somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

বুক রিভিউঃ ফাইভ আইজ’

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘ফাইভ আইজ’

যেকোনো অনুবাদ বই পড়ার আগে প্রথমেই বুঝতে হবে অনুবাদ কি। এক কথায় অনুবাদ এর অর্থ হচ্ছে ভাষান্তর। অর্থাৎ কোনো বক্তব্য বা রচনাকে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত করা।
অনুবাদের মধ্যে আবার দুটি ধারা আছে - একটা হলো আক্ষরিক/শব্দ/বাক্যের অনুবাদ আর অন্যটি হলো ভাবানুবাদ। প্রত্যেক ভাষারই নিজস্ব গঠনভঙ্গি, প্রকাশরীতি ও বৈশিষ্ট্য আছে। অনুবাদে সে বৈশিষ্ট্যের যথাযথ প্রতিফলন দরকার। অনুবাদের সময় মূল বক্তব্যকে কোনোভাবে বিকৃত করা যাবে না। কোনো রচনার বক্তব্য এবং বিষয়কে পরিবর্তন না করে শুধু ভাষার পরিবর্তন করাকেই অনুবাদ বলা যায়। এটাকে আক্ষরিক অনুবাদ বলাই শ্রেয়। তবে আক্ষরিক অনুবাদ পাঠ কখনো কখনো সাবলীল হয়না, কিন্তু মূল লেখকের লেখা তথ্য নির্ভর হয়। অন্যদিকে ভাবানুবাদ বেশী পাঠকপ্রিয় হলেও কখনও কখনও ব্যাখ্যা বিকৃত হবার সম্ভাবনা থাকে। অনুবাদ হলো এক ধরনের শিল্প। অনুবাদ কর্মে যদি ভাষায় মুন্সিয়ানা থাকে আর মূলের রূপ, রস, স্বাদ ও সৌন্দর্য্য অক্ষুণ্ণ থাকে তবে অনায়াসে তা শিল্প উত্তীর্ণ হতে পারে।



‘ফাইভ আইজ’ হচ্ছে রিচার্ড কেবরেজ এর ‘দ্য সিক্রেট হিস্ট্রি অফ দ্য ফাইভ আইস’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ। অনুবাদ এবং সামাণ্য ভাবানুবাদ করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক Kazi Zawad। তাঁর মতো বিখ্যাত গুণীজনের বইয়ের রিভিউ লেখার চেষ্টাও আমার জন্য ধৃষ্টতা হবে। তাই আমি শুধু আমার 'পাঠপ্রতিক্রিয়া' সংক্ষেপে লিখতে চেষ্টা করছি।

৮০ বছর আগে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু থেকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা, ইরাক যুদ্ধ, ভিয়েতনাম, তালেবান, বিন লাদেন, আফগানিস্তান যুদ্ধ, গোটা দুনিয়া তোলপাড় করে দেওয়া উইকিলিকসের স্নোডেন, এমনকি হাল আমলে বিশ্বনিরাপত্তায় রাশিয়ার হুমকি, চিন-মার্কিন বানিজ্য যুদ্ধ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা বিস্তারিত তুলে ধরে রিচার্ড কেরবাজ অথ্যানুসন্ধানী এই বইটি লিখেছেন- যা আমাদের জন্য মাতৃভাষায় তুলে ধরেছেন শ্রদ্ধেয় কাজী যাওয়াদ ভাই।

'ফাইভ আইজ' হচ্ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের একটা গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক- যার সাথে আমরা কম বেশী পরিচিত হয়েছি মাত্র এক দশকেরও কম সময়ে। বইয়ের লেখক সেকেন্ডারি সোর্স এবং আর্কাইভাল রিসার্চের চেয়ে ইন্টারভিউ এবং ইন্টারনেট সার্চের উপর বেশি নির্ভর করে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন (সূত্রঃ টীকা ও তথ্যসূত্র /Notes & Sources)। এক্ষেত্রে বইয়ের অনুবাদক কাজী জাওয়াদ শুধু অনুবাদ না করে পাঠকদের কাছে সহজবোধ্য করতে কোথাও কোথাও ভাবানুবাদ করেছেন, যা পাঠকদের জন্য আরও বেশী পাঠআগ্রহী হয়েছে। আবার অল্প অল্প যায়গায় কিছু কিছু শব্দ এবং বাক্যের অনুবাদের দুর্ভেদ্যতা রয়েছে। অবশ্য সেই দুর্ভেদ্য ভেদ করতে ফাইভ আইজ বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা "কয়েকটি বিদেশী শব্দের অর্থ ও উচ্চারণ" পড়তে হবে। হয়তো অনেকেরই ধারণা করেন- অনুবাদ মানেই মূল লেখকের লেখাটা পড়ে সেটাই বাংলায় লিখে দেওয়া! না বিষয়টা তা নয়, এই অনুবাদ করতে কাজী যাওয়াদ সাহেবকে অনেক পড়াশোনা এবং গবেষণা করতে হয়েছে, যার প্রমাণ- সূত্রঃ টীকা ও তথ্যসূত্র /Notes & Sources....

গুপ্তচরবৃত্তির পূর্ব পুরুষ স্যার ফ্রান্সিস ওয়ালসিংহ্যাম। রানী প্রথম এলিজাবেথের মুখ্যসচিব এবং গুপ্তচর প্রধান হিসেবে তিনি ষোড়শ শতকের শুরুতে গোয়েন্দাবৃত্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেন। যার ধারাবাহিকতায় ১৯০০ সালের শুরুতেই বৃটিশরা পেশাদার গোয়েন্দাবৃত্তি চালু করে। কিন্তু বৃটিশ গোয়েন্দাদের সেই ইতিহাস ঐতিহ্য এখন মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে অনেকটাই ম্লান। এটা পেশাদার গোয়েন্দা বাহিনী সদস্যদের কাছে একটি আকর্ষণীয় বই, যেখানে লেখক এর অতুলনীয় গ্রহণযোগ্যতা, স্পষ্ট কাঠামো, সাবলীল উপস্থাপণ, অপ্রত্যাশিত প্রাসঙ্গিকতা ও অপরিহার্য্যতা তুলে ধরেছেন।

MI5, MI6, CIA, FBI, KGB, MOSSAD, RAW এর মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলি গোটা পৃথিবীজুড়েই একেকটি পরিচিত নাম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রাথমিকভাবে ব্রিটেনের ব্লেচলি পার্কের মধ্যে যুদ্ধকালীন সহযোগিতার জন্য যুক্ত্ররাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। তখন বৃটিশ গোয়েন্দা আর্লিংটন জার্মান গোয়েন্দাদের সাংকেতিক কোডগুলি ক্র্যাক করছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা সোভিয়েত সাংকেতিক বার্তাগুলো ডিক্রিপ্ট করেছিলেন। শুরুতে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে এই গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক গঠন করলেও ১৯৪৯ সালে কানাডা এবং ১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে অন্তর্ভুক্ত করে এই জোট প্রসারিত করা হয়েছিল। জাপান ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি নন-এংলোস্ফিয়ার দেশ এই গোয়েন্দা জোটে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও অদ্যাবধি এর সদস্যপদ উল্লেখিত ৫ টি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।

'ফাইভ আইজ' কোনো গোয়েন্দাকাহিনীর বই নয়, বরং এই বইটা হচ্ছে গোয়েন্দাদের গোয়েন্দাগিরির তথ্যভিত্তিক সত্য ঘটনা বর্ননা, যা পড়ে থ্রিলারের স্বাদ আর আনন্দ শুধু নয়, বরং গোয়েন্দা দুনিয়ার বিচিত্র সব তথ্যাবলী জানতে পারবে পাঠক। এই বই শুধু শিক্ষা মানেই নয়, বরং সব দেশের গোয়েন্দা বাহিনীর জন্য এবং সব শ্রেণীর পাঠকদের জন্য শিক্ষা জ্ঞানের উন্মুক্ত দ্বারও। বই পড়ে যেমন আনন্দ পাওয়া যায়, তেমনি দারুণ কিছু শেখাও যায়, এবং আত্মবিশ্বাস আর জ্ঞানার্জনটাও হয় খুব ভালোভাবেই। আর যারা গোয়েন্দা হওয়ার নেশায় বিভোর হয়, কে বলবে, এই বই পড়ে তাদেরও কেউ কেউ হয়তো একদিন বাস্তব জীবনে গোয়েন্দাও হয়ে যাবেন। একটা দেশের জন্য গোয়েন্দা বা গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক যে কতটা প্রয়োজনীয়, তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা থাকেন, তারাই বুঝতে পারেন।

ফাইভ আইজ বইটি চার ভাগ বা পর্ব ভাগ করা হয়েছে। আবার চারটা ভাগ বা পর্বে মোট চোদ্দটি অধ্যায় আছে। প্রতিটি পর্ব, প্রতিটি অধ্যায় পড়তে পড়তে পাঠক একটা থ্রিল, সাসপেন্স অনুভব করবেন যে পরের অধ্যায় না পড়ে বইটি হাত থেকে রাখতে পারবেন না। আবার এমনই এক নেশায় পেয়ে বসবে যে, আরও জানার জন্য, বোঝার জন্য আবার এবং আবারও পড়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে যাবেন! বইটি পড়ে এটা বুঝেছি এবং জেনেছি যে, একজন গোয়েন্দা বা গুপ্তচর কি ভয়ানক ঝুঁকি নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে যেমন মোনাফেকী করতে পারে, তেমনই আবার নিজ দেশের জন্য কতো নির্মম কাজগুলো সাবলিলভাবে করতে পারে! গোয়েন্দাদের ভুল তথ্যের জন্যই, কিম্বা পরিকল্পিত ভাবে ভুল /মিথ্যা তথ্য তৈরী করেও কিভাবে একজন নিরাপরাধী নাগরিকের জীবন দুর্বিষহ করে দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণ সিরিয়ার নাগরিক আরারি এবং একটা দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে তার প্রমাণ ইরাক যুদ্ধ।

MI5, MI6, CIA, FBI, KGB, MOSSAD, RAW কাজ করে দেশের জন্য, দেশের মানুষের স্বার্থে। অথচ আমাদের দেশের গোয়েন্দারা আছে শুধু কাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাবে, কাকে প্রহসনের নির্বাচনে হারাবে কিম্বা জেতাবে সেই দ্বায়িত্বে! সে যাই হোক, 'ফাইভ আইজ' পড়ার পর থেকে আমি আমার চারিদিকে যারাই আছেন, যাদেরকেই দেখি, তাদেরকেই গোয়েন্দা বা গুপ্তচর সন্দেহ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:০৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিয়ে দেখতে দিন কে বাঘ কে বিড়াল?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬



সব দলের অংশগ্রহণে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের নির্বাচন আগে দিন। কোন দলকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে কি করেনি সেইটাও জাতিকে দেখতে দিন। পিআর পদ্ধতির জাতীয় সংসদের উচ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×