somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

অ্যারামিন্টা রস্‌........

২৬ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অ্যারামিন্টা রস্‌........

দাস প্রথার আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে আমাদের দেশের চা শ্রমিক। চা শ্রমিকদের এই দাস প্রথা থেকে মুক্তির জন্য চাই একজন অ্যারামিন্টা রস্‌........

নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে - মেয়েটার নাম অ্যারামিন্টা রস্‌। কুচকুচে কালো। কুৎসিত। আমেরিকার ক্রীতদাস পরিবারে জন্ম। তাই ইতিহাসে ওর জন্মের কোনো দিন নেই, জন্মের কোনো সালও নেই। তারপরও সাদা প্রভূরা বেজন্মা দাসদের একটা জন্ম তারিখ, সন দিয়ে দাস/দাসী হিসেবে নিবন্ধন করে হিসাব মেলাতে। জন্ম যখন যেখানে যেভাবেই হোক, অ্যারামিন্টা রস্‌ এর বাপ-মা-ভাই-বোন সবাই কোনো-না-কোনো সাদা প্রভুর দাস। অ্যারামিন্টাও বিক্রি হয় এ হাত থেকে ও হাতে। ছোটবেলায়, সাদামালিকের ছোঁড়া এক ধাতব বলের আঘাতে ওর মাথা ফেটে যায়। তারপর থেকে ওর শুধু ঘুম পায়। ঘুম পায় বলে নিরন্তর চাবুক খায়। তাও ঘুম পায়। শীত হোক কী গ্রীষ্ম, অ্যারামিন্টা মোটা-মোটা জামা পরে, তাতে যদি চাবুকের মারগুলো একটু কম লাগে!

কিন্তু ওই মাথায়-আঘাতের পর থেকে ও কীসব যেন চোখের সামনে দেখে। কেমন আলো-আলো, ধোঁয়া-ধোঁয়া। ইনিই কি ঈশ্বর হয়ে তাকে দেখা দেন? এই ‘Oppressed, Heartless, Soulless’ পৃথিবীতে এইটুকু ঈশ্বরকে অ্যারামিন্টার বড্ড দরকার।

হওয়ার কথা ছিল না, কিন্তু নানা ঘটনার ফেরে অ্যারামিন্টার বিয়ে হতে পারল এক ফ্রি-ব্ল্যাক পুরুষের সঙ্গে। বিয়ের পর যেমন সব মেয়েরই পদবী বদলায়, তেমনি, ‘রস’ বদলে হয় টুবম্যান’। কিন্তু অ্যারামিন্টা নিজের নামটাও ঘষে-ঘষে তুলে দেয় যেন। নিজের নতুন নাম নেয়, ‘হ্যারিয়েট’। এবার মুক্তি, এবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন। কিন্তু ও কীসের স্বপ্ন দেখবে? হ্যারিয়েট সমস্ত কালো-মানুষের, সমস্ত ক্রীতদাসের মুক্তির স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ওর চোখে তখনও কেমন আলো-আলো, ধোঁয়া-ধোঁয়া।

কিছুদিন পর থেকেই দেখা যায়, আমেরিকা-জুড়ে সাদাপ্রভুদের খামার থেকে একের-পর-এক উধাও হয়ে যাচ্ছে বন্দী কালো ক্রীতদাসেরা। আমেরিকার আইনে এ কাজ তখন কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুলিশ তোলপাড় করে ফেলছে দেশ, কিন্তু উধাও হওয়া থামছে না। কেউ বলে, প্রোফেট মোজেস এসেছেন আর একবার। কেউ বলে, খামারবাড়িগুলোয় ভূত দেখা গেছে, নিজের চোখেই নাকি দেখেছে তারা!

টুবম্যানের গল্প আপনারা সবাই জানেন। তাও, মনে হল, এক কালো মেয়ের আরাধনার দিনে আর-এক কালো মেয়ের স্মৃতি আজ আমাদের পাশে থাক। হ্যারিয়েট টুবম্যান (১৮২০- মৃত্যু ১০ মার্চ, ১৯১৩) ছিলেন একজন ক্রীতদাস নারী, স্বাধীনতাকামী, আন্ডারগ্রাউন্ড রেলপথ কন্ডাক্টর, উত্তর আমেরিকার ১৯ শতকের কৃষ্ণাঙ্গ কর্মী , গুপ্তচর, সৈনিক এবং নার্স যিনি গৃহযুদ্ধের সময় এবং তার সমর্থনের জন্য তার সেবার জন্য পরিচিত। নাগরিক অধিকার এবং নারীর ভোটাধিকার।

টুবম্যান ইতিহাসের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে একজন এবং তার সম্পর্কে অনেক শিশুর গল্প রয়েছে, তবে সেগুলি সাধারণত তার প্রাথমিক জীবনকে চাপ দেয়, দাসত্ব থেকে পালাতে এবং ভূগর্ভস্থ রেলপথের সাথে কাজ করে। তার গৃহযুদ্ধের সেবা এবং যুদ্ধের পরে তিনি বেঁচে থাকা প্রায় 50 বছর ধরে তার অন্যান্য কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কম পরিচিত।

টুবম্যানের সাংগঠনিক ক্ষমতা আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোডের সাথে তার কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, দাসত্বের বিরোধীদের একটি নেটওয়ার্ক যা স্বাধীনতাকামীদের পালাতে সাহায্য করেছিল। Tubman ছিল মাত্র 5 ফুট লম্বা, কিন্তু তিনি স্মার্ট এবং শক্তিশালী ছিলেন এবং একটি রাইফেল বহন করেছিলেন। তিনি এটি ব্যবহার করেছিলেন শুধুমাত্র দাসত্বের পক্ষের লোকদের ভয় দেখানোর জন্য নয় বরং দাসত্ব করা লোকদেরকে পিছিয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতেও। রেলপথ সম্পর্কে "মৃত নিগ্রোরা কোন গল্প বলে না" ছেড়ে যেতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে এমন কাউকে তিনি বলেছিলেন।

টিউবম্যান যখন প্রথম ফিলাডেলফিয়া পৌঁছেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন, সেই সময়ের আইন অনুসারে, একজন স্বাধীন মহিলা, কিন্তু 1850 সালে পলাতক ক্রীতদাস আইনের পাস তাকে আবার একজন স্বাধীনতাকামী করে তুলেছিল। সমস্ত নাগরিক তাকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে বাধ্য ছিল, তাই তাকে শান্তভাবে কাজ করতে হয়েছিল। কিন্তু তিনি শীঘ্রই উত্তর আমেরিকার ১৯ শতকের কালো কর্মী চেনাশোনা এবং মুক্তমনা সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

পলাতক ক্রীতদাস আইন পাশ হওয়ার পর, টুবম্যান তার ভূগর্ভস্থ রেলপথের যাত্রীদের কানাডায় নিয়ে যেতে শুরু করে, যেখানে তারা সত্যিকার অর্থে মুক্ত হতে পারে। ১৮৫১ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত, তিনি বছরের কিছু অংশ কানাডার সেন্ট ক্যাথরিনস এবং নিউ ইয়র্কের অবার্নে বসবাস করতেন, যেখানে উত্তর আমেরিকার ১৯ শতকের অনেক কালো কর্মী বসবাস করতেন।

আজ আমরা জানি, গোটা আমেরিকায় সেদিন মুক্তির এই অন্তর্ঘাত ঘটানোর পিছনে ছিল হ্যারিয়েট টুবম্যান আর তার দলবল। হ্যারিয়েট কালো বটে! কিন্তু তাঁর মতো সুন্দর, তাঁর মতো সভ্য মানুষ আমেরিকায় বেশি জন্মায়নি!

আমাদের চা শ্রমিকদের জীবনের সাথে, চেহারার সাথে মিল আছে অ্যারামিন্টা রস্‌ এবং তাদের সকলের। হয়তো একদিন চা শ্রমিক পরিবার থেকেই একজন অ্যারামিন্টা রস্‌ আবির্ভূত হবে চা শ্রমিকদের ত্রাতা হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:০৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কতভাগ ব্লগার মহা-ডাকাত তারেককে সরকারে দেখতে চায়?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:১২



জিয়া মিথ্যা হ্যাঁ/না ভোটে সামরিক এডমিনিষ্ট্রেটর থেকে আইয়ুবের নতো দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলো, ৫% ভোটকে মিথ্যুকেরা ৯৮% বলেছিলো ; আওয়ামী লীগ বাধা দিতে পারেনি। জিয়ার মৃত্যুর পর, বেগম জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১৯

রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক
দায়হীন সরকারের শাসনে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে?


দিপু চন্দ্র দাস মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন—
“আমি নবীকে নিয়ে কিছু বলিনি, আমাকে মারবেন না।”
রাষ্ট্র তখন কোথায় ছিল?

আগুনে পুড়তে পুড়তে ছোট্ট আয়েশা চিৎকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×