ছিপ ফেলে মাছ ধরা এবং চণ্ডীদাস-রজকিনী প্রেমোপাখ্যান... (মিনি ভার্সন)।
"প্রেমের মরা জলে ডোবে না...
চন্ডিদাস আর রজকিনী...
তারাই প্রেমের শিরোমণি গো...
ও সে বারো বছর বড়শি বাইলো
বারো বছর...
ও সে বারো বছর বড়শি বাইলো তবু
আদার দিলো না দরদী...
প্রেমের মরা জলে ডোবে না.."- আবদুল আলীমের গান।
ঘটনা হইলগিয়া, চণ্ডীদাস বারো বছর ধরে শুকনো(পানিশূন্য) পুকুরে ছিপ বড়শি পেতে বসে আছে কিন্তু বড়শিতে আদার দেয়নায়। অন্যদিকে বারো বছর ধরে রজকিনী পুকুর ঘাটে আসেন, কাপড় কাচেন, জল তোলেন, চণ্ডীদাসের দিকে ফিরেও তাকান না। চণ্ডীদাস বসে আছেন অসীম ধৈর্যে....এদিকে পুকুরের পানি শুকিয়ে মাটি চৌচির হয়ে গিয়েছে -সেদিকে চণ্ডিদাসের খেয়াল নাই...তার একটাই অপেক্ষা, কখন রজকিনী আসবে পুকুর ঘাটে- জল নিতে! এদিকে রজকিনীও পানিশূন্য পুকুরের জল নিতে আসে অদৃশ্য এক নেশায়... এক দিন রজকিনীর মনে দয়া হলো। কিংবা নিতান্তই কৌতূহলবশত জিজ্ঞাস করলেন, "মাছ দুই একটা পাইলা ঠাকুর?"
চণ্ডীদাস উত্তর দিলেন, 'দীর্ঘ বারো বছরে এইমাত্র ঠোকর দিল!'
চণ্ডীদাস আর রজকিনীর প্রেমের ইতিহাস নিয়ে রয়েছে বহু মিথ। চণ্ডীদাস ছিলেন বাসলীদেবী মন্দিরের পুরোহিত। সেই মন্দিরের দেবদাসী ছিলেন রামি ও ওরফে রজকিনী। মন্দির ঝাঁট দেয়, ঠাকুরের বাসন-কোসন মাজে, কাপড় ধোয়। এক দিন মন্দিরে ভোগ নিতে এলে ঠাকুর তার বাহু আঁকড়ে ধরেন। পিতৃমাতৃহীনা নিম্নবর্ণের রামি তাতে প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে আর্তনাদ করেন, 'কী করছেন, ঠাকুর!'
ঠাকুর তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "আমি তোমার মাঝে রাধারূপ দর্শন করেছি"।
বলাই বাহুল্য, দেবদাসী রজকিনীর তখন ঠাকুরের পায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার দশা। রজকিনী দৌড়ে পালালেন। আর কখনো ঠাকুরের সামনে আসে না। দূর থেকে কাজকর্ম সারেন। ওদিকে ঠাকুরের হয়ে গেছে বেহাল দশা। বসে বসে শুধু কীর্তন গান। প্রেমলীলার এক অসামান্য আখ্যান রচনা করলেন তিনি এবং মর্মস্পর্শী সুরে গাইলেন, ‘কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কূলে/কে না বাঁশী বাএ বড়ায়ি এ গোঠ গোকূলে/আকুল শরীর মোর বেয়াকুল মন/বাঁশীর শবদেঁ মো আউলাইলোঁ রান্ধন।’
এই সেই চণ্ডীদাস যিনি বলেছিলেন, ‘কহে চণ্ডীদাস, শুনহ হে মানুষ ভাই, সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই।’- একথা বলেছিলেন - রজকিনী নিচু জাতের বুয়া হলেও সে ঠাকুর চণ্ডীদাসের প্রেমিক মনে শুধুই একজন মানুষ!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




