গুম খুনের মতো মানবতা বিরোধী অপরাধীদের জন্য ভি আই পি প্রিজন ভ্যান.....
টানা ১১ দিন চোখ বেঁধে, দুই হাত পেছনে হ্যান্ডকাফ লাগানো অবস্থায় নারকীয় শারীরিক নির্যাতন করে ৬ নভেম্বর রাত দশটায় গ্রেফতার নাটকের পর র্যাব-১০ ধলপুর ক্যাম্প থেকে পরের দিন ফজরের সময় মিরপুর থানায় হস্তান্তর করার ঘটনা আগেও লিখেছি।

সকাল দশটায় থানা হাজত থেকে দড়ি বেঁধে প্রায় ৭০/৮০ জন আসামি বের করে- থানায় দরজায় প্রিজন ভ্যানের পেছনে লাইন করে দাঁড় করিয়েছে। আমাদের নিয়ে যাবে কোর্টে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানাতে। আমার সারা শরীরে রক্তাক্ত জখম.....হাটার শক্তি নাই। জাহিদের কাঁধে ভর দিয়ে হেটে চলছি...জাহিদের পায়ে অবস্থাও ভালো না। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটে। গুম অবস্থায় র্যাব ওকে পেরেকঠোকা কাঠের খড়ম পড়িয়ে ইলেক্ট্রনিক শক দিয়েছে। কষ্টের ছাপ স্পষ্ট সবার চোখমুখে। দুইজন করে আসামির ডান-বাম হাতে আবার সেই হ্যান্ডকাফ এমন টাইট করে লাগিয়ে দেয়- সামান্য নড়াচড়া করলেই হাত কেটে যায়। দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে সব আসামিদের স্বজনরা। দুজনের জন্য ১০০/- পুলিশকে দিয়ে হ্যাণ্ডকাফ লুজ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে অনেকটা ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ঠেলে প্রিজন ভ্যানে ঢুকিয়ে দিয়েছে। একটা গাড়িতে দুই পাসে দুটি ষ্টীলের ভাংগা বেঞ্চি। যারা আগে ঢোকে তারা বসে, বাকীদের বাসের উপরে দুটি পাইপ ধরে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। সবাই দাঁড়িয়ে গেলেও ২৫ জনের সংকুলান হবে। সেখানে আমরা একটা ভ্যানে ৪২ জন!

থানা হাজতে পানির অভাবে আসামিরা কেউই বাথরুম, হাতমুখ পরিস্কার, দাঁতব্রাশ করার সুযোগ পায়নি। সবাই ঘামে জবজবে.... প্রচন্ড দুর্গন্ধ! আলো বাতাস চলাচল বন্ধ বাসের ভিতরে চলে গাঁজাখোরদের মচ্ছব। দম বন্ধ হয়ে যায়.....কেউ কেউ বমি করে দেয় কারোর গায়ের উপর!
প্রিজন ভ্যানে কোনো ফ্যান নেই। ওপরের দিকে এক ফুট প্রস্থের লম্বালম্বি লোহার জাল রয়েছে। ভ্যানের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের এটাই একমাত্র পথ। তবে ওই পথ অনেকটা রুদ্ধ হয়ে যায় ভারসাম্য রক্ষার জন্য জাল ধরে আসামিদের দাঁড়ানোর কারণে। ওই জালের ফাঁক দিয়ে তাঁরা বাইরের মুক্ত পৃথিবীও দেখেন। ফলে ভ্যানে গরম থাকে বাইরের চেয়ে বেশি। গরমে পানির পিপাসা পেলেও মেটানোর ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশে মানবদেহের সহনশীল তাপমাত্রা প্রায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাইরে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলেও প্রিজন ভ্যানের ভেতর তা ৪০/৪২ ডিগ্রীর কম না। ছয় মাসের জেল জীবনে ৮/১০ বার এইসব প্রিজন ভ্যানে প্রতিবার ২/৩ ঘন্টার জার্নি করতে হয়েছে।

আজ দেখলাম-
ভিআইপি আসামীদের বহন করার জন্য এসি প্রিজন ভ্যান।
প্রথমেই চেনা যাক ভি আই পি আসামি কারা....
ভি আই পি আসামি তারাই, যারা আমাদের মতো দেশপ্রেমিক নাগরিকদের গুম খুনের সাথে জড়িত। সোজা কথায়- খুনী এবং রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডার লুণ্ঠনকারী।
রাষ্ট্রকে যারা ধ্বংস করেছে সেইসব খুনী লুটেরা ভি আই পি আসামিদের বহন করার জন্য ভি আই পি প্রিজন ভ্যান। ৫২ সীট সংকুলান সম্মত একটা বাসে ১৬ জন ভি আই পি খুনী, মানবতা বিরোধী আসামির জন্যশীতাতপনিয়ন্ত্রিত সুপরিসর বাসে রয়েছে আরামদায়ক সিট ও উন্নত পরিবেশ। একসময় রাস্ট্রের উচ্চপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী অপরাধী ও পয়সাওয়ালা আসামীদের বহন করার জন্য জাপানি ইসুজু চেসিসের উপর প্রিজন ভ্যানগুলো নির্মান করা হয়েছে।
অপরাধী বা অভিযুক্ত যে-ই হোক, তাঁদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা দিতে হয়। একজন অপরাধীরও মানবাধিকার রয়েছে। তাই তাঁর মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে নজর রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। গরমের সময় আসামিদের প্রিজন ভ্যানে বহনের জন্য ন্যূনতম সুবিধা থাকা প্রয়োজন। তবে তা ভি আই পি খুনী মানবতা বিরোধী আসামিদের জন্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




