somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মযুদ্ধের ইতিকথা, পর্ব-৫

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাইট ও শিভালরি


ক্রুসেডের সাথে নাইট (Knight) ও শিভালরি(Chivalry) শব্দ দুটো আঙ্গাঅঙ্গিকভাবে জড়িত। কোন যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য ইউরোপে রাজারা সৈনিকদের নাইট উপাধি দিয়ে থাকতো। সাধারণত ঘোড়াসাওয়ারাই এই উপাধি পেয়ে থাকতেন। পদাতিক সৈনিকের নাইট উপাধি প্রাপ্তি বিরল ঘটনা। অনেক রাজ্যে পদাতিক সৈনিকের নাইট উপাধি দেওয়া বারণ ছিলো। অবশ্য নাইট প্রাপ্তি একটি জটিল প্রক্রিয়া, অনেক ক্ষেত্রে উচু বংশের না হলে তাকে নাইট উপাধি দেওয়া হতো না। আবার নাইট উপাধি দেওয়া হতো একটি জাকজমক অনুষ্ঠানের মাধ্যেম। কেউ নাইট উপাধির জন্য ভূষিত হলে তাকে জাকজমক অনুষ্ঠানের জন্য মোটা অংকের অর্থের যোগান দিতে হতো, অন্যথায় তাকে নাইট উপাধি দেওয়া হতো না। অবশ্য রাজা কিংবা সম্রাট আন্তরিক হলে যে কারো নাইট উপাধি পেতে বাধা থাকতো না। নাইটদের রাজারা জায়গীরও দান করতেন। অবশ্য সামন্ত ব্যবস্হায় কেউ একবার নাইট হলে বংশ পরম্পরায় সেই নাইট উপাধি ও জমি ব্যবহার করতে পারতো। নাইটরা কখনও স্হানীয় শাসক হিসেবেও নিযুক্ত হতেন। সে সময়ে সমাজে নাইটদের পদমর্যাদা ছিলো যেকোন পেশার লোকদের চেয়ে উচুঁতে। বর্তমান যুক্তরাজ্যে এখনও যারা Count, Lord, Marques, Duke উপাধিগুলো নিয়ে আছেন, তারা সেই নাইটদের বংশধর। অবশ্য পরবর্তীতে অনেক ব্যবসায়ী টাকার বিনিময়ে রাজার কাছ থেকে নাইট উপাধি আদায় করে নিয়েছেন।

সম্রাট শার্লেমান এই নাইট উপাধি দেওয়া ব্যবস্হাটি চালু করেন বলে ধরে নেওয়া হয়। শার্লেমান ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ব্যাক্তি, তিনি পোপ আড্রিয়ানের ভক্ত ছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি যুদ্ধ করেন ক্রাইস্টের জন্য অর্থাৎ ক্রুসেডার। তাঁর নাইটদের তিনি যুদ্ধের পাশাপাশি ধর্মীয় কিছু দায়িত্ববোধও তাই ঠিক করে দিতেন। নাইট উপাধিটি তাই প্রথমদিকে ছিলো অনেকটা ধর্মীয় আবরণে বাধানো।


শিভালরি (Chivalry)-এর সঠিক বাংলা শব্দ নেই। সত্যি বলতে কি এর ইংরেজী শব্দও নেই। প্রচলিত ফ্রেঞ্চ শব্দটিকেই ইংরেজী ব্যবহার করা হয়। নাইটদের মহানুভবতা প্রদর্শন ও এথিক্সের ব্যপারগুলোকে শিভালরি শব্দটি ব্যবহার করা হয়। শিভালরি যে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রদর্শন করতে হবে তা নয়, নাইটদের ক্ষেত্রে দৈনিক জীবনযাপনের সাথে জড়িত। এ কারণে অনেক নাইটকে শিভালরিক যোদ্ধাও (Chivalric Warrior) বলা হতো।

ক্রুসেড শুরুর পর শিভালরিক কোড বই আকারে লিখা হয়, তবে তার আগেই মৌখিকভাবেই শিভালরিক কোড চালু ছিলো, যেগুলো নাইটদের মেনে চলতে হতো। শিভালরিক কোড একটি গুরুত্বপূর্ণ কোড হলো- শত্রুদের প্রতি দয়া প্রদর্শন, যেমন: পরাভূত শত্রুদের বাচার সুযোগ দেওয়া, বন্দীদের সাথে মানবিক আচরণ এবং শত্রুপক্ষ শারিরীকভাবে অসুস্হ থাকলে শান্তিচুক্তি করা। শিভালরিক কোড পুরোপুরি মেনে কঠিনই ছিলো, তবে কোন নাইট শিভালরিক কোড পুরোপুরি মানলে সে সমসাময়িক রাজন্যবর্গ ও সাধারণ মানুষের কাছে আলাদা মর্যাদা পেত, দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়তো তার গল্প-গাথা। এমনি একজন নাইট হলেন স্পেনের এল-সিদ (El Cid), যার আসল নাম রডরিগো ডায়াজ দ্য বিভার (Rodrigo Díaz de Vivar)। আরবরা তাঁকে আল-সাঈদ বলে ডাকতো, পরবর্তীতে তিনি এল-সিদ নামে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি খ্রিস্টিয়ান ও মুসলামান (মুরিশ)- উভয় বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছেন। এল-সিদ একাই স্পেনের ইতিহাসের সমীকরণ পাল্টে দিতে সাহায্য করেছেন। তেমনি ইংল্যান্ডে এরকম একজন বিখ্যাত নাইট ছিলেন, নাম স্যার হেনরী পার্সি। শেক্সপীয়রের হেনরী দ্য ফোর্থ নাটকে স্যার হেনরী পার্সি-কে পাওয়া যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×