somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মারাইংতং বিজয়

০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাহাড়ে ট্রেকিং এর নেশাটা সেই স্কুল থেকেই পেয়ে বসেছে। যখন ক্লাস টেন এ পড়ি তখন প্রথম উঠলাম সীতাকুণ্ডর চন্দ্রনাথ পাহাড়। সেই থেকে শুরু একে একে বন্ধ পেলেই ছুটে যাই পাহাড় ও ঝর্নার মায়াবী টানে। সেই হিসেবে এই বার বৌদ্ধ পূর্নিমার বন্ধে পরিকল্পনা ছিল বান্দরবনের আলী কদমের মারাইংতং চূড়া। বেশি না মাত্র ১৭০০ ফিট এর মত এর উচ্চতা। তবে চূড়ায় বৌদ্ধ মূর্তি আর মুরং পাড়া ভিন্ন মাত্রার এক স্বাদ দিবে এই অভিযাত্রায়। সেই হিসেবে ২৭ তারিখ খুব সকালে রওনা দিলাম বহদ্দার হাট । সাথে ২ জন বন্ধু ও আমি সহ ৩ জন। বাসে চকোরিয়া ও তারপর আরেকটা বাসে আলী কদম। পথি মধ্যে জুমার নামাজের বিরতিতে এক দোকানে বসে গাছ পাকা কলা খেলাম । যা শহরে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তারপর আবার রওনা দিলাম। পাহাড়ি আকা বাকা পথে উচু নিচু রাস্তায় চলছে আমাদের গাড়ি আর আমরা দু পাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছি বার বার। কখনো বন, কখনো পাহাডি গাছ, কখনো তামাক পাতা চাষ, কখনো মাতামুহুরি নদীতে ছোট বাচ্চাদের লাফালাফি, এসব দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম আলী কদম আবাসিক। যেখানে আমাদের গন্তব্য। গাড়ি থেকে নেমে গাইড কে ফোন দিতেই সে হাজির। তার পর গাইড নিয়ে গেল একটা দোকানে দুপুরের খাবার খেতে। যাবার পর হাত মুখ ধুতে পানির ব্যবস্থা করেই খাবারের অর্ডার দিলাম মুরগি ডাল ভাত আর সবজি। খাওয়া শেষে মুরগির বিল দেখে বুঝে গেলাম গাইড আর দোকানদার পর্যটক দেখে বিল অনেক বাড়িয়ে লিখেছে। আমাদের ভুল ছিল আমরা খুব ক্ষুদার্ত থাকায় দাম জিজ্ঞেস না করে খেতে বসে গেছি গাইড কে বিশ্বাস করে। মাত্র ৪ জনের ৪ পিস মুরগির দাম ধরল ৩৪০ টাকা যেখানে প্রতি পিস ৮৫ টাকা। ঝামেলা না বাড়িয়ে দাম দিয়েই বের হয়ে গেলাম। মুদির দোকান থেকে রাতে পাহাড়ি পাড়ায় খিচুড়ী খাবার জন্য ডিম, আলু, তেল, পিয়াজ , ডাল সহ সব কিছু কিনে রওনা দিলাম পাহাড়ের দিকে। গ্রামের মেঠো পথ আকা বাকা চলে গেছে দূরপাহাড়ের দিকে। দু পাশে ধান খেতের হালকা বাতাসের দোল, এ এগিয়ে যেতে যেতে পেলাম মারমা পাড়া, খুব সুন্দর, আর রাংগুয়াই আম গাছে পুরা পাড়া ভর্তি, সব ডালে থোকা থোকা আম এর নিচ দিয়ে হেটে যেতে জিভে জ্বল এসে যায়। পাড়া থেকে যোগ হল নতুন সদস্য একটা কুকুর। আমাদের গা ঘেষে কখনো , সামনে কখনো পিছনে, কখনো পাশ দিয়ে এক সাথেই এগিয়ে যাচ্ছে কুকুরটি, তাড়ানোর চেস্টা করেও কোন লাভ হল না। আমরা যখন বিশ্রাম নেবার জন্য বসি তখন কুকুরটাও পাশে অপেক্ষা করে। আমরা হাটা শুরু করলে কুকুরটাও করে। গাইড জানালো নতুন যারাই আসে তাদের কে পাহাড়ে পৌছে দেয় এই কুকুর। বিনা পারিশ্রমিকে এমন একজন বিশ্বাস্ত গাইড কে ঠিক করে দিল ! মারাইংতং পাহাড়ের উপরে আছে বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি সেই বৌদ্ধ কি এই দায়িত্ব দিল কুকুর টাকে? রহস্য রহস্যই থাক। প্রচন্ড গরমে সেগুন, কলা গাছ আর উচু নিচু পাহাড়ের সৌন্দার্য দেখতে দেখতে দুই ঘন্টা পর পৌছে গেলাম পাহাড়ি মুরং পাড়ায়। প্রচুর কাঠ বাদাম গাছ, আম গাছ, আর লেবু গাছ আছে এই পাড়ায়। সাথে গরু ও শুকর পাড়ার মধ্যে গৃহ পালিত হিসেবে খুব জনপ্রিয় তা ঢুকলেই বুঝা যায়। বিশ্রাম নেয়ার জন্য ও ব্যাগ রাখার জন্য গাইড ঠিক করল পাড়ার একটা ঘর সেখানে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় রওনা দিলাম চূড়ার দিকে। যত উপড়ে উঠছি ততই বাড়ছে বাতাস, সাথে আরেকটি দল আসল চট্টগ্রাম থেকে ক্যাম্পিং এর উদ্দেশ্যে। তাদের সাথে পরিচয় হলাম। এক সাথে উঠলাম মারাইংতং চূড়া। হালকা ঠান্ডা বাতাস সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই শেষ করে দিল। চার পাশে পাহাড় আর পাহাড়, সূর্যাস্ত দেখার জন্য সবায় বসে পড়লাম । লালা আকাশ আর সবুজ পাহাড় মিলে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। সাথে সাথেই চাদের জ্যোৎস্না বিলিয়ে দিল তার রূপ। চাদের কিরনে মূহুরতেই ভিন্ন এক রূপ নিল পুরা এলাকা। অন্য সদস্যরা তাবু ও রান্নার প্রস্তুতি কেও কে গলা ছেড়ে গান ধরল, কেও শুরু করল লাফালাফি, কেও গাছে উঠে চিৎকার , কেও আড্ডা দিতে দিতেই সময় চলে গেল। রাতে ৯ টায় ফিরে আসলাম রাতের খাবারের উদ্দেশ্যে পাড়াতে, চাদের আলোতে ট্রেকিং ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। পাড়াতে এসে জিজ্ঞেস করলাম টয়লেট নিয়ে। প্পাড়ার লোক জানালো ওই পাড়াতে কোন টয়লেট নেই। শুনেই হতবাক , এত বড় পাড়াতে টয়লেট নেই। সবায় আশে পাশের পাহাড়ের জঙ্গলে কাজ সারে। আড্ডা মারতে মারতেই রাতে ঘুমাতে গেলাম । দিনে যেখানে বৈশাখের গরমে অতিষ্ঠ রাতে সেখানে কুয়াশা আর ঠাণ্ডা । ২৪ ঘন্টার মধ্যে গরম ও শীত কালের অনুভূতি। সকালে ঘুম থেকেই উঠেই দেখি কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারপাশ, ঠাণ্ডা আরো বেড়েছে, সাদা মেঘ যেন প্রভাতের শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে আমাদের বিদায় জানাতে। এভাবেই শেষ হল আমাদের মারাইংতং অভিযান।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×