যে গল্পের শেষ নাই.....
পাসের সীটের যাত্রী সাথে আলাপচারিতায়- নাম জানার পর, জিজ্ঞেস করলাম- "বাড়ি কোথায়?"
ছেলেটি বলল- 'ঝালকাঠী, কীর্ত্তিপাশা গ্রাম।' কীর্ত্তিপাশা শুনেই বুকের ভিতরে উথাল পাথাল ঢেউ- এক কিশোরীর মিষ্টি মুখ ভেসে উঠলো.......
এসএসসি পরীক্ষা শেষে যেমন অফুরন্ত সময় থাকে- এইচএসসি পরিক্ষার পর তেমন নয়। প্রথমত উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতির জন্য বাড়তি পড়াশোনা। আমাদের সময় ক্যাডেট কলেজের ক্যাডেটদের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগদান অনেকটাই বাধ্যতামূলক ছিলো- কিন্তু জাতীয় রক্ষীবাহিনী সৃষ্টির পর থেকে '৭৫ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীতে যোগদানের প্রতি ক্যাডেটদের আগ্রহ কমে যায় কিম্বা একটা দোদুল্যমান অবস্থা বিরাজ করছিলো। এইচএসসি ফাইনাল এক্সামের আগেই সামরিক বাহিনীতে যোগদানের জন্য প্রি-মেডিক্যাল টেস্ট সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে- তবুও আমি আরও অনেকের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। ফাইনাল এক্সাম দিয়ে আমি সময় কাটাই বৃটিশ কাউন্সিল, পাবলিক লাইব্রেরীতে। বন্ধু ফরিদের কাছে জেনেছিলাম- আরজ আলী মাতুব্বর নিয়মিত বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীতে আসেন। তার সাথে পরিচিত হতে এক্সাম শেষে আমি বরিশাল চলে যাই।
এক বিকেলে বন্ধু ফরিদের বাড়িতে গিয়েছি। সেখানেই প্রথম দেখা, বন্ধু ফরিদের মামাতো বোন- ওদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। তার উজ্জ্বল গভীর চোখ আর ঠোঁটের নিচে ছোট্ট তিল.... এক নজরেই ভালো লেগে গেল। দুবেণী বাঁধা চঞ্চল মেয়েটাকে কী যে ভালো লাগছে! কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি। পরিচিত হবার, কথা বলার প্রবল ইচ্ছা কিছুই বলা হয়নি। সেও কিছু বলেনি তবুও "অনেক কথা যাও যে বলে কোনো কথা না বলি"... হয়তো সেও আমার ভালোলাগা বুঝেছিলো। 'রানু' নামের ক্লাস টেনের ছাত্রীটির আকর্ষণেই সময় অসময়ে বন্ধুর বাড়ি পরপর কদিন গেলাম। সেও আশেপাশে ছিলো...
এক দিন ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসির রেখা এনে বলল -"কাল সকালে চলে যাবো।"
হ্যা রানু চলে গিয়েছে। 'রানু' এবং 'কীর্তিপাশা' ছাড়া আমার আর কোনো সঞ্চয় নেই... ওখানেই সব কিছু থেমে গেলেও বুকের ভেতর রানু নামটা খোদাই হয়ে রইলো- 'এখন আমার বেলা নাহি আর, বহিব একাকী বিরহের ভার'...
কয়েক বছর পর বন্ধু ফরিদকে একদিন জিগ্যেস করলাম -"রানু'র কি বিয়ে হয়ে গেছে?"
বন্ধু হেসে বলল - তুই কি ওকে........
সময়ের ব্যবধানে পেরিয়ে গিয়েছে অনেক কিছু। অর্ধশত বছর পর 'কীর্তিপাশা' নামটা শুনেই অসমাপ্ত মনে হলো জীবনের যৎসামান্য মুহূর্ত! একদিন অযাচিত ভাবে অকস্মাৎ শুরু হয়েছিল, সেটা অপরিবর্তিত থেকে গেছে আজও......কিছু কিছু স্মৃতি জীবনের সাথে এমনভাবে জড়িয়ে থাকে হাজারো চেষ্টা করেও
মুছে ফেলা যায় না।
কত বসন্ত দোল,
ফাগুন রঙে লাল হওয়া
চলে গেছে জীবনের ওপর দিয়ে।
না আমি মরে যাইনি, আমার প্রাণটা খুব শক্ত।
হয়ত আরও অনেক কষ্ট পেতে বাকী আছে তাই এখনও বেঁচে আছি।
কিন্তু সেদিনের সেই দুবেণী বাঁধা চঞ্চল মেয়েটার
উৎসাহ উদ্যমে ভরা একটা প্রাণ কোথায় যে
হারিয়ে গেল? আর ফিরে এলোনা....
তবুও বসন্ত কাল এলে আজো আমার মনের কোণে সুর বেজে ওঠে, অকারণ খুশীতে প্রাণটা ছট্পট্ করে, তবু যৌবনতো আর ফিরে আসবেনা, যে যায় সে কি আর আসে? কত চন্দ্রভূখ অমাবস্যা পার হলাম, তবু সে তো আসেনি!
(ইহা একটি নিছক গল্প)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪