ইতিহাসের গল্পঃ ফ্যাসিস্টদের রোম দখল এবং বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পলায়ন......
১৯২২ সাল।
দেশঃ ইটালি। দেশ জুড়ে চলছে তখন ভয়ানক বিশৃঙ্খলা!
কোনো সরকারই তখন বেশীদিন স্থায়ী হতে পারছে না। যুবকদের হাতে কাজ নেই‚ দেশের মুদ্রামান তলানিতে‚ নতুন কর্মসংস্থান নেই‚ মেয়েরা সন্তান নিতে চাইছে না‚ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মকে চলে যাওয়ার অবস্থা! আর তার উপরে গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত আছে কমিউনিস্টদের উৎপাত। দাঙ্গা- হাঙ্গামা-ধর্মঘট-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, কৃষি ক্ষেত নষ্ট করে দেওয়া- এসব তখন দৈনন্দিন বিষয় পরিণত করে ফেলেছে কমিউনিস্টরা। মানুষের জান-মাল এবং মানের নিরাপত্তা তখন আক্ষরিক অর্থেই নেই।
এমনই সময়ে মিলান শহরে ফ্যাসিস্ট পার্টির একটা মিটিং এ হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো- মিলান শহরটা দখল করে নেওয়া যাক। কিছুই না‚ যদি একটা শহরকেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে‚ তাহলে সমস্ত ইটালিবাসীর কাছেই ফ্যাসিস্ট পার্টির কর্মদক্ষতা প্রমাণিত হবে- যে একমাত্র ফ্যাসিস্টরাই পারে দেশকে কমিউনিস্টদের হাত থেকে বাঁচাতে।
সুতরাং‚ দখল করো শহর।
মূহুর্তের মধ্যে তিন লক্ষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফ্যাসিস্ট ক্যাডার ঝাঁকে ঝাঁকে এসে দখল করে নিল গোটা মিলান শহর। অবরোধ করলো রেললাইন, পোস্ট অফিস‚ টেলিগ্রাম আর সরকারি অফিস। মানুষের ব্যক্তিগত বাড়িগুলো পর্যন্ত চলে এলো তাদের হাতে। মিলানে থাকা সমস্ত অস্ত্র‚ পুলিশ-মিলিটারির অস্ত্র থেকে শুরু করে গোলন্দাজ বাহিনীর হালকা বন্দুক, জন্তু-জানোয়ার শিকার করার জন্য পুরনো আমলের মরচে-পড়া বন্দুক, বারুদভরা মান্ধাতা আমলের রাইফেল এ সমস্ত কিছু তখন ফ্যাসিস্টদের হাতে। বিনা যুদ্ধেই শহর জিতে নিয়ে তাদের উৎসাহ তখন চরমে।
এদিকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। তার মধ্যেই কাকভেজা হয়ে এইসব অস্ত্রশস্ত্র হাতে ফ্যাসিস্টকর্মীরা ‘রোমা রোমা’ বলে চিৎকার করতে করতে এগিয়ে যেতে লাগলো রাজধানী রোম শহরের দিকে। অর্থাৎ তাদের পরবর্তী লক্ষ্য খোদ রাজধানী রোম। রাজধানী দখল করা নিশ্চয়ই কোনো মুখের কথা নয়। তারজন্য অস্ত্র লাগবে। আর্মি ট্যাঙ্ক লাগবে। কিন্তু কোথায় সেসব?
দলেরই একজনের একটি ফিয়াট স্পোর্টস কার ছিল। সেই গাড়িরই ছাদে মেশিনগান ফিট করে তাকে বানানো হলো এপিসি। সেই এপিসি নিয়েই ফ্যাসিস্টরা ঢুকে পড়ল রোমে। বাকিরা কোদাল, শাবল, খুন্তি, টেবিলের ভাঙা পায়া ইত্যাদি ইত্যাদি হাতের কাছে যা পেলো তা নিয়ে এগিয়ে চলল সামনের দিকে। হাতের কাছে পাওয়া যেকোনো জিনিস‚ এমনকি লবণমাখানো শুকনো শক্ত বাকালা মাছ পর্যন্ত অস্ত্র হিসাবে তৈরী রাখল সেনাবাহিনীর গোলা বারুদের মোকাবিলা করার জন্য।
অন্যদিকে রোমের সৈন্যদের মরনপণ- শত আক্রমণ আসুক। ফ্যাসিস্টরা তাদের মেরে কেটে ফেলুক। তবুও রোমের মাটির একটি কনার দখলও তারা ছাড়বে না।
যদিও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধমুদ্ধ কিছুই হলো না।
সেনাবাহিনী নিজেরাই বেঁকে বসল‚ দেশপ্রেমিক ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে গুলি তারা কিছুতেই চালাবে না। হাওয়া বুঝে সিংহাসন বাঁচানোর জন্য সম্রাট ভিক্টর এমানুয়েলও পাল্টি খেয়ে গেলেন। তিনি নিজে মুসোলিনিকে আমন্ত্রণ জানালেন রোমে এসে মন্ত্রীসভা গঠন করার জন্য। ওদিকে আবার ফ্যাসিস্টদের ঢুকতে দেখেই আগের প্রধানমন্ত্রী ফাক্টা পদত্যাগ করে লক্ষ্মণ সেন- শেখ হাসিনা স্টাইলে ভাগলবা। তার আর কোনো পাত্তা নেই- এ যেনো ২০২৪ সালের ৩৬ আগষ্ট, স্থান ঢাকা, বাংলাদেশ।
সম্রাটের আমন্ত্রণ পাওয়ার সময় মুসোলিনি ছিলেন ট্রেনে। রোমে আসছিলেন। সেখান থেকেই একটা কালো জামা, ট্রাউজার্স ও বউলার হ্যাট শরীরে চড়িয়ে হাজির হলেন সম্রাটের সামনে। বললেন‚ “সম্রাট নিশ্চয় আমার এই পোশাক দেখে আপনি বিরক্ত। কিন্তু কিছুই করার নেই, ক্ষমা করবেন। আমি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরাসরি এখানে এসেছি।”
আর এইভাবেই সেদিন থেকে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিলো সম্পূর্ণ নতুন এক শাসনব্যবস্থা! ফ্যাসিবাদ! অন্যদিকে ছাত্রজনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৩৬ আগষ্ট ফ্যাসিবাদের পতনের পর বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে।