘটনা অনেক আছে- যা হয়তো আপনাদের অনেকেরই জানা। তবুও তার মধ্যে যে কয়েকটা বহুল আলোচিত- সেগুলো থেকে কয়েকটি উল্লেখ করছিঃ-

(১) ১৮৩৫ সালে, হ্যালির ধুমকেতুর আবির্ভাবের দিনটিতে (৩০/১১/১৮৩৫)জন্ম হয় বিখ্যাত কবি মার্ক টোয়েনের। কবি হাসির ছলে বলেছিলেন- হ্যালি আবার আসবে তাঁকে নিয়ে যেতে। ১৯১০ সালে সেই ধুমকেতু আবার দেখা দিয়েছিল আর সত্যিই মহান কবির মৃত্যু সেই বছরেই হয়েছিল।

(২) আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন ও ৩৫ তম প্রেসিডেন্ট জন্ এফ্ কেনেডির মধ্যে মিলটা খুব আশ্চর্য্যের- (ক) দুজনেরই নাম সাত সংখ্যার(Lincoln & Kennedy), (খ) লিঙ্কন মার্কিন কংগ্রেসে নির্বাচিত হন ১৮৪৬ সালে, কেনেডি ১৯৪৬ সালে, (গ) লিঙ্কন প্রেসিডেন্ট হন১৮৬১সালে, কেনেডি ১৯৬১এ। (ঘ) দু- জনকেই হত্যা করা হয় শুক্রবারে, মাথায় গুলি করে, (ঙ) লিঙ্কনের সেক্রেটারি ছিলেন মিঃ কেনেডি, যিঁনি ওদিন (১৫/৪/১৮৬৫) লিঙ্কনকে ওই থিয়েটারে যেতে বারন করেছিলে। আবার কেনেডির সেক্রেটারি ছিলেন মিঃ লিঙ্কন, যিঁনি ওদিন(২২/১১/১৯৬৩) কেনেডিকে ডালাস যেতে বারন করেছিলেন। কেউ কথা শোনেননি, পরিনতিতে মৃত্যু। (চ) লিঙ্কনের হত্যাকারী - John Wilkes Booth এর জন্ম ১৮৩৯ সালে আর কেনেডির হত্যাকারী- Lee Harvey Oswald এর জন্ম ১৯৩৯ সালে। না, এখানেই শেষ নয়। (ছ) আব্রাহাম লিঙ্কনের পরে প্রসিডেন্ট হন এন্ড্রু জনসন যাঁর জন্ম ১৮০৮ সালে আর কেনেডির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট- লিয়েন্ডার জনসনের জন্ম ১৯০৮ সালে। ঠিক ১০০ বছরের গেরো। কি অদ্ভুত মিল!

কাকতালীয় ঘটনার সঙ্গে অলৌকিকত্ব, দৈব বা গ্রহ- নক্ষত্রযোগ যাঁরা খুঁজবেন, তাঁদের বলবো- বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলে এটা একটা chance factor /probability ছাড়া কিছুই নয়। আমি পরীক্ষায় পাশ করবো কিনা- এতে মাত্র দুটো সম্ভাবনা- হাঁ অথবা না। পরীক্ষায় কত শতাংশ নাম্বার পাবো- এর জন্য দরকার সর্বাধিক ১০১ টা সম্ভাবনা। কাকে আর তালে মিলে গেলেই হয়ে গেল কাকতালীয়।

(৩) ব্রিটিশ প্রমোদ জাহাজ টাইটানিক ডুবেছিল ১৯১২ সালের ১৫ ই এপ্রিল। জানেন কি, এর ১৪ বছর আগেই মার্কিন সাহিত্যিক মর্গ্যান রবার্টসন তাঁর লেখা Futility বইতে ঠিক ওইভাবেই ডুবন্ত হিমশৈলে ধাক্কা লেগে যে জাহাজডুবির গল্প লিখেছিলেন সেই জাহাজের নাম দিয়েছিলেন টাইটান! এবং গল্পের টাইটান ও বাস্তবের টাইটানিক ডুবে যাওয়ার মাসটাও মিলে গেছে- সেই এপ্রিল! এটাই কাকতালীয়।

(৪) ইটালির রাজা Umberto- 1 ২৮/৭/১৯০০ তারিখে ডিনারের জন্য একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকে অবাক হয়ে যান, কারন ওই রেস্তোরাঁর মালিকের চেহারা হুবহু তাঁরই মতন। যেন নিজেকে আয়নায় দেখছেন। কৌতুহল বশতঃ আলাপ করে জানতে পারেন ওই মালিকের নামও Umberto, তুরিন শহরেই দুজনেরই জন্ম একই দিনে- ১৪ই মার্চ্চ, ১৮৪৪। দুজনেরই স্ত্রীর নাম মার্গারিটা, বিয়ের তারিখটাও এক। রাজা যেদিন(৯/১/১৮৭৮) সিংহাসনে বসে দেশসেবার শপথ নেন, সেদিনই রেস্তোরাঁটির উদ্বোধন করেন তার মালিক। দুজনের আলাপ হওয়ার পরের দিনই(২৯/৭/১৯০০) ওই রেস্তোরাঁর মালিককে অজ্ঞাত আততায়ীরা হত্যা করে। খবরটা রাজার কানে আসার পর সেদিনই এক জনসভায় যখন এই হত্যার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিচ্ছিলেন রাজা, তখন তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

(৫) Nevada ও Arizona র সীমানায় colorado নদীর গতিপথে দুটি পাহাড়ের খাঁজে কংক্রিটের দেওয়াল তুলে তৈরী হয় হুবার ড্যাম। আমেরিকার এই প্রোজেক্টের কাজ চলেছিল ১৯২২ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল অবধি। দুর্গম অঞ্চলে এই নির্মানকালে ১১২ জন শ্রমিক, কর্ম- চারীর মৃত্যু হয়। প্রোজেক্টের প্রথম বলি ছিলেন J.G. Tierny - তারিখ ২০/১২/১৯২২। এর ঠিক তের বছর পরে, ২০/১২/১৯৩৫ এ, তাঁরই পুত্র Patrick Tierney হলেন ওই প্রোজেক্টের শেষ শহীদ। দুঃখজনক কাকতালীয় ঘটনা, তাইনা?
এবারে আসি সেই কাকতালীয় ঘটনায় যা বিশ্বের এক নাম্বার হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। জমজ সন্তানদের নিয়ে অনেক গল্পই তো চালু আছে। কিন্তু এই ঘটনাটার বিশে- ষত্বতার বহুমুখী সামঞ্জস্যর কারনে- সেটাই এবার বলি।

(৬) আমেরিকার ওহিওতে দুই জমজ শিশুর জন্ম হয়- দুজনেই পুত্রসন্তান। জন্মের পরেই কোন কারনে নিজের জন্মদাতা পিতা- মাতার থেকে আলাদা হয়ে দুটো আলাদা পরিবারে দত্তক পুত্র হিসাবে বড় হয়ে ওঠে ওরা। এই দুটি পরিবার কিন্তু পরষ্পরের সম্পূর্ণ অপরিচিত। ৪০ বৎসর পরে ঘটনা ক্রমে(দুজন একই রকম দেখতে- সেই সুবাদে) যখন দুই ভাই এর আকষ্মিক মিলন হয় এবং তাদের জন্ম ইতিহাস প্রকাশ পায় তখন আশ্চর্য্যের সঙ্গে দেখা যায়- দুজনেরই নাম রাখা হয়েছে জেমস, দুজনেই আইনজ্ঞ, দুজনেরই স্ত্রীর নাম লিন্ডা, দুজনেরই দুটি করে পুত্রসন্তান এবং তাদের নামও এক- James Alan ও James Allan. দুই জমজ ভাই এর একই সময়ে স্ত্রী লিন্ডার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে এবং পুনর্বিবাহের পর দুজনেরই দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম বেট্টি। এখানেই শেষ নয়, দুজনেরই একটি করে পোষা কুকুর ছিল, আর তাদের নামও এক- Toy.

পরিশেষে বলি, কাকতালীয় সবসময়ই কাকতালীয়।
অন্য কিছু নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০০
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইনকিলাবের বীজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪


সদ্য শিশু জন্ম নিয়ে সদ্য খুলেছে আঁখি,
মা বলে, কথা দাও বাছা—হাদি হবে নাকি?
শিশুর মুখে কান্নার রোল, হাদি হবার দায়,
বাবা বলে, এই তো হাদি—বুকে আয়, বুকে আয়।

ঘরে ঘরে আজ হাদির... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৭


গত মে মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফটোকার্ডে দেখানো হয়েছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখন পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। গত ১১... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দ কুতুবের পোষ্ট: ভারতের করণীয় কি কি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৩



বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য ভারতের করণীয় কি কি?

০) শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো।
১) বর্ডার থেকে কাঁটাতারের ফেন্চ তুলে নেয়া।
২) রাতে যারা বর্ডার ক্রস করে, তাদেরকে গুলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×