মাথার উপরে বেশ বড়সড় একটা সূর্য নিয়ে আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম। কাঁধে শান্তি নিকেতনি স্টাইলে একটা ঝোলা। ঝোলার ভেতরে খুটিনাটি অনেক কিছু। পাশে বয়ে যাচ্ছে লিভারপুলের মার্সি নদী। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়ায় টুপিটা উড়ে যেতে চাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে বেশ ক্লান্ত লাগছিল। আসলে সারাদিনে প্রচুর হেঁটেছি। লিভারপুল গিয়েছিলাম পিকাসোর চিত্র প্রদর্শনী দেখতে। শান্তি ও স্বাধীনতা।
লিভারপুল ওয়ান পর্যন্ত হেঁটে এলাম। রোদের তাপ একটুও কমেনি। ভাবছি বিকালের আর্জেন্টিনার ম্যাচটা দেখতে হবে। বিকাল বলছি এজন্য যে সাড়ে সাতটায় একটুও অন্ধকার হবে না। এই হলো দ্যা গ্রেট ব্রিটিশ সামার। উদ্ধত রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো উদ্ধতবক্ষা সল্পবসনা শেতাঙ্গ মেয়েদের নিয়ে পুরো লিভারপুল সেদিন যেন গ্রীষ্ম উদযাপনে মেতেছিল।
লাঞ্চের পরে একটু একটু ঘুম ঘুম লাগছিল। গেলাম ব্লুকোটে (আর্ট গ্যালারি)। সেখানকার পরিবেশ দেখে আমি পুরোপুরি মুগ্ধ। সত্যি বলতে কি অনেকটা চারুকলার পেছনে যেরকম নিরিবিলি একটা জায়গা আছে ঠিক সেই রকম। শুধু সেই ঝি ঝি পোকার ডাকটা নেই।
বিকালের দিকে রোদ একটু কমে গেল। আমি খুঁজে খুঁজে লিভারপুলের নাম্বার ওয়ান বার ফল ওয়েল এ ঢুকলাম। বিখ্যাত বার হওয়ার কারনে যতটা ভিড় হবে ভেবেছিলাম ততটা না। তবুও খুব বেশি টেবিল খালি নেই। আমি ভেতরের দিকের একটা টেবিলে বসে পড়লাম। এখান থেকে টিভি স্ক্রিনটা কাছ থেকে সরাসরি দেখা যাবে। ঘড়িতে কেবল সাতটা বাজে। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের আলোচনা চলছে। মেসি কে কেন ক্যাপ্টেন করা হলো। কারা আজকে চাপে আছে। কারা কিভাবে খেলবে এই সব মারাত্মক আলোচনা। বিবিসির উপস্থাপক মনে হচ্ছে বেশ চিন্তিত। যাইহোক,আমি নিজেও কম চিন্তিত না। কারন আজকালকার বাঙালি ছেলেমেয়েদের মতো স্পেন, ইতালি কিংবা ইংল্যান্ড এর ফ্যান এখনো হতে পারিনি। আগাগোড়া আর্জেন্টিনার সমর্থক। সেই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল এর ঐতিহ্য থেকে এখনো বেরোতে পারিনি।
খেলা ঠিক সময়েই শুরু হয়ে গেল। খেলা দেখতে দেখতে পাইন্ট এর পর পাইন্ট বিয়ার ফুরিয়ে যাচ্ছে টের পাচ্ছি না। হাফ টাইমের বাঁশি বাজার পর বাইরে এলাম। রাত ন'টায় আমার ট্রেন। ভাবলাম বাকি খেলাটা স্টেশনের কোন বেটিং শপে গিয়ে দেখে নেব।
ভার্জিন ট্রেনের প্রথম দিক কার একটা কোচে আমার সিট। সিটটা ঠিক জানালার পাশে। যেমনটা চেয়েছিলাম। বই পড়ার জন্যে সামনের টেবিলটার সাথে একটা ছোট্ট টেবিল ল্যাম্প। আসার পথে টুইলাইট সিরিজ পড়তে পড়তে আসছিলাম। শেষ চ্যাপ্টারটা বাকি ছিল। ভাবলাম শেষ করে ফেলি। কিন্তু এডওয়ার্ড আর বেলার বাংলা চলচ্চিত্র সংলাপে চরম বিরক্ত হয়ে বই বন্ধ করে মিউজিক অন করলাম। বেজে উঠল, এল্টন জনের স্যাক্রিফাইস।
ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি অন্ধকার গাঢ্ হচ্ছে। তরল অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। যেন আর কোন দিন ভোর হবে না। সেই অন্ধকারেও পথচিনে ছুটে যাচ্ছে ট্রেনটা। যেন এই ট্রেনটা আর কোনদিন থামবে না। যেন এই একঘেয়ে জীবনের কোন শেষ নেই। যেন এই জীবন মানেই একটু পড়াশোনা, খরচ করার জন্যে একটু উপার্জন, একটার পর একটা চিত্র প্রদর্শনী, সেই একঘেয়ে কিছু সাদা মানুষ, সেই জীবন নিয়ে ভাবতে ভাবতে ফুরিয়ে যাওয়া পথ। সেই একঘেয়ে একটা ঘর, নির্ঘুম রাতের শেষে নিঃসঙ্গ একটা ভোর। এই বোহেমিয়ান জীবন নিয়ে ব্লগে একটা নতুন লেখা। যেন এর বাইরে কিছু নেই। কখনও কিছু ছিলও না।
আলোচিত ব্লগ
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।
কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।
ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।
কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।