আজকের পর্ব: ফ্রিডা কাহলো ও দিয়েগো রিভেরো
মার্ক্সসিস্ট আর্টিস্ট দিয়েগো রিভেরো ও ফ্রিডা কাহালো- বিংশ শতাব্দীর এক আলোচিত আর্টিস্ট দম্পত্তি। আর্টের আতুঁড়েঘর ইউরোপে তখন কোন মেক্সিকান আর্ট প্রবেশ ঘটেনি। বলতে গেলে ক্যানভাসের দুনিয়ায় মেক্সিকো ছিল একেবারে প্রস্তর যুগে। এর অবসান ঘটান ডিয়েগো রিভেরো, বেশ আলোচিত হয়ে উঠেন ইউরোপ ও আমেরিকা জুড়ে। রিভেরো হয়তো আরো আলোচিত হতেন যদি মেক্সিকো কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হতেন। অবশ্য লুভ্যর প্রথম মেক্সিকান হিশেবে ফ্রিডা কাহালোর পেইন্টিংস কেনে, যা ইউরোপে কোন জাদুঘরের পক্ষে প্রথম কোন মেক্সিকান আর্টিস্টের ছবি কেন হলো।
ফ্রিডা কাহালো রিভেরোকে চিনতেন ছোটবেলা থেকেই। সেসময় একটি ট্রাম দূর্ঘটনায় ফ্রিডা মারাত্নক আহত হয়, তার মেরুদন্ডের তিন জায়গায় ফেটে যায়, এক পায়ের গোড়ালি ফেটে চুরমার হয়ে যায়, এক পায়ে প্রায় ১১টা ফাটল ছিল। একটি লোহার রড শরীরের একপ্রান্তে ঢুকে আরেক প্রান্ত দিয়ে বের হয়। বাচার সম্ভাবনা ছিল কম কিংবা বাচলেও সারাজীবন হুইল চেয়ারে কাটবে এমনটাই ভাবনা ছিল সবার, কিন্তু মনের অদম্য জোরে সকল ভাবনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ফ্রিডা আবার হেটে বেড়াতে লাগলো। ৬ মাস শয্যাশায়ী ছিল, সে সময়ই ফ্রিডা ঠিক করলেন পেইন্টিং কে পেশা হিসেবে বেছে নিবেন।
এখন আসছি তাদের আত্মজীবনী নিয়ে। দিয়েগো রিভেরো ও ফ্রিডা কাহালো- উভয়েই তাদের বহুগামীতা নিয়ে কোন লুকোচুরি করেননি। বিয়ের আগে দিয়েগো রিভেরো একপ্রকার বলেই নিয়েছিলেন, বিয়ের পরও তিনি ফ্রিডার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন না, ফ্রিডা তা মেনে নিয়েই বিয়ে করেছিল। একসময় ফ্রিডাও আর একগামী থাকেননি এবং এসব ঘটনা ফ্রিডা গোপনও রাখেননি রিভেরা'র কাছে।
একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ না করে পারছি না-
দিয়েগো রিভেরো যেহেতু কমিউনিজমের প্রতি অনেক অনুরক্ত ছিলেন, সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিতাড়িত লিওন ট্রস্কি'কে মেক্সিকো আনেন দিয়েগো রিভেরো, শুধু তাই নয় নিজ বাসায় আশ্রয় দেন ট্রস্কি'কে। সেই ট্রস্কি'র সাথে দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন খোদ ফ্রিডা নিজে। ট্রস্কি'র মতন হেভিওয়েট একজন রাজনীতিবিদের সাথে জড়িয়ে পড়াটা বেশ ঝুকিপূর্ণ কাজ, কারণ সেসময় স্টালিনের গুপ্তঘাতকরা ট্রস্কি'কে মারার জন্য মরিয়া হয়ে খুজছিল। এই অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে ট্রস্কি'র স্ত্রী আপত্তি জানালে ট্রস্কি সেই বাসা ত্যাগ করে অন্য বাসায় যান, যেখানে স্টালিনের গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন ট্রস্কি।
আমরা হয়তো এসব কিছুই জানতে পারতাম না যদি না তারা আত্মজীবনী নিয়ে সততার পরিচয় না দিতেন। বাঙ্গালীর আত্মজীবনী লেখায় একদম সততা নেই। এই বিষয়ে শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদ দারুন একটা কথা বলেছিলেন,
"বাঙ্গালীর আত্মজীবনী হলো শয়তানের লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী"
কথাটি উনি যথার্থই বলেছেন। আত্মজীবনী লেখাতে সততার আনয়ন জরুরী, যেটিতে ইউরোপে চালু রয়েছে অনেক আগ থেকেই। আমাদের দেশে যেসব আত্মজীবনী বের হয় সেগুলো অধিকাংশ হাস্যকর নার্সিসিজমে ভরা, এরকম সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



