somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

'Twas The Fight Before Christmas'.....

২২ শে মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'Twas The Fight Before Christmas'.....

মুষ্টিযুদ্ধ অর্থাৎ বক্সিং নিয়ে অনেকগুলো মুভি আমি দেখেছি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- The Hurricane, Creed, The Fighter, Cinderella Man, Rocky, Raging Bull, Champ.....ইত্যাদি। বক্সিং নিয়ে যে মুভিটার নিয়ে এই লেখার অবতারণা- সেটা সম্পুর্ণটা একজন অকালপ্রয়াত বক্সারের জীবন কাহিনী।

এমন এক লড়াই, যা খেলার দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ রূপকথাগুলোর মধ্যে পড়বে। বক্সিং। চড়া আলোয় মুখোমুখি দুই মহামানব। যাদের মুখে আছড়ে পড়বে একের পর এক পাঞ্চ। তবু তারা উঠে দাঁড়াবে। এক ইঞ্চি জমি ছাড়বে না। ক্ষিপ্রতা, গতি আর স্ট্যামিনায় আছড়ে পড়বে প্রতিপক্ষের শরীরে। এই খেলায় আমরা একের পর এক শ্রেষ্ঠ লড়াই টেলিভিশনে লাইভ কাস্ট দেখেছি। মনে আছে, ১৯৭১ সালের বিখ্যাত 'ফাইট অফ দ্য সেঞ্চুরি' যেখানে জো ফ্রেজিয়ারের কাছে মুকুট ছেড়ে যান বক্সিংয়ের সম্রাট মহম্মদ আলী। আবার সেই মুকুট পুনরুদ্ধার করার যুদ্ধ দেখেছি ১৯৭৪ সালের 'দ্য রাম্বেল ইন দ্য জাঙ্গল' এ। তখনকার চ্যাম্পিয়ন জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে দেন অভিজ্ঞ আলী। আলী, টাইসন, জো লুই, ফ্রেজিয়ারদের মত লিজেন্ডদের সাম্রাজ্যের এক পূর্বসূরি যোদ্ধার কাহিনী শোনাই, যিনি লিজেন্ড না হয়েও এমন একটি যুদ্ধ লড়েছিলেন যা সর্বকালের সেরা লড়াইগুলোর মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে।

১৯১৩ সালে বিলি মিস্কে যখন রিংয়ে পা রেখেছিলেন যখন তাঁর বয়স ১৮। সেন্ট পল, মিনেসোটায় জন্ম। দশ বছরের বক্সিং কেরিয়ারে ৫৩ টি লড়াই লড়েছিলেন বিলি মিস্কে যার মধ্যে ৪৫ টি লড়াই জিতেছিলেন। সেই সময় লাইট হেভিওয়েটে সেরা বক্সার ছিলেন হ্যারি গ্রেব এবং জ্যাক ডেম্পসে। এদের দুজনকেই হারিয়েছিলেন- বিলি মিস্কে।

যিনি কখনও বক্সিং রিং ছেড়ে যেতেন না, তাকেই দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার ডাক আসে। প্রিয় রিং। প্রিয় আলো। শক্তিশালী বক্সারদের পাঞ্চ যা করতে পারেনি, নিজের শরীর সেটাই করল। ১৯১৮ সালে বিলির কিডনির এক বিরল অসুখ ব্রাইটস ডিজিজ ধরা পড়ল। ডাক্তার বলে দিলেন বেঁচে থাকার সময়সীমা পাঁচ বছর। এও বললেন প্রফেশনাল বক্সিং ওই দিনই ছেড়ে দিতে। বিলির তখন মাত্র ২৪ এ পা পড়েছে।

এদিকে বিলির তখন ১ লক্ষ ডলারের ওপর দেনা। বক্সিং ছাড়ার বিলাসিতা করার উপায় নেই। তাই অসুখ লুকিয়ে চলল লড়াই। প্রতি লড়াইয়ে ক্ষয়ে যেতে থাকল শরীর। রোগ লুকিয়ে বিলি প্রায় ৩০ টি লড়াই লড়েছিলেন। ১৯২০ সালে বিলি মিস্কে রিংয়ে নামলেন জ্যাক ডেম্পসের বিরুদ্ধে হেভিওয়েট খেতাবের জন্য। ডেম্পসে বিলির বুকে এতজোরে পাঞ্চ করেছিলেন, যে হৃদপিণ্ডের পাশে বেসবলের সাইজের ক্ষত হয়ে গেছিল। ডেম্পসে ভয় পেয়ে গেলেন। তবু বিলি ৯ গোনার পর নিজের পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং লড়াই চালিয়ে গেছিলেন। ডেম্পসে খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে নকআউট করেন। এবার চোয়ালে। ডেম্পসে জানতেন না বিলিকে নকআউট করছে আর কেউ না, তার কিডনি। জীবনে বিলির সেই প্রথম ও শেষ বার নকআউট হওয়া…

এরপর শরীর সঙ্গ দিল না আর। বিলির জীবন ফুরিয়ে আসছিল। শরীর শুকিয়ে ঝাঁটার কাঠির মত রোগা হয়ে গেছিল। লড়াই তো দূর, ব্যায়াম করার শক্তিটুকুও চলে যাচ্ছিল। ১৯২৩ সালের শীত। পাঁচ বছরের মেপে দেওয়া জীবনের শেষ বছর। পকেট ফাঁকা কারণ, জানুয়ারির পরে বিলি আর কোন লড়াইয়ে নামেননি। ক্রিস্টমাস কড়া নাড়ছিল দরজায়।

বিলির স্ত্রী মেরি ও তিনটি বাচ্চা, বিলি জুনিয়ার, ডগলাস ও ডোনাকে মুখ দেখাবে কী করে? নতুন জামা হবে না তাদের? আর কোন উপায় না পেয়ে বিলি গেলেন তাঁর দীর্ঘদিনের ম্যানেজার জ্যাক রড্ডির কাছে।
-'জ্যাক, একটা লড়াই… একটা শেষ লড়াই…'
রড্ডি বললেন, 'অসম্ভব বিলি। তোমার যা অবস্থা, লড়াইয়ে নামা মানে মৃত্যুকে ডেকে আনা!'

বিলি হেসে বললেন, 'পার্থক্যটা কী? রকিং চেয়ারে বসে স্ত্রী সন্তানদের মলিন মুখ দেখার চাইতে মরে যাওয়া ভালো।'

রড্ডি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, 'তাহলে একটা কাজ কর। জিমে যাও। ওয়ার্ক আউট করো। কিছুদিন পরে তোমার অবস্থা দেখে ডিসিশন নেওয়া যাবে'।

বিলি হাত চেপে ধরলেন জ্যাকের, বললেন- 'বুঝতে পারছ না কেন জ্যাক? আমার আর সময় নেই। আমার মধ্যে একটা, মাত্র একটা ফাইট করার শক্তি আছে শুধু।'

জ্যাক ব্যবস্থা করলেন সেই লড়াইয়ের। ৭ ই নভেম্বর, ১৯২৩। বিলি মিস্কে রিংয়ে নামবেন শেষ বারের জন্য। প্রতিপক্ষ হার্ড হিটার তরুণ শক্তিশালী বক্সার বিল ব্রেননান। যিনি ডেম্পসের মত পরাক্রমশালী বক্সারকে ১২ রাউন্ড পর্যন্ত আটকে ছিলেন। অন্যদিকে বিলি মিস্কে, যিনি অ্যাসপিরিন বোতল, আর বাটি বাটি স্যুপের ওপর ভরসা করে বিছানায় শুয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন এই লড়াইয়ের।

এল সেই দিন। ওমাহা শহর দেখল এক অসম লড়াই। বিছানা থেকে নেমে প্রস্তুতিবিহীন এক অসহায় পিতা জীবনের শেষ লড়াই লড়তে নামছেন। চার রাউন্ড পর্যন্ত গড়িয়েছিল যুদ্ধ এবং বিলি মিস্কে জীবনের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে নক আউট করেন ব্রেননানকে। ২৪০০ ডলারের চেক পান প্রাইজ মানি হিসেবে। ততক্ষণে জিংগেল বেল বেজে উঠেছে।

সেই অর্থ দিয়ে জীবনের সেরা ক্রিস্টমাস নেমে আসে বিলির বাড়িতে। সান্তা বুড়ো নিয়ে আসে ক্রিস্টমাস ট্রি, টয় ট্রেন, বেবি পিয়ানো, আরো অনেক উপহার। প্রচুর খাওয়াদাওয়া, গান, নাচ, আলো।

পরের দিন বিলি জ্যাক রড্ডিকে ডেকে ফিসফিস করে বলেন, 'জ্যাক, কিছু কর। আমি মরে যাচ্ছি'।

জ্যাক তাড়াতাড়ি বিলিকে নিয়ে সেন্ট মেরিজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ডাক্তাররা আর কিছু করতে পারেননি। ১৯২৪ সালের নিউ ইয়ারসের দিন মাত্র ২৯ বছর বয়সে কিডনি ফেল করে বিলি মিস্কে মারা যান।

বিলির লড়াই শুধু বক্সিং রিংয়ের লড়াই না। এই লড়াই একজন বাবার, একজন স্বামীর, একটি পরিবারের বেঁচে থাকার লড়াই। এই লড়াই অগুণিত মানুষের লড়াই যারা অসুস্থ হয়ে একটু নিশ্বাসের জন্য লড়ছে। এই লড়াই জীবনের, মৃত্যুর বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করার লড়াই…

তথ্যসূত্র:- 'Twas The Fight Before Christmas'- মুভির ভাবানুবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভোটের পর, আমরা পাকীদের বুটের নীচে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩২



পাকীরা অমানুষ, অপসংস্কৃতির ধারক ও বাহক; ওরা ২টি জাতিকে ঘৃণা করে, ভারতীয় ও বাংগালীদের; ওরা মনে করে যে, বাংগালীদের কারণেই পাকিরা হিন্দুদের কাছে পরাজিত হয়েছে ১৯৭১... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফুড ফর থট!!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫



একটা বিশাল আলোচনাকে সংক্ষিপ্ত আকার দেয়া খুবই কঠিন, বিশেষ করে আমার জন্যে। তারপরেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভাবলাম কিছু কথা বলা উচিত। দেশের আভ্যন্তরীন বা আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্রমাগত বড় বড় ভূমিকম্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমান আসবে, বাংলাদেশ হাসবে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৮


আমি যখন স্কুলে পড়তাম, দুপুরের শিফটে ক্লাস ছিল। একদিন স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি ছোটো মামা সংসদ টিভিতে অধিবেশন দেখছেন। কৌতূহল হলো, মামা এত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছেন। আমিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামে কোনটি মত এবং কোনটি মতভেদ?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৪




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×