somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

আমার হাত.........

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার হাত.........

মিশনারী স্কুলের ছাত্র ছিলাম। ক্লাস থ্রী বা ফোরে, ঠিক মনে নেই, পাদ্রী মিজ এর প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলাম- শরীরের সেরা অঙ্গ হাত। ক্লাস মিজ এবং সহপাঠী বন্ধুরা হইহই করে উঠলো! মিজ অন্য সহপাঠীদের কাছে করে জানতে চাইলেন- শরিরের সেরা অংগ কি?
মস্তিস্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, চোখ এমনকি মুখ- পেটের নাম উঠে এলো।
হাতের পক্ষে কেউ নাই! যুক্তি দেখালাম, "হাতকে যা বলি তাই করে, সুতরাং হাতই সেরা।" সেদিন মিজ কিম্বা বন্ধুরা একমত নাহলেও আমার আজও বিশ্বাস- হাতের ধারে কাছে কেউ নেই।

আমার হাত নিয়ে আমার অহংকার একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। দেখতে নয়, কাজের জন্য। দেখনদারি হাত নয় বলে আমার যে কষ্ট আছে বা ছিল এমনও নয়। বরং ছোট থেকেই আমার এই সাধারণ হাতকেই আমি অসাধারণ ভাবতাম। আমাদের ছেলে বেলা পাঞ্জা লড়ার খেলাটা খুব বেশী প্রচলিত ছিলো। আমি আমার সব বন্ধুদের পাঞ্জায় হারিয়ে দিতাম!

অংকে আমি খুব দুর্বল ছিলাম। মাঝেমধ্যে কঠিন অঙ্ক পারলে হাতে চুমু খেতাম লুকিয়ে লুকিয়ে, "পেরেছিস অঙ্কটা" বলে.....মার্বেল খেলায়, ক্যারম খেলায় জিতে হাতে চুমু খেতাম হেরে যাওয়া বন্ধুদের চোখের সামনে!

কল্পনাবিলাসী আমি পড়ার ফাঁকে ফাঁকে খাতার পিছনে সহস্র অবাস্তব কল্পনা করতাম আর তাদের সত্যি করতে শুরু করলো হাত। হাবিজাবি ছবিতে আঙ্গুলগুলো মায়া জগতের মায়াজাল বুনতো আর আমি ভাসতাম, সেই রোমান্টিকতায়।

রোমান্টিকতা!
অবাস্তব?
আমার অবাস্তব জগতে স্বচ্ছন্দ বিচরণের সেই শুরু। তারপর সারাজীবন কতজনই বলেছেন, "সব মিথ্যে, তুমি মিথ্যের অলীক জগতে থাকো, কিস্যু হবে না, কিস্যু পাবে না জীবনে।"
সত্যিই জীবনে অনেক কিছুই পাইনি। অনেক কিছুই পাব না। দরকার নেই পাবার- সবাই কি সব পায়!
যাক হাত নিয়ে বলছিলাম।

একটু বড় হয়ে আমার হাত আমায় আদর করতে শুরু করলো। সে এক অদ্ভুত গোপন, আবছা ভয় আর রোমাঞ্চে ভরা। জীবনে প্রথম মনে রাখার মত রোমাঞ্চ এনেছিল হাত......।

সেই কিশোর বয়সে এই হাত বন্দুক তুলে নিয়েছিলো দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য। এই হাত বংগবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের হাত ছুঁয়েছিলো। জিয়াউর রহমানের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করলো। আমার স্কুল কলেজ এর এডজুটেন্ট থেকে এডজুটেন্ট জেনারেল, প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্চেলরের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করলো।

তখনও এই হাত কবিতা লিখতে শুরু করেনি। শুরু হলো যখন ভয়ে ভয়ে প্রথমবার এক কিশোরী প্রেমিকার হাত ছুঁয়েছিলো। আমি বুঝলাম নারীর হাতের স্পর্শ ছাড়া কবিতার জন্ম হয় না। কিশোরীর হাতের স্পর্শে আমার হাত কবিতা লিখতে শুরু করলো। শুধু কবিতা লেখেনি, কতদিন কতবার এই হাত মানুষের রক্ত ছুয়েছে। মনে পড়ে ১৯৮৯ সনে ১৫ই জানুয়ারী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ফেরার পথে টংগীর মাজুখান নামক একটা যায়গায় মুখোমুখী দুই ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৫০ যাত্রীর প্রাণহানী এবং চার শতাধিক যাত্রী আহত হবার কথা। আমিও ছিলাম সেই ট্রেনের যাত্রী। সৌভাগ্যবশত আমি লাশ হইনি বরং অসংখ্য রক্তাক্ত মানুষের সেবা শুশ্রুষা করেছে আমার হাত। ছিটকে পড়া ৫/৬ বছরের একটি রক্তাক্ত বাচ্চাকে কোলে নিয়ে খুঁজে পেয়েছিলাম ওর মৃত মায়ের লাশ। দুই হাতদিয়ে পাগলের মত বাচ্চাটির বাবার জীবন খুজছিল রক্তাক্ত মুখগুলোতে হাত বুলিয়ে।

সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ আমার হাত কবিতা লিখেছিলো, আমার প্রথম প্রেমিকার শরীরে। শুধু কাগজে নয়, তার পিঠ জুড়ে আমি আঁকি প্রতিস্পর্দ্ধি এক ছবি। আমার এই হাত নারীদের উপত্যকা জুড়ে লেখে কবিতার ছত্র।
এই হাত ছবি আঁকে তোমার কপালে, তোমার চোখের পাতায়, কপোলে, ঠোঁটে, থুতনিতে, বুকের গভীর গভীরতর দুঃখে।
এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে আঁকা হয়ে যায় তোমায় আশ্লেষে আদরের ছবি!

আমার মুষ্টিবদ্ধ হাত শাসন করে দুঃশাসনকে, আমার আঙ্গুল গলা নামাতে বাধ্য করে অকারণ স্পর্দ্ধাকে।
আমার হাত অন্যায়কে বাধা দেয়। আমার দুই হাত সুন্দরকে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানায়।
আমার হাত সন্তানের মাথায় হাত রেখে বলে, "ভালো মানুষ হও।"

তবে স্বীকার করতে বাঁধা নাই- হাতের সব কাজই মস্তিস্ক প্রসূত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:১৮
২১টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×