ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি খণ্ডিত সেবা চিত্র....
আমরা সবাই জানি- সিটি করপোরেশন(সিটি চোরকর্পোরেশন নাম হওয়া উচিৎ) এলাকার বাড়ি/ফ্ল্যাট মালিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। ২০১৫ সন পর্যন্ত বাড়ি/ফ্ল্যাট মালিক/প্রতিনিধি সিটি কর্পোরেশন অফিসে হাজির হয়ে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হতো। চার কোয়ার্টার(প্রতি তিন মাসে এক কোয়ার্টার)। যদি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে এক বছরের আগাম ট্যাক্স পরিশোধ করে তাহলে ১০% রেওয়াত পাওয়া যায়। আবার বছর পার হয়ে গেলে ১০% জরিমানা সহ ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। ট্যাক্স পরিশোধ করতে গেলে ট্যাক্স অফিসার এবং ক্লার্ক নানাবিধ হয়রানি করতো। অজুহাত ছিলো- "রেভিনিউ অফিসার নাই/ ইনস্পেক্টর সাইট ভিজিটে গেছে কাল আসেন/পরশু আসেন...."- ওদের কথামতো কাল/পরশু যেয়ে শুনবেন- "ইনস্পেকটর ছুটিতে গেছে/ ক্লার্কের শাশুড়ি মারা গেছে / অমুকের অসুর হাসপাতালে গেছে...."- আপনি চিল্লাচিল্লি করে কোনো ফল পাবেন না। আসল কাহিনী হলো আপনি ফ্ল্যাট প্রতি কমপক্ষে ২০০/- ধরিয়ে দিলে বলবে- "কাল এসে ট্যাক্স পরিশোধ রিসিট নিয়ে যাবেন"! যদি ৩০০/- ৪০০/- দেন তাহলে সাথে সাথে ট্যাক্স পরিশোধ রিসিট দিয়ে দিবে।
২০১৫ সন থেকে সিটি কর্পোরেশন অফিস থেকে ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ বই সরবরাহ করা হতো। সেই বইয়ের ট্যাক্স ফরম গ্রাহকদের পুরন করে সিটি কর্পোরেশন অফিসে যেয়ে ট্যাক্স এর টাকা নগদ/চেক দিয়ে ডিপোজিট করতে হতো। সমস্যা এখানেও। আপনি যতই নিখুঁত ভাবে, নির্ভুলভাবে ট্যাক্স ফরম পুরন করে নিয়ে যাবেন- ওরা কোনো না কোনো খুঁত বের করে ২/৩ দিন ঘুরাবে। কিন্তু আগের রেইটে বখশিশ এর নামে ঘুষ দিলে কোনো সমস্যা নাই!
আমি ঢাকা উঃ-ডঃ দুই সিটি কর্পোরেশন এরই ট্যাক্স হোল্ডার হলেও শুধু উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর অভিজ্ঞতা বর্ননা করছি। উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর রেভিনিউ অফিস কাওরান বাজারে অবস্থিত। এই অফসের দ্বিতীয় তলায় এলাকা ভিত্তিক গ্রাহকদের জন্য একজন ইনস্পেকটর এর সামনে একটা মাত্র প্লাস্টিকের চেয়ার... এক রুমে ৮ জন ইনস্পেকটর, একজন ক্লার্ক, সিলিং ফ্যান দুইটা। শতশত গ্রাহক অফিস পেরিয়ে বারান্দা-সিড়িতে দাঁড়িয়ে। কোথাও বসার যায়গা নাই। তার উপর গ্রাহকেরা সবাই কমবেশি কর্মব্যস্ত। একটা দিনে অনেক কিছু করতে হয়। আপনি কয়দিন সব কাজ ফেলে সিটি কর্পোরেশন অফিসে দাঁড়িয়ে থাকবেন! অতএব আপনি বাধ্য হয়ে সিটি শুয়ারদের চাহিদা মতো ঘুষ দিয়ে ট্যাক্স পরিশোধ করতে বাধ্য।
উপরে উল্লেখ্য সমস্যা সমাধানের জন্য পৃথিবীর একমাত্র ডিজিটাল দেশ- "ডিজিটাল বাংলাদেশ" এর মশহুর উঃ-দঃ দুই নারদ মহোদয় সারম্বরে উদ্বোধন করেন অনলাইন ট্যাক্স পেমেন্ট সিস্টেম। আমরা সবাই হাফ ছেড়ে নিঃশ্বাস নিতে না নিতেই নাভিশ্বাস!
গতবারের ট্যাক্স পরিশোধ রিসিট এবং টাকা দিয়ে কেয়ার টেকারকে পাঠিয়েছিলাম চলতি অর্থ বছরের ট্যাক্স পরিশোধ করতে। পাক্কা চার ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অনলাইনে ট্যাক্স পরিশোধ করার নিয়ম জেনে এসেছে....
অনলাইনে ট্যাক্স পরিশোধ করার নিয়মঃ- সকালে ট্যাক্স অফিসে যেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবেন। নয়টায় অফিস শুরু হলেও সিটি চোরপর্রেশনের কত্তারা এসে পৌঁছবেন সাড়ে দশটা এগারোটা নাগাদ। এসে চা পানি খেয়ে আয়েসি ভংগিতে একজন একজনকে কম্পিউটার থেকে একটা হোল্ডিং আইডি নম্বর দিবেন। সেই নম্বর নিয়ে আর এক টেবিলে যাবেন। সেই টেবিল থেকে আপনাকে একটা ফরম দিবে। সেই ফরম আপনি পুরন করে আর একটা টেবিলে জমা দিবেন। তিনি একজন কম্পিউটার অপারেটর/টাইপিস্ট। তিনি আপনার পুরন করা তথ্যউপাত্ত কম্পিউটারে টাইপ আপনাকে একটা টোকন দিবে। সেই টোকেনে লেখা আছে আপনাকে কোন কোয়ার্টার পর্যন্ত কতো টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। সেই পরিমাণ টাকা নিয়ে ডাচ্ বাংলা/ মধুমতি ব্যাংকের নির্দিষ্ট বুথে জমা দিয়ে ডিপোজিট স্লিপ নিবেন(কোনো রেভিনিউ অফিসারই ডাচ বাংলা ব্যাংক রেফার করেনা, সবাইকে মধুমতি ব্যাংকে রেফার করে। কারণ, মধুমতি ব্যাংকের মালিক দঃ নারদ)। তবে হ্যাপা কিন্তু ২ কর্মদিবসের!
অতএব, সিস্টেম আপনাকে বাধ্য করবে বিকল্প পথে হাটতে.... সহজ সমাধানঃ ক্লার্কের হাতে ৫০০/- একটা নোট ধরিয়ে দিন(আগে এনালগ সিস্টেমে ২০০/৩০০ টাকা দিলেই হতো, এখন ডিজিটাল সিস্টেমে ৫০০/- দিবেননা কেন?), আপনার কিছুই করা লাগবেনা, ট্যাক্সের টাকাটা ওদের হাতে দিয়ে দিন, ঘন্টা খানিক পরে মানি রিসিট নিয়ে বাসায় ফিরবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



