গল্পঃ মূল্যবোধ.....
নিগারের স্বামী মুকিতকে আমি চিনি। তবে তেমন ঘনিষ্ঠতা না থাকলেও মাঝেমধ্যে কথাবার্তা হয়। নিগার আমাদের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী কালাম ভাইর একমাত্র মেয়ে নিগার। কালাম ভাই আমার বয়োজেষ্ঠ। ছেলেবেলা থেকেই আমরা পাশাপাশি পাড়ায় থাকি। আমাদের পারিবারিক সুসম্পর্ক ছিলো।
নিগার চাকরি করে। বছর দশেক হল মুকিতের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। মুকিত ভূমি অফিসে ছোটখাটো জব করে। তরতরিয়ে টাকাপয়সার মালিক হয়েছে। ওর বিয়ের কিছুদিন পরেই ভাবী মানে কালাম ভাইর স্ত্রী মারা গেছেন। নিগার-মুকিত দম্পতি কালাম ভাইয়ের বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে তিন হাজার স্কয়ার আয়তনের একটা ফ্ল্যাট কিনেছে। না হলে বাবাকে দেখবে কে? কিন্তু যার জন্য এত কাণ্ড সেই কালাম ভাইও মাসছয়েক আগে চলে গেলেন।
মুকিত এবং নিগারের ৮/৯ বছরের একটি ছেলে
আছে। পাড়াভিত্তিক একটা গেটটুগেদারে মুকিত আমাকে সেদিন বলছিল, "আংকেল,
নিজের ছেলে বলে বলছি না, দীপ্ত (ছেলের নাম) জিনিয়াস হবে। এখনই ইংরেজিতে ফটাফট কথা বলে। আমাদের সবাইকে শাসন করে!--জানেন এই বয়সেই দাড়াজ, আলিবাবা, অ্যামাজন অ্যাপস চিনে গেছে। ওই তো এখন বেশিরভাগ খাবারের অর্ডার করে, এই যে আমার স্লিপারটা দেখছেন এটা গত সোমবার ও অনলাইনে আনিয়েছে, আই-কিউ লেবেলটা বুঝতে পারছেন!"
আমি বললাম, খুব ভালতো আমাদের পাড়ার নাম
হবে। আমি মুকিতের পিঠ চাপড়ে, 'একসেপশনাল' বলে এগিয়ে গেলাম!
মুকিত-নিগার দম্পতির একমাত্র ছেলে মাস্টারমাইন্ড ইংরেজি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আমার সাথে পরিচয় পর্বটা ইংরেজিতেই করেছে।
বাডির কাছেই কুপার্স বেকারি এন্ড ফাস্টফুডে আমি কিছু কেনাকাটা করছিলাম। তখন কালাম ভাইয়ের নাতি দীপ্ত ওদের ড্রাইভারের সঙ্গে কোচিং থেকে ফিরে কুপারসে ঢুকেছে ফাস্টফুড কিনতে। আমি ওর গালটা টিপে আদর করলাম। ও হঠাৎ আমার বাঁহাতটা ধরে কবজি উল্টে আমার হাতঘড়িটা দেখল। "Nice one, How much?"- বলে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম, অস্ফুটে দাম বললাম।
"দেন ইউ আর অ্যা পুয়োর ম্যান। লাস্ট মানডে মমের বার্থডেতে আমার বাবা মমকে একটা রিস্টওয়াচ কিনে দিয়েছে ওয়ান সেভেন্টি ফাইভ থাউসেন্ড দিয়ে।"
আমি দীপ্তর পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম- 'খুব ভালো'।
আমায় প্রসংশা পেয়ে দীপ্ত বলে, "How much is your income? Mom says Dad earns more than a million taka a month. We have three cars. How many cars do you have?"
আমি কোনো উত্তর দিতে পারছিলাম না। দীপ্তর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম...তখন ড্রাইভার দীপ্তর হাত ধরে বলে, "চলেন ভাইয়া, দেরি হলে আম্মা বকাদিবে"।
সাথে সাথে ৮/১০ বছরের দীপ্ত গর্জে ওঠে, "You don't touch me, stupid, nasty. Mom will scold you again"!
পাড়াতুতো এই নাতিটিকে একটা ক্যাডবেরি কিনে
দেব ভাবছিলাম.... আগামী প্রজন্মের মধ্যে যা মূল্যবোধ দেখছি তাতে আমার চকোলেট দেবার ইচ্ছেটা প্রকাশ পেলে আবার ধৃষ্টতা না হয়ে যায়, ইতোমধ্যেই গাল টিপে দিয়েছিলাম.....
(যদিও ঘটনা সত্য, তবুও এমনটা প্রত্যাশিত নয় বলে গল্প বললাম)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬