তিনি গৃহবধু থেকে রাজনীতিবিদ। আপোষহীন দেশনেত্রী! তার দেশ প্রেমিক সত্ত্বার কতটুকু আমরা জানি? একটি বিকৃতরুচীর বিরোধী দলের নেত্রীর কুৎসা শুনতে শুনতে জাতি প্রকৃত এক জননেত্রীর দেশপ্রেমের গভীরতা বুঝতে পারেননি, বরং বারংবার বঞ্চিত থেকেছেন।
আমার জীবনে দুই দলের দুই নেত্রীকে দেখা ও তাদের কাছ থেকে পাওয়া ঘটনার উল্লেখ করছি! কোনটি আগে বলি? নিকট বর্তমান নাকি অতীত ঘটমান বর্তমান?
নিকট বর্তমান বলি দুই লাইনে। ২০১১ সাল থেকে চাকুরিতে কমপক্ষে ৭ বার পদোন্নতির বঞ্চনা সহ্য করেছি। এমনকি ২০২৩ এও সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। কারণ আমার বাড়ি বগুড়া, আমার রাজনৈতিক দর্শণ বিপরীত মূখি ছিল। যদিও আমার ফরেনসিক মেডিসিনের মত বিষয়ে জনবল সংকট তীব্র এবং সেই বিষয়ে আমার দুই দুইটি ডিগ্রি / ডিপ্লোমা আছে! ঢাকার মধ্যে চাকুরি করার স্বাদ পুর্ণ হয়নি। অবশেষে সহযোগী অধ্যাপক চলতি দায়িত্বে থেকেই অক্টোবরে অবসরের ছুটিতে গেছি। যদিও আমার পুর্ণ অধ্যাপক হয়া অধিকার ছিল।
অতীত ঘটমান বর্তমান নিয়ে বলি: ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে ৫ মেডিকেল স্থাপন প্রকল্পে প্রভাষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। তখন এই কলেজ ৫টিতে প্রচুর পদের সৃষ্টি করা হয়। এর মধ্যে প্রভাষক পদে ও কয়েকটি সহকারি অধ্যাপক পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়। বাকি বেশিরভাগ বড় বড় পদে রাজস্বখাতের চিকিৎসকদের প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়। অর্থাৎ ননক্যাডার পদে ক্যাডারের লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়।
২০০৫ সালে মাঝামাঝিতে প্রভাষকের পদ সহ সকল পদ রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ঐ সকল পদের বিপরীতে নিয়োগকৃত জনবল রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত হতে আমলাতান্ত্রিকতায় আটকে যায়। আমি নিজে তখন এই প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলাম। মন্ত্রনালয়ে দৌড়াদৌড়ি করে প্রায় ক্লান্ত বিদ্ধস্ত। এই আজ আদেশ হয়, হবে করতে করতে প্রায় ২০০৫ সালের শেষ প্রান্তে উপনীত হই। তখন ম্যাডাম খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ উদ্বোধনের আগে বগুড়া তার নির্বাচনী এলাকা সফর করছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেই নির্বাচনী সময়ের শেষ সফর! বগুড়া সার্কিট হাউজে উঠেছেন। সাথে বেশ কজন মন্ত্রীও সফর সংগী। আমি জনবল রাজস্বখাতে নেবার দাবী জানাতে ততকালীন অধ্যক্ষ স্যার অধ্যাপক ডা: মওদুদ হোসেন আলমগীর আমাদের প্রিয় পাভেল স্যারের অনুগ্রহে ম্যাডামের সাথে কথা বলার সুযোগ পাই।
সার্কিট হাউজ লোকে লোকারণ্য। আমি কম্পিত গলায় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সামনে বলতে শুরু করলাম: ম্যাডাম, আমরা এতজন প্রভাষক ১৯৯৫ সালে নিয়োগ পেয়ে আজ ২০০৬ সালের শুরু হতে যাচ্ছে এখনো রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত হতে পারিনি। অথচ প্রায় একবছর আগে পদ গুলো রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত হয়ে গেছে।।আমাদের বয়স প্রায় ৪০+ বছর। আমাদের কারোই নতুন চাকুরিতে ঢোকার বয়স নাই। প্রায় সকলেই বিবাহিত এবং সন্তান সন্ততি নিয়ে পারিবারিক জীবন যাপন করছি। এই মূহুর্তে যদি রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত হতে বিলম্ব হয়..
[/sb
ম্যাডাম আমাকে বললেন: ডা: শাওন, থামুন! তখন পাশেই স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড: খন্দকার মোশারফ স্যারকে বললেন: মন্ত্রী সাহেব ডা: শাওন যে বিষয় বললেন, সেই বিষয়ে দেরী হচ্ছে কেন?
স্বাস্থ্য মন্ত্রী কিছুটা কানের কাছে মুখ এনে বললেন: ম্যাডাম, কাজ প্রায় শেষ। তবে এই তালিকায় কিছু আওয়ামী ডাক্তার আছে, তাদের বাদ...
ম্যাডাম খালেদা জিয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে সকলের সামনে ধমক দিয়ে বললেন: ঐ(আমাকে দেখিয়ে) ডাক্তারের কথা শুনলেন না? ওদের বয়স হয়েছে, ওরা পরিবার নিয়ে কি করবে? কোথায় যাবে? আওয়ামীলীগ যারা করে তারা কি এদেশের জনগণ না? আমি এক সপ্তাহের মধ্যে এই গেজেট দেখতে চাই!
এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন: ডা: সাহেব আর একটু সময় দিন।
এরপর অন্য কাজে অন্যদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পরলেন। আমি আনন্দ চিত্তে অন্যান্যদের স্থান ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে আসলাম!
৭ নয় সম্ভবত: ১৫-১৮ দিন পর সেই বিখ্যাত গেজেট পাশ হলো। যেখানে শুধু ৫ মেডিকেল কলেজের জনবল নয়, ১৯৭৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে ২০০৫ সালের মে মাস পর্যন্ত সকল মন্ত্রনালয়ের সকল প্রকল্পের পদ রাজস্বে অন্তর্ভুক্ত করে পদের বিপরীতে সকল জনবলকে রাজস্ব খাতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এমনকি যদি ইতিমধ্যে কেউ মারা যান তাকে মৃত্যুর আগের দিন রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত দেখিয়ে সকল পেনশনের সুবিধা দিতে গেজেট আদেশ প্রকাশিত হয়। শুধু তাই নয় শিক্ষা মন্ত্রী এই গেজেটে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ২০০৭ সালের মে পর্যন্ত সকল প্রকল্প এই সুযোগের মধ্যে ঢুকিয়ে নেন। এই এক গেজেটে বাংলাদেশের শুরু থেকে ঐ সময় পর্যন্ত প্রায় ৬৫,০০০ পরিবার রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত ও পেনশন সহ সকল সুযোগ লাভ করে। দেশের জনগনের মধ্যে কোন বিভেদ ম্যাডাম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসাবে করেন নি।
অথচ তাকে মিথ্যা কত অপবাদ দেয়া হয়েছে। কুলাংগার কিছু বিচারক তাকে মিথ্যা ও ভুল ভাবে শাস্তি দিয়েছেন। চিকিৎসা বঞ্চিত করতে কুলাংগার আইনমন্ত্রী আনিস ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কামাল চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলতেন। আর প্রধানমন্ত্রির পদে জবর দখলে নেয়া ব্যাক্তির মুখ দিয়ে অনর্গল মিথ্যা বয়ান শুনতে বাধ্যছিল দেশের জনগন। তারা কোনদিন দেশের নেতা হতে পেরেছে কি? তারা দলের বাইরে কোনদিন ভাবতে পেরেছে কি?
আল্লাহর অশেষ রহমতে জুলাই আগষ্ট বিপ্লবে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। ম্যাডাম খালেদা জিয়াও মুক্ত হয়েছেন। তিনি চিকিৎসার সুযোগ ফিরে পেয়েছেন এবং গত রাতে চিকিৎসার জন্যে ইংল্যান্ড গিয়েছেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন,আল্লাহপাক তাকে রোগমুক্তি করে আবারো আমাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দেশ সেবার সুযোগ করে দিন।
আমীন!
ডা: মো; মোজাহারুল ইসলাম শাওন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১২