জেমস জয়েসের Ulysses........
বুবুর সাথে প্রায়ই বৃটিশ কাউন্সিল লাইব্রেরীতে যেতাম সেই ছেলে বেলাতেই। তখন বিভিন্ন বয়সের ক্যাটাগরিতে মেম্বারশিপ দেওয়া হতো। শিশুতোষ বিভাগে(১০ বছর থেকে ১৫ বছর) আমিও মেম্বার হয়েছিলাম ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়। বুবুকে Ulysses
পড়তে দেখে বইয়টার বিষয়ে ধারণা পেয়েছিলাম.....বরাবরই বীর আর বীরত্বের ইতিহাস আমার পছন্দের। মনে আছে যখন ক্লাস এইটে পড়ি, জয়েস এর Ulysses বইটি লাইব্রেরি থেকে বাড়ি আনি। তখনই লাইব্রেরীয়ান বলেছিলেন, "এই বই এত ছোট বয়সে বুঝবে না।"
তার কথাই ঠিক ছিল, একটা sentenceও বুঝতে পারিনি। যথারীতি বুবুকে জিজ্ঞেস করলে বুবু আমাকে ইউলিসিস সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিলেন- "উলিসিস আইরিশ লেখক জেমস জয়েস-এর কালজয়ী সৃষ্টি। ১৯২২ সালে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। অধিকাংশ সাহিত্য সমালোচকরা ইউলিসিস-কে ইংরেজি ভাষায় লিখিত বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে গণ্য করে থাকেন। ইউলিসিস-এর কাহিনী একটিমাত্র দিনকে ঘিরে।

তারপর বড় হয়ে আমি অন্তত তিন বার বইটি পড়েছি। কখনো বোরিং লেগেছে, কখনো মাথা ঝিমঝিম করেছে, নিজেকে পাগল বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। কখনো ন্যারেটিভ এর সাথে তাল মেলাতে পারিনি। পড়া শেষে বলতেই হবে পেয়েছি: রোঁলা বার্থের ভাষায় bliss in reading বাjouissance.
১৬ই জুন, ১৯০৪ সাল! ডাবলিন শহরের নামগোত্রহীন বর্ণহীন নাগরিক লিওপোল্ড ব্লুম শুরু করলো গলি থেকে রাজপথ হয়ে এক অনিকেত যাত্রা। ডাবলিন শহরের আনাচেকানাচে তার এই আত্ম-পরিক্রমাকে ঔপন্যাসিক জেমস জয়েস সমান্তরাল তুলনা টানলেন গ্রিক নায়ক ইউলিসিস-এর সেই মহাকালীন অভিযানের! একটি মাত্র দিনের ঘটনাক্রমেই সৃষ্টি হল প্রায় দেড় হাজার পাতার উপন্যাস; হোমার-এর ওডিসি-র মতোই মহাকাব্যিক যার ব্যাপ্তি! অশ্লীলতার অভিযোগে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশ করা যায় নি। প্রকাশিত হয় ফ্রান্সে। ২০০০ সালে মডার্ণ লাইব্রেরি বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বইয়ের যে তালিকা তৈরি করেছিল, তাতে প্রথমেই স্থান পেয়েছিল জয়েসের ইউলিসিস! জয়েস অনুরাগীকুল 16th JUNE " BLOOMSDAY " হিসাবে পালন করে থাকে।
জেমস জয়েস ইউলেসিসের (Ulysses) নামকরণ করেছেন একটি বিখ্যাত গ্রিক বীরত্বগাঁথা থেকে। ইউলেসিসে বর্ণনা করা হয়েছে এক মহান গ্রিক বীরের। যিনি ট্রয় যুদ্ধ জয় শেষে তার নিজ দেশ ইথাকায় ফিরে যাচ্ছেন। উপাখ্যানটি সে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আবর্তিত। জয়েস মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, মানুষের জীবনে যে প্রতিদিনের কাজগুলো করা হয়, যেমন, খাওয়া, নিজের দুঃখে ও মানুষের দুঃখে দুঃখিত হওয়া, বাজার করা, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি, সেগুলো তুচ্ছ বা উপেক্ষা করার মতো নয়। এই ব্যাপারগুলো সুন্দর, গভীর এবং আসলেই প্রশংসার দাবিদার। মানুষের প্রতিদিনের জীবন ঐ গ্রিক বীরের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। কারণ প্রত্যেকের জীবনটা একেকটা ছোট ছোট যুদ্ধক্ষেত্র আর এখানে প্রতিটি মানুষই জীবনসংগ্রামের সৈনিক। পৌরাণিক যুদ্ধকে জেমস জয়েস দেখেছেন প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে।
সেই জীবন যুদ্ধ এখন বৈশ্বিক মহামারি হয়ে আক্রান্ত করেছে কোটি কোটি মানুষকে, যার অন্যতম শিকার বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




