somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাইকিং রুপকথা - পর্ব ৪, রাগনারক (Ragnarok)ঃ সৃষ্টির শেষ দিন

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
রাগনারক (Ragnarok): সৃষ্টির শেষ দিন





ভাইকিংরাও বিশ্বাস করে এমন একটি দিনের, যেদিন সমস্ত সৃষ্টির বিলুপ্তি ঘটবে। এদিন সমস্ত মানুষের এবং দেবতাদের ধ্বংস হবে। এদিন আইসার (Aesir) দেবতাদের সাথে জতুন/ দৈত্যদের প্রলয়ঙ্কারি যুদ্ধ হবে ভিগ্রিদ (Vigrid) নামক স্থানে। প্রথম পর্বে সার্ট (Surt) নামের এক আগুনদৈত্যের কথা বলা হয়েছিলো যে মুসেফিম (Muspelheim-আগুনের পৃথিবী) শাসন করে, সে-ই আগুনদৈত্যেটি রাগনারক (Ragnarok) বা সৃষ্টির ধ্বংসে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। নর্স মিথ অনুসারে সার্ট (Surt) সমস্ত আইসার (Aesir) দেবতাদের বাড়ি, আসগার্ডের দেয়াল, এবং বিখ্যাত রংধনু ব্রিজে (এই ব্রিজ দিয়ে আইসার দেবতারা মিদগার্ডে বা মানুষের পৃথিবীতে যাতায়াত করেন) আগুন দিবে। মিদগার্ডের চারপাশ যে সমুদ্র দিয়ে বেষ্টিত, সে সমুদ্র থেকে বিশালাকার সাপ উঠে আসবে, যেটির লেজের মাধ্যমে বিষ নির্গত হবে, এবং লেজের ঝাপটা দিয়ে সমগ্র পৃথিবীতে বাতাসের দমকা হাওয়া দিবে।






ভাইকিং মিথ অনুযায়ী লোকি (Loki) হচ্ছে ভাইকিংদের প্রতারণা, ধূর্ততা এবং শঠতার দেবতা, যার সাথে আইসার দেবতাদের বেশ ভাল সম্পর্ক বজায় থাকে সবসময়। (লোকি (Loki) সম্পর্কে বিস্তারিত পরে আলোচনা করা হবে)। কিন্তু রাগনারক (Ragnarok) বা পৃথিবী ধংসের সময় লোকি (Loki) আইসার দেবতাদের, মানে থর (Thor), ওডিন (Odin), ফ্রিগ (Frigg) এর সাথে বেঈমানি করে।



লোকির (Loki) সন্তান হচ্ছে ফেনির (Fenir), যেটি একটি বিশালাকার নেকড়ে দানব। ফেনির সন্তানেরাও এক একটা বিশালাকার নেকড়ে দানব। পৃথিবী ধ্বংসের দিনে এরা সমগ্র পৃথিবীতে ধ্বংসলীলা চালাবে। এদেরই একজন প্রধান আইসার দেবতা ওডিনকে (Odin) হত্যা করবে! থর (Thor) এবং মিদগার্ডের বিশালাকার সাপ একে অপরকে হত্যা করবে। লোকি (Loki) এবং হিমদল (Heimdall) নামক ভবিষ্যবক্তা দেবতা একে অপরকে হত্যা করবে। সার্ট (Surt) নামের আগুনদৈত্যটি তখন ফ্রে (Freyr) দেবতা- যিনি উর্বরতা, বৃষ্টি এবং শান্তির দেবতা, তাকে হত্যা করবে। অবশেষে, সার্ট (Surt) সমগ্র নয়টি বিশ্বকে জাজ্বল্যমান নরকে পরিণত করবে। সর্বশেষে এই নয়টি বিশ্ব উত্তপ্ত লাভাতে ডুবতে থাকবে।

কোন দেবতা, এমনকি স্বয়ং ওডিনও রাগনারক (Ragnarok) বা সৃষ্টির ধ্বংসকে বিরত রাখতে পারবে না। তবে ওডিন (Odin) আগে থেকেই রাগনারক (Ragnarok) সম্পর্কে জানে, এবং এটাও জানে যে রাগনারকের মাধ্যমে (Ragnarok) জগতের স্থায়ি অবসান হবে না!

সত্যি বলতে কি উপরের লাইনটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ এবং রহস্যময়। “পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, আবার এটাও সর্বশেষ ধ্বংস নয়”, এই কথাটি দিয়ে ভাইকিং মিথলজিতে একটি রহস্য রেখে দেয়া হয়েছে, অনেকটা ‘শেষ হয়েও হইলো না শেষ” এর মত। অনেক জায়গায় বলা হয়েছে যে ধ্বংস এবং পুনঃজীবন একটি চক্রাকারে আবর্তনশীল (cyclical) ঘটনা!



রাগনারক (Ragnarok) বা পৃথিবীর ধ্বংসের লক্ষনঃ

রাগনারক (Ragnarok) হবার আগে কিছু সতর্কবার্তা দেখা যাবে।

যেমনঃ

১) লোকি (Loki) ওডিন এবং ফ্রিগের একজন সন্তান- দেবতা বালদের (বালদের) কে মেরে ফেলবে।
২) একটানা তিন বছর ধরে শীতকাল থাকবে, যখন একদিনের জন্যও কেউ গ্রীষ্মকালের মুখ দেখবে না।
৩) তিনটি উজ্জ্বল রঙের মোরগ- আইসার দেবতা, জতুন দৈত্য এবং নিলফিমের (Niflheim) মৃতদের বার্তা দিবে যে রাগনারক (Ragnarok)/ পৃথিবীর ধ্বংস শুরু হয়েছে! শেষ যুদ্ধের পূর্বে, লিফস্তার এবং লিফ নামের একজোড়া যুবক যুবতী সেই ইয়াগদ্রাসিল গাছের নিচে লুকিয়ে থাকবে।






৪) হিমডল (Heimdall) তার বিশাল বাঁশিতে ফুঁৎকার দিবে যাতে সমস্ত ভালহালার বাসিন্দারা জানতে পারে যে রাগনারক (Ragnarok) শুরু হয়েছে!

এখানে বলে রাখা ভালো যে ভাইকিংরা মনে করে যারা সম্মানিয়ভাবে মৃত্যুবরন করে, তাদের যায়গা হয় আসগার্ডের ভালহালা (Valhalla) নামক স্থানে। অন্যদিকে অসম্মানিয় মৃতদের যায়গা হবে নিলফিমে। রাগনারক (Ragnarok) এর সময় দুই জোটের যুদ্ধ হবে, এপাশের থাকবে আইসার দেবতারা, ভানির দেবতারা এবং ভালহালাতে (Valhalla- তথাকথিত ভাইকিং স্বর্গ)যায়গা পাওয়া সম্মানিয় ভাইকিং যোদ্ধারা। অন্যপাশে থাকবে জতুন দৈত্যরা, নিলফিমের বা নরকের অধিবাসিরা।

এই দুই জোট একে অপরের ধ্বংস তথা সমগ্র সৃষ্টির ধ্বংস করার পর নিজেরাও বিলুপ্ত হবে। তখন আবার নতুন করে সব পৃথিবী সৃষ্টি হবে, কারন আগেই বলেছি, ভাইকিংদের মতে শেষ যুদ্ধ আক্ষরিক অর্থেই শেষ নয়। জীবন এবং সৃষ্টি চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে সবসময় এবং হতে থাকবে অনন্তকাল! যুদ্ধ শেষ হবার পরে লুকিয়ে থাকা লিফস্তার এবং লিফ আবার নতুন পৃথিবীতে বাস করবে এবং বংশবিস্তার করবে। অন্যদিকে ওডিন এর সন্তান ভিদার, ভালি এবং হনির(Vidar and Vali and his brother Honir) এবং থর এর সন্তান মদি এবং মাগ্নি (Modi and Magni) আইসার দেবতা হিসেবে আসগার্ডে নতুন করে সাম্রাজ্য গড়ে তুলবে।



আগের পর্ব :

পর্ব ১ঃ ভাইকিং কারা
পর্ব ১

পর্ব ২ঃ সৃষ্টির রহস্য
পর্ব ২

পর্ব ৩, জীবন বৃক্ষ- ইয়াগদ্রাসিল (Yggdrasil) এবং নয়টি বিশ্ব (The Nine Worlds)
পর্ব ৩
উৎস :
1. wikipedia
2. viking-mythology.com
3. norse-mythology.org
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×