somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ nnএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

অভ‍্যুত্থান না বিপ্লব যে নামেই ডাকি......

০২ রা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অভ‍্যুত্থান না বিপ্লব যে নামেই ডাকি

জুলাই গণ অভ্যুত্থান বিপ্লব ছিল কিনা এই নিয়ে পলাতক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার উচ্ছিষ্টভোগীরা তর্ক-বিতর্ক শুরু করেছে। বিপ্লবের ভিতরে গণ অভ্যুত্থান থাকে, কিন্তু সকল গণ অভ্যুত্থান বিপ্লবের সাফল্য ধরে রাখতে পারে না। অর্থাৎ গণ অভ্যুত্থান বিপ্লবের ফসল তুলতে পারে না, অথবা এর বিপরীত।

আমাদের জুলাই গণঅভ‍্যুত্থানকে অনেকে শুধু অভ‍্যুত্থান, আবার অনেকে শুধু বিপ্লব বলতে চাচ্ছে। আমরা জানি, অভ‍্যুত্থান এবং বিপ্লবের অর্থ। তবু সংক্ষেপে বলিঃ- অভ‍্যুত্থান বা গণঅভ‍্যুত্থানের আভিধানিক ফরাসি শব্দ "ক‍্যু দেতা" যার মানে, হঠাৎ এবং অবৈধভাবে নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপধানের বিরুদ্ধে দলগতভাবে কোন গোষ্ঠীর অবস্থান ব‍্যক্ত করে ক্ষমতাচ‍্যুত করা বা জোরপূর্বক পদত‍্যাগ করানোকে বলে অভ‍্যুত্থান। অন‍্যদিকে বিপ্লব হলো কোনকিছুর আমূল পরিবর্তন, যেমন শিল্প বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব, চিন বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, আরব বসন্ত- ইত্যাদি।

এখন আমাদের জুলাই গণঅভ‍্যুত্থানের দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখবো- আভিধানিক অর্থের সাথে আমাদের বাস্তব অভ‍্যুত্থানের কোন মিল নাই। এই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়েছে, পালিয়েছে সব মন্ত্রীরা, পালিয়েছে তিন শতাধিক এমপি নামক টাউট বাটপার। পালিয়েছে সচিব, পালিয়েছে পুলিশ থেকে শুরু করে সাংবাদিক, আইনজীবী, বিচারক, জাতীয় মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পূরহিত পর্যন্ত। জালেমশাহীর দোসররাও গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, দেশের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। ফ্যাসিবাদের রানী, গুম খুন আর সংবিধান চিতায় পোড়ানো শেখ হাসিনা একেবারেই ব্যতিক্রমী শয়তান।
প্রথমত, হাসিনা সরকার কোন বৈধ বা নির্বাচিত সরকার ছিলনা, বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকে ২০২৪ নির্বাচন একেবারেই না। দ্বিতীয়ত, যে গণমানুষ এই অভ‍্যুত্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছিল তাদেরকে কিছুতেই অবৈধ বলা যাবেনা। স্বতঃস্ফূর্ততা কখনও অবৈধ হতে পারেনা। শুধু বিগত সরকারকে সরানোর সঙ্গে এই সংজ্ঞার মিল দেখতে পাই। এখন প্রশ্ন হলো, বিগত সরকারকে আমরা সবাই মিলে কেন পদচ‍্যুত করলাম? নতুন ভালো সরকার পাবার আশায়? আরও প্রশ্ন, নতুন মানে কি সবকিছু নতুন? সবগুলো প্রশ্নের একটাই উত্তর- হ‍্যা। যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে "বিপ্লব" শব্দে আমাদের অনেকের এতো এ‍্যালার্জি হচ্ছে কেন? বিপ্লব মানেই তো পুরানোকে ফেলে দিয়ে নতুন কিছু করা। যদি সেটাই হয়ে থাকে এবং নতুন কিছু করতে গেলে তো বিপ্লব ছাড়া হবেনা। আমরা যদি আগের সরকারের সবকিছু ঠিকঠাক রেখে, শুধু চেহারার পরিবর্তন ঘটাই তাহলে তো যেই লাউ সেই কদুই হবে। তাই বলে '৭২ এর সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়া' বা 'কবর দেওয়া'র পক্ষপাতী আমি নই। আমি মনে করি- বর্তমান প্রেক্ষাপটে ৭২ এর সংবিধান পরিমার্জন করার সুযোগ আছে।

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই- তরুণ প্রজন্ম কেবল বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম। তাদের উদ্যম, সাহস এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবিচল বিশ্বাস আমাদের সবার জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, একটি নতুন, নিরপেক্ষ এবং সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার জন্য নিম্নবর্ণিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়ন, আইনের শাসন, রাজনৈতিক সংস্কার, সামাজিক সমতা, প্রযুক্তির ব্যবহার, সামাজিক সম্প্রীতি এবং যুব নেতৃত্ব। যুব নেতৃত্ব হলো সমাজের পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি। যুবকদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি চালু করতে হবে, যাতে তারা সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। যুবকদের জন্য নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে সমাজের নেতৃত্ব দিতে পারে।

আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের বর্তমান ছাত্র আন্দোলন একটি নতুন সমাজের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যেখানে বৈষম্য, দলীয় রাজনীতি, অপবাদ এবং ঘৃণা থাকবে না। শিক্ষা, আইনের শাসন, রাজনৈতিক সংস্কার, সামাজিক সমতা, প্রযুক্তির ব্যবহার, সামাজিক সম্প্রীতি এবং যুব নেতৃত্বের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর এবং আধুনিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি। এই সমাজ হবে একটি উদাহরণ যেখানে তরুণ প্রজন্ম নেতৃত্ব দেবে এবং সবাই সমান সুযোগ পাবে। একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার এই প্রচেষ্টা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব এবং প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ বাস্তবে পরিণত হবে। এই পদক্ষেপগুলো সমাজের সব স্তরে সমতা, ন্যায়বিচার, এবং সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে।

আমরা আসলে পরিবর্তনকে ভয় পাই। পরিবর্তন নিয়ে একটা অজানা আশঙ্কায় থাকি। এই কারণেই বিগত তিপ্পান্ন বছর ধরে আমরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। আমরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে শুধু বাইরের পরিবর্তন চেয়েছি। বড় বড় সেতু, ট্যানেল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, স্যাটেলাইট নির্মাণের নামে চোদ্দগুষ্টি মিলে সাগর চুরি-ডাকাতি করাকে উন্নয়নের ভ্রমে ভুগেছি। কিন্তু ভেতরের পরিবর্তন ছাড়া বাইরের পরিবর্তন দিয়ে কখনও কিছু করা যায়না। আপনার পরিধেয় বস্ত্র যতই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুক, দিল সাফ না থাকলে আপনার কিছুই সাফ নাই। আর এই সাফসুতরার কারণেই বিপ্লবের প্রয়োজন।

অভ‍্যুত্থান, গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লব যা-ই বলি, রাষ্ট্রের এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া সময়ের দাবি। এই পরিচ্ছন্নতা বিপ্লব ছাড়া সম্ভব না। শুধু অভ‍্যুত্থান শেষ কথা না বরং শুরু মাত্র। পথ অনেক লম্বা। এই লম্বা রাস্তাটা দেখতে না পারলে, যেখানে এখন আমরা দাঁড়িয়ে আছি, সেখানেই থেকে যাব। এই রাস্তায় চলার উপরেই নির্ভর করবে আমাদের উজ্জ্বল অথবা অন্ধকার ভবিষ্যৎ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৩৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৌদি আরব হতে পারতো বাংলাদেশে উৎপাদিত আলু'র বাজার, কেন তা হলো না?

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৪০

..
...
.......খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ১ম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আলু রপ্তানিতে ধ্বস নেমেছে। তাই, আলু রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। অন্যদিকে, ইন্টারনেট ঘেটে দেখা যায়, ২০১১... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তর মানে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের জীবনের ল্যান্ডমার্ক, ৩৬ জুলাই আমাদের চেতনা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৪২




এই ছবিটার গুরুত্ব অপরিসীম।
কেন জানেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের খোলনলচে বদলের ব্লু প্রিন্ট রচনার দায় তাদের কাধে। এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আর স্বাধীনতাকামীদের এক করে ফেলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-আফগানিস্তান কূটনীতি, ক্রিকেট ও বৈশ্বিক বাস্তবতা প্রসঙ্গে!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪০


কথায় আছে শত্রুর শত্রুকে বানাতে হয় বন্ধু- এই প্রবাদ ভারত ও আফগানিস্তানের সমসাময়িক কূটনীতিক তৎপরতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই মাসে কোন আন্দোলন বা বিপ্লব হয়নি, ইহা ছিলো আমেরিকান এম্বেসীর আরেকটি ক্যু

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৫



১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট'এর পর আমেরিকান এম্বসী আরেকটি বড় ক্যু করেছিলো এরশাদকে ক্ষমতা দখলে সাহায্য করে; এরপর আরেকটি বড় ক্যু করে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধানসিঁড়িটির তীরে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৫



ধানসিঁড়িটির তীরে স্বপরিবারে ঘুরতে গেলাম। শালিক সাহেব পিছনে এসেই বসলেন। মেয়ে ছবি তুলতে গেলেই উড়ে গেলেন। বকের ঝাঁক কয়েকবার মাথার উপর দিয়ে টহল দিলেন। ছাগল ছানা খেলছিল বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×