somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ nnএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

পরিপূরক.......

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিপূরক............

০৩ জানুয়ারী ২০২৪ খৃষ্টাব্দ, আমি ৬৭ বছরে পদার্পণ করেছি। অর্থাৎ আমার বরাদ্দ আয়ু সীমা থেকে ৬৬ বছর চলে গিয়েছে।
জন্মদিন মানেই মৃত্যুর আরও কাছে যাওয়া....
জন্মদিন মানেই জীবন পথে এক একটি মাইল ফলক।
নিকটবর্তী হচ্ছে প্রান্তিক শেষ স্টেশন।
জগতের লক্ষ কোটি মানুষের এই পথচলায় আমার মতো অতি ক্ষুদ্র আমির পৃথিবীতে আগমন বা প্রস্থানে কোন ভাবেই আলাদা কোন গুরুত্ব বহন করে না!

বর্তমান নিয়ে আমি আশাবাদী নই। ভবিষ্যত নিয়ে কোনো ভাবনা নাই। কিন্তু অতীত, মানে অতীতের স্মৃতি আমাকে নষ্টালজিক করে।
তখন বয়স হয়তো ৬/৭ বছর হবে, আমরা খেলার সাথীরা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বল বানিয়ে ফুটবল খেলতাম বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ভিতরেই! কখনো খড় সুতলি ও পাট দিয়ে মুড়িয়ে বল বানাতাম আবার কখনো কাঁচা জাম্বুরা পেড়ে দেয়ালে ছুড়ে ছুড়ে একটু নরম করে তা দিয়ে ফুটবল খেলতাম! তখন বাবা আমাকে একসাথে দুটো রাবারের বল কিনে দিলেন- তখন রাবারের বলকে বলতাম ব্যাটবল এবং চামড়ার বলকে ফুটবল! এখন ভাবি সে খেলায় আনন্দ উপভোগ কিংবা উত্তেজনা, কোনোটাই কোন অংশে কম ছিল না!
--------
যখন আরও একটু বড় হলাম, তখন সমবয়সী বন্ধুরা চাঁদা তুলে একটা ফুটবল কিনলাম। ঐ সময় Deer Ball নামে একটি ফুটবল অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। পাকিস্তানের শিয়ালকোটে তৈরী এই বল। সাইজ অনুযায়ী দাম ছিল ৩০-৪০ টাকা। আমরা চার বন্ধু মিলে একটি ৫ নাম্বার সাইজের বল ৪০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। আমরা বল নিয়ে ধানমন্ডি মাঠ, কলাবাগান মাঠ কিম্বা গ্রীনরোড স্টাফ কোয়ার্টার মাঠে টুর্ণামেন্ট খেলতাম।

কিন্তু সমস্যা বাঁধলো খেলা শেষে কার বাসায় বল থাকবে! সবাই নিজের বাসায় রাখতে চায়! এতে একটা সম্মান সম্মান ভাব ছিল আরকি! পরে ঠিক হলো শেয়ারিং করে সবার বাসায় থাকবে। বল যার কাছেই থাকুক- সবাই খুবই যত্ন নিতাম। আমি আমার বেডের পাশে পড়ার টেবিলের উপর রাখতাম এবং রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে বলটা ধরে দেখতাম সব ঠিক আছে কিনা! কেউ কেউ আবার বিছানায় সাথে নিয়ে ঘুমাতো! কিছুদিন পর অপ্রত্যাশিত ভাবে বলটি ফেটে যায়! প্রিয় বলটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা সবাই অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম!

--------

আমাদের প্রতিবেশী কলাবাগান ১ম লেনে একটি ছেলের আমার নামে নাম ছিল। সমবয়সী, স্কুল আলাদা হলেও একই ক্লাসে পড়ি। ছেলেটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা নিউ মার্কেটে একটা দোকানে সেলসম্যানের কাজ করতেন।
সে লেখাপড়ায় অনেক মনোযোগী ছিল। দুজনের নাম এক হওয়ায় অনেক সহপাঠীরা আমাদেরকে একে অপরের দোস্ত বলে সম্বোধন করতো। তখন একই নামের দুজন মানুষের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে দোস্তি/মিতা পাতানোর একটা রেওয়াজ ছিল। আমাদের বেলায় তা হয়নি, কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিলো।

হঠাৎ একদিন বন্ধুটির বাবা জানালো যে তারা সিলেট চলে যাবে। ওখানে এক লন্ডন প্রবাসীর বাড়ি দেখাশোনা করার কাজ করবে। থাকা খাওয়া সহ আরো অনেক সুবিধা! শুনে মন খারাপ হলো। ওরা চলে যাওয়ার দিন আমি এতোটাই কষ্ট পেয়েছিলাম যে, অনেক দিন আমার কোনো কিছুই ভালো লাগতো না। পড়ালেখা, খেলাধুলা, কিছুতেই মন বসতো না! শুধু মনে হতো আমার জীবন থেকে অনেক বড় কিছু একটা হারিয়ে গেছে! বন্ধুটির কথা অনেক দিন ভুলতে পারিনি!
---------

স্কুল ছুটি শেষে স্কুল হোস্টেলে ফিরে যাওয়ার সময় হলেই আমার মনে হতো পিচঢালা রাস্তার প্রতিটি কংক্রিট আমার পা আঁকড়ে ধরছে! রাস্তার দু'পাশের সেই চিরচেনা সাইনবোর্ড গুলো যেন করুণ স্বরে বলছে; আমাদের ছেড়ে চলেই যাচ্ছো কেন? আমার পা গুলোকে কেমন যেন অনুভূতিশূন্য মনে হতো! মনে হতো আমি একটি সুদীর্ঘ পথে অনন্তকাল ধরে হাঁটছি। বুকের ভেতর একটা হাহাকার, অন্তরে একটা শব্দহীন কান্না অনুভব করতাম!
--------
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন দেখা Tom Hanks অভিনিত Cast Away সিনেমাটি অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। মুভিতে টম কার্গো প্লেনের পাইলটের ভুমিকায় অভিনয় করে। একদিন প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়ে তার প্লেন সমুদ্রে ক্রাশ করে। কিন্তু দৈবক্রমে টম বেঁচে যায় এবং অজ্ঞান অবস্থায় মাঝ সমুদ্রে ছোট্ট একটি দ্বীপের তীরে ভেসে ওঠে।

জ্ঞান ফেরার পর সে বাস্তবতা বুঝতে পারে এবং বেঁচে থাকার জন্য চারপাশে পানিতে ভেসে থাকা প্লেনের ধংসাবশেষ ও মালামাল থেকে যথাসম্ভব সবকিছু সংগ্ৰহ করার চেষ্টা করে। এসবের মধ্যে ছিল একটি ভলিবল। সেই বলটির উপর একটি চেহারার অবয়ব এঁকে বলটির গায়ে লেখা প্রস্তুতকারী কোম্পানির নাম অনুসারে নাম দেয় "উইলসন"!

জনমানবশূন্য দ্বীপে একাকিত্ব কাটিয়ে উঠতে টম উইলসনের সাথে কথা বলে। সব ধরনের কথা। কখনো পরামর্শ নেয়, কখনো বকা দেয়, রাগ করে উইলসনের সাথে। এভাবে উইলসন হয়ে উঠে টমের নিত্যদিনের সঙ্গী। গড়ে উঠে একটি অপরিহার্য ও মায়ার সম্পর্ক। এভাবেই কেটে যায় অনেক দিন কিন্তু দ্বীপ থেকে উদ্ধার পেতে কোনো জাহাজের সন্ধান মেলেনি।

তবে ঐ দিন গুলোতে উইলসনকে সাথে নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে গাছ কেটে, গাছের গুঁড়ি আর কিছু গাছের ছাল দিয়ে দড়ি বানিয়ে গড়ে তুলে একটি ভেলা!

মোক্ষম সময় ভেবে একদিন উইলসনকে সাথে নিয়ে এক অনিশ্চিত আশায় দিকহীন সমুদ্রে ভেলা ভাসায়। কিন্তু তীর থেকে কিছু দূরে যেতে না যেতেই ঝড় ও উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে উইলসন ভেলা থেকে ছিটকে পড়ে! টম ভেলা থেকে পানিতে নেমে উইলসনকে ধরতে চেষ্টা করে কিন্তু ঢেউ আর বাতাসের কারণে উইলসন ও ভেলার‌ মধ্যে দূরত্ব দ্রুতই বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে নিজের জীবনের কথা ভেবে টম ভেলার দিকে ফিরে আসে আর বার বার কান্নাজড়িত কণ্ঠে চিৎকার করে বলতে থাকে; I'm sorry, Wilson...I'm sorry!!
----------
অসংখ্য অনুচ্ছেদ আর অধ্যায় দিয়ে রচিত আমাদের এই বিচিত্র ও ছোট্ট জীবন! উপরের ঘটনা গুলো নিতান্তই আমার এবং আমাদের অনেকেরই ঘটনাবহুল জীবনের কিছু অংশ মাত্র! জন্ম থেকে চলমান এই জীবন পথে আমরা অনেক বস্তু, জায়গা, মানুষের সংস্পর্শে আসি। কিছু জিনিস প্রিয় হয়ে উঠে, কোনো জায়গার প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয়, কারো প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয়, মায়ায় জড়িয়ে পড়ি!

কিন্তু প্রতি মূহুর্তে এক একটি নিঃশ্বাস যেমন আমাদের দেহে প্রাণের সঞ্চার করে পর মূহূর্তে বেরিয়ে যায়। তেমনি সময়ের চাহিদা আর জীবনের প্রয়োজনে, সন্ধি বিচ্ছেদের প্রাকৃতিক ও চিরন্তন নিয়মকে অনুসরণ করে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় আমরা অনেক কিছু ছেড়ে চলে আসি, আবার কেউ কেউ আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায়! কষ্ট পাই, কষ্ট দিই! তারপর স্মৃতি নামক বইয়ে এক এক করে যুক্ত হয় অনেক গুলো পৃষ্ঠা! আবার নতুনের আগমনে পরিপূরক খুঁজে নিতে চেষ্টা করি। ঘুরে দাঁড়াতে চাই, দাঁড়াই!
যেমন করে:
* আমরা বন্ধুরা নতুন আরেকটি বল কিনে পুরোনো বলটির দুঃখ ভুলেছি।

* আমার হারানো বন্ধুর জায়গায় নতুন সঙ্গী ও খেলার সাথী খুঁজে নিয়ে কষ্ট ভুলতে চেষ্টা করেছি।

* চিরচেনা ধানমন্ডি-মিরপুর রোডের মায়ার জায়গাটির দখল নিয়েছে শহরের গ্রীন রোড।

*উইলসনের জন্য কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়া টম'কে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে একটি জাহাজ এবং টম ফিরে পায় নতুন জীবন আর নতুন কোলাহল যেখানে চিরতরে হারিয়ে যায় উইলসন!

পরিপূরক খুঁজে পেলেও আমাদের মনের গহীনে কোথাও না কোথাও একটা ক্ষত, একটা কষ্ট তো থেকেই যায়!
তবু আমরা বাঁচি।
আর জীবন?
জীবন কেটে যায় জীবনের নিয়মে!!



সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তর মানে মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের জীবনের ল্যান্ডমার্ক, ৩৬ জুলাই আমাদের চেতনা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৪২




এই ছবিটার গুরুত্ব অপরিসীম।
কেন জানেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের খোলনলচে বদলের ব্লু প্রিন্ট রচনার দায় তাদের কাধে। এই ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আর স্বাধীনতাকামীদের এক করে ফেলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংসদের দ্বিকক্ষবিশিষ্টকরণ: বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৩০

বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাবটি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই নিবন্ধে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংসদীয় পদ্ধতির বৈচিত্র্য এবং বাংলাদেশের বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থার সাথে এর তুলনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-আফগানিস্তান কূটনীতি, ক্রিকেট ও বৈশ্বিক বাস্তবতা প্রসঙ্গে!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪০


কথায় আছে শত্রুর শত্রুকে বানাতে হয় বন্ধু- এই প্রবাদ ভারত ও আফগানিস্তানের সমসাময়িক কূটনীতিক তৎপরতার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই মাসে কোন আন্দোলন বা বিপ্লব হয়নি, ইহা ছিলো আমেরিকান এম্বেসীর আরেকটি ক্যু

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৫



১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট'এর পর আমেরিকান এম্বসী আরেকটি বড় ক্যু করেছিলো এরশাদকে ক্ষমতা দখলে সাহায্য করে; এরপর আরেকটি বড় ক্যু করে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়েছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধানসিঁড়িটির তীরে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৫



ধানসিঁড়িটির তীরে স্বপরিবারে ঘুরতে গেলাম। শালিক সাহেব পিছনে এসেই বসলেন। মেয়ে ছবি তুলতে গেলেই উড়ে গেলেন। বকের ঝাঁক কয়েকবার মাথার উপর দিয়ে টহল দিলেন। ছাগল ছানা খেলছিল বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×