করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চীন, ইতালি ও ইরানসহ অন্তত ৪০ টি দেশ স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই তালিকায় তুর্কি, লিথুয়ানিয়ার মতো দেশ আছে যেসব দেশে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩ জনের কম। গতকাল দিল্লি সরকারও ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।
এইসব নিউজটিউজ বোধহয় আমাদের সরকারের মাথাব্যক্তিরা দেখছেন টেখছেন না। শিক্ষামন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন 'স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করার মতো জরুরি অবস্থা বা সময় এখনো আসেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, :করোনার কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ করার যুক্তিভিত্তি নেই।' মনে হচ্ছে, তিনারা জরুরি সময় আসার অপেক্ষা করছেন। শতশত মানুষ আক্রান্ত হলে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণার একটা যুক্তিভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাবে।'
গত তিনদিনে ইতালিতে ৪৫০+ মারা গেছে। নতুন করে ৬০০০+ আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ গড়ে ২০০০ মানুষ প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা ধারনা, জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে ইতালিতে মৃত্যু ও সংক্রামণ বেশি। এখন পর্যন্ত ইতালিতে মৃত্যুর হার ৭%। সময়ের সাথে পারসেন্টেজ বাড়ছে।
আমাদের দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ইতালি চাইতে অনেক অনেক বেশি। কিন্তু চিকিৎসা ও জীবনযাপনমান যথেষ্ট কম। আমাদের দেশে 'করোনা' ছড়িয়ে পড়লে ইতালির থেকে অনেক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও 'বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকাভুক্ত করে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।( সূত্র:বিবিসি)
তাই কোনপ্রকার রিস্ক না নিয়ে করোনা আক্রান্ত সনাক্ত হওয়ার পরপরই আক্রান্ত রোগীদের অঞ্চলসহ বিভাগীয় শহরগুলোর স্কুল-কলেজ কয়েকসপ্তাহের জন্য বন্ধ করার দরকার ছিলো। সরকার সেটা করেনি, এবং এখনো করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। করোনা নিয়ে সরকাররের গৃহীত ব্যবস্থা দেখে বা কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য শুনে দেশের পরিস্থিতি বুঝা কঠিন।
০
সর্দিকাশি ও শ্বাসকষ্ট ভোগা এক আত্মীয় করোনার আতংক থেকেই গতকাল হেল্পলাইনে কল করেছিলেন। ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, ফ্যামিলির কেউ প্রবাসী কিনা? প্রবাসী কারো সাথে সদ্য দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে কিনা....
'পরিবারে প্রবাসী নেই, প্রবাসীর সাথে দেখাসাক্ষাৎ হয় নাই' জেনে ডাক্তার নিশ্চিন্ত করে স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বললেন। মনে হচ্ছে, এটা আমাদের দেশে করোনায় আক্রান্ত মানুষ চিহ্নিত করার প্রথম ধাপ। অর্থাৎ 'প্রবাসী' ব্যক্তির শরীরে করোনার সিন্ড্রোম 'জ্বর,সর্দিকাশি' হলে 'করোনা-পরীক্ষা' করা হচ্ছে। অন্যান্যদের বেলায় তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যদি এমনটা হয়, এবং সিজনাল জ্বর সর্দিকাশি মনে করে করোনা-আক্রান্ত মানুষ সাধারণ মানুষের সাথে দিনযাপন কতে তাহলে এই ভাইরাস ফুরফুর করে দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়বে। সুতরাং 'জ্বর, সর্দিকাশিতে' আক্রান্ত সকলকেই পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। যেহেতু করোনার নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন নেই, সেহেতু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়াটা জরুরী নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত সময় থাকতে সচেতন থাকা এবং ব্যবস্থা নেওয়া।