somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরেকটি বোহেমিয়ান রাতের গল্প।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক চুমুকে বুশমিলের পুরোটুকু শেষ করে দৌড়াতে দৌড়াতে প্লেনে উঠতে গিয়ে দেখি ফ্লাইট অনাকাংখিত কারনে বিলম্ব। মেজাজ চরম বিগড়ে গেলো। মনে মনে অল্প কয়েকটা শ্লীল এবং অনেক গুলো অশ্লীল গালি দিলাম এয়ারলাইন্সকে। যাইহোক একটু পরে প্লেনে উঠে জানালার পাশে বসে গেলাম। প্লেনে উঠলেই আমার কেমন জানি একা লাগতে থাকে। ইচ্ছা হচ্ছিল প্লেনটাকে আয়ারল্যান্ড থেকে লন্ডনের দিকে না নিয়ে ঢাকায় ল্যান্ড করাতে পারলে ভালো হতো।
গিয়েছিলাম ছুটি কাটাতে আয়ারল্যান্ড। আইরিশ আথিতেয়তা আর প্রাকৃতিক নৈসর্গে আমি রীতিমতো মুগ্ধ। সত্যি বলতে কি লন্ডনের নাগরিক জীবন আমাদেরকে খুব সহজেই ক্লান্ত করে ফেলে। লন্ডনের জীবন যেন একঘেয়েমিতার চূড়ান্ত। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সেই একই পাউরুটি চিবোতে চিবোতে দিন শুরু হয়। সেই একই ট্রেনে বাড়ি ফিরি। সেই একই গান বাজতে থাকে কানের ভেতর। যেন দিনের তারিখটা ছাড়া সবই একই।
তাই হঠাৎ করেই ঈদের আগে দুই বন্ধু মিলে আয়ারল্যান্ড চলে এলাম। প্রথম দিন এয়ারপোর্ট থেকে নেমে একটা ট্যাক্সি নিয়ে ভ্যাগাবন্ডে (আমাদের হোস্টেলের নাম) উঠলাম। ট্যাক্সি ড্রা্ইভার বেশ বন্ধুবৎসল। আইরিশ আতিথেতয়তার সেটাই শুরু। এরপর হোস্টেলে পরিচয় হল,ম্যানেজার শন ক্যারির সাথে। শন চমৎকার একটা ছেলে। মনে হচ্ছিল যেন আমরা কোন বন্ধুর বাসায় বেড়াতে এসেছি। পুরো বাসাটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আমাদের রুম ৩ তলায়। নিচ তলায় কমন রুম, কিচেন, ডাইনিং। পেছনে গার্ডেনের মতো একটা জায়গা আছে। বারবিকিউ করার জন্যে পারফেক্ট।
আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমে ব্যাগ রেখে খেতে বেরোলাম। খুঁজছিলাম ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে দুইটা রেস্টুরেন্ট পেলাম কিন্তু দুটোই বন্ধ। অগত্যা কে এফ সি তে ঢুকতে হল মুরগির ঠ্যাং চিবোতে।
খেতে খেতে পুরো প্লান করে ফেললাম। শহর খুব একটা বড় না। সারাদিনে পুরো শহরটাই এক চক্কর দেয়া যাবে। আর সেই সাথে চলবে ঈদ শপিং। সন্ধ্যায় গেলাম অ্যালেন ট্যুরস এর বুকিং দিতে। কারন পরদিন প্লান হল বেলফাস্টের বাইরে যাওয়ার।
রাতের খাওয়ার পরে হোস্টেলে গিয়ে দেখি কমনরুমে ২/৩ জন মেয়ে মুভি দেখছে। আমরাও ওদের সাথে জয়েন করলাম। মুভি শেষ করে রুমে গিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় ২টা। সকালে জায়ান্ট কজওয়ে তে (বেলফাস্টের বাইরে একটা জায়গা)যাওয়ার জন্যে বাস ছাড়বে সাড়ে নয়টায়। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমানোর দরকার ছিল।
সকালে উঠে নাস্তা করে দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে বাস ধরলাম। বাস যখন বেলফাস্ট ছাড়ল তখন থেকে শুরু হল কোস্টাল রোড। সমুদ্রের ঠিক পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল আমাদের বাস। এতো সুন্দর সেই দৃশ্য যে আমরা দুইজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
জায়ান্ট কজওয়ে দেখার পথে আমরা আরো দেখেছিলাম একটা ক্যাসেল, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো আইরিশ হুইস্কির ডিস্টিলারি আর একটা রোপওয়ে।
এখন এই ফিরে যাওয়ার সময় নিজেকে উদাস উদাস লাগছে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি নিচে নিভু নিভু বেলফাস্ট। রাতের আঁধারে জ্বলজ্বল করছে শহরটা। আস্তে আস্তে প্লেন চলে এলো আইরিশ সাগরের উপরে। নিচে মেঘ আর মেঘ আর তার নিচে নীল রং এর সমুদ্র। আগামীকাল ঈদ। ঈদের আগের রাতে আর দশটা প্রবাসী মানুষের মতোই আমিও একটু সময়ের জন্যে হলেও নস্টালজিক হয়ে গেলাম। আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছিল কোন এক মানবীর সাথে কথা বলতে। ঢাকা থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে আইরিশ সি এর হাজার হাজার ফুট উপরে আমার খুব শূন্য লাগছিল। এই শূন্যতার কোন সংজ্ঞা হয়না। সংজ্ঞাহীন এই নিঃসঙ্গতাকে আমি কি ভালোবাসা বলব কিনা জানি না। আমি উত্তরহীন তাকিয়ে থাকিয়ে থাকি প্লেনের বাইরের নিকষ অন্ধকারের দিকে।
কিছুদিন পরেই স্কুলের রিইউনিয়ন। দেশের বাইরে থাকার কারনে স্বাভাবিক ভাবেই যেতে পারছি না। প্রিয়মুখ গুলো এখনো স্মৃতিকাতর করে তোলে। ইউনিফর্ম পরে একসাথে বৃষ্টিতে ভেজার দিন গুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু কেন জানি এখন বৃষ্টি এলেই আমরা মাথার উপর ছাদ খুঁজি। একই রং এর সেই ইউনিফর্ম পরে অন্য কোন ছেলের দল ভিজতে থাকে।
কেমন যেন হঠাৎ করে সবাই বড় হয়ে গেলাম। বড় হওয়া মানেই যেন একটু একটু করে একা হয়ে যাওয়া। রাতের আকাশে তখন মেঘগুলোকে খুব আপন মনে হচ্ছিল। যেন এই মেঘগুলোও আমারই মতো একা, আমারই মতো উদভ্রান্ত এক বোহেমিয়ান।
১৮টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×