ব্যয়বহুল দারিদ্র্য......
ইংরাজীতে একটি কথা আছে EXPENSIV POVERTY
এর মানে "ব্যয়বহুল দারিদ্র্য" অর্থাৎ দারিদ্রতা দেখানোর জন্য অনেক খরচা করতে হয়। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই গণতন্ত্রের ছ্দ্মাবরণে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন কায়েমের নজীর চোখের সামনেই অসংখ্য। নিজ দেশের কথা বলা যাবেনা। তবে অবিভক্ত ভারতের কথা বলতে বাঁধা নাই।
গান্ধীজির নকল দারিদ্রতা এমনই ছিল, একবার সরোজিনী নাইডু গান্ধীজি'কে মজা করে বলেছিলেন, "আপনাকে দরিদ্র দেখাতে গিয়ে আমাকে অনেক টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে!"
সরোজিনী নাইডু এ রকম কথা বলেছিলেন কেন? কারণ, গান্ধীজি যখনই ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণীর কামরায় ভ্রমণ করতেন তখন সেই তৃতীয় শ্রেণীর কামরা আর সাধারণ তৃতীয় শ্রেণীর কামরা থাকতো না, বিলাসবহুল কামরায় পরিবর্তিত হতো।
ইংরেজরা কখনোই চাইতো না যে গান্ধীজি খারাপ অবস্থায় ও ভিড়ের মধ্যে কোথাও যান, তাতে তিনি খবরের কাগজের হেডলাইন হবেন, আর ইংরেজরা ভারতীয়দের চোখে স্বৈরাচার প্রমাণিত হয়ে অসুবিধায় পড়তে পারে।
সেজন্য যখনি গান্ধীজি ট্রেনে ভ্রমন করতেন, তখনই তাকে বিশেষ ট্রেন দেওয়া হতো, এবং সেই ট্রেনে তিনটি বিলাসবহুল বগি থাকতো। তাতে গান্ধীজি ও তার লোকজন যারা তার অনুগামী শুধু তারাই থাকতেন। প্রত্যেক স্টেশনে বহু সংখ্যক লোক তাকে দেখতে আসতেন, আর এইসবের খরচ পরে গান্ধীজি'র ট্রাস্টের মাধ্যমে ইংরেজ সরকারকে দেওয়া হতো পরিশোধ করতে। তখন সর্বভারতীয় জাতীয় নেতা হিসেবে গান্ধীজি, তার সহযোগী পর্ষদ এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সকল যাতায়াত খরচ এবং নিরাপত্তা খরচ ইংরেজ সরকার বহন করতো।
এজন্যে মহম্মদ আলি জিন্নাহ বলেছিল, 'যত টাকায় আমি ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কামরায় সফর করি, গান্ধীজি তার থেকে শতগুন বেশি টাকায় তৃতীয় শ্রেণীর কামরায় সফর করেন।"
গান্ধীজি প্রতিজ্ঞা করেই নিয়েছিলেন যে, ছাগলের দুধ ছাড়া অন্য কোনো গৃহপালিত প্রাণীর দুধ তিনি পান করবেন না, ছাগলের দুধ তখনো দামী ছিল, আজও দামী।
গান্ধীজি নিজের আশ্রমে তো ছাগল পালতে পারতেন। কিন্তূ গান্ধীজি অনেক জায়গা ঘুরতেন, আর ছাগলের দুধ সব জায়গায় সহজেই পাওয়া যেত না। তাই তিনি যখন যেখানেই যেতেন সাথে তার দুধেল সিন্ধী জাতের কয়েকটা ছাগল নিয়ে যেতেন।
কিভাবে লন্ডনে ছাগলের দুধ খুঁজে বেশী দামে কিনতে হতো, এই কথা স্বয়ং গান্ধীজি নিজের বইতে লিখে গেছেন। কারণ হিসেবে লিখেছেন, 'আমি খুব গরীব, তাই শুধু ছাগলের দুধ পান করি।'
যদিও খুশবন্ত সিং তার বইতে লিখে গেছেন, গান্ধীজি আশ্রমে ছাগল পালতেন, প্রতিদিন ছাগলগুলোকে সাবান দিয়ে স্নান করানো হতো, ওদের প্রোটিন খাওয়ানো হতো, প্রতিদিন এক একটা ছাগলের জন্য জন্য ২০ টাকা খরচা হতো, ৯০ বছর আগের ২০ টাকা আজকের ২০ হাজার টাকারও বেশি।
আর বাকি খরচা কিভাবে উঠতো?
সেই সময় গান্ধীজি তাঁর একটা অটোগ্রাফের জন্য ৫০০০/- নিতেন। তিনি নিজের কাছে একটা দানপাত্র রাখতেন, সেই দানপাত্রে কিছু না কিছু ধনরাশি দান করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করতেন। এছাড়াও অনেক উদ্যোক্তা-শিল্পপতি-ব্যাবসায়ী ও বন্ধুবান্ধবও গান্ধীজি কে চাঁদা দিতেন। 'গান্ধীজি ট্রাস্ট' নামে সেইসব চাঁদা জমা হত।
গান্ধীজির ৭৫তম জন্মদিনে টার্গেট ছিল ট্রাস্টে ৭৫লক্ষ টাকা জমা হবে, কিন্তূ জমা হয়েছিল ১কোটির বেশি টাকা। সোনার দামের হিসাবে তুলনা করলে আজকে সেই টাকার মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা।
গান্ধীজির অত গরীব আর তার অত সরল জীবনযাপন ছিল না, যতটা না আমাদের চরকার সুতো কাটিয়ে গেলানো ও বোঝানো হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ খুশবন্ত সিং এর 'গান্ধীজি' স্মৃতি কথা বই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




