উপরের ছবিতে যাকে দেখছেন উনার নাম অধ্যাপক ওয়াইসম্যান যাকে সবাই mRNA ভ্যাকসিন টেকনোলজির জনক হিসাবে জানেন। উনি ২০০৫ সনে প্রথম এই কনসেপ্ট এর প্রমান দেখান এবং এই টেকনোলজির পেটেন্ট উনার বিশ্ববিদ্যালয় -পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর নামে নেওয়া হয় (আমেরিকার অধ্যাপক রা কিছু আবিস্কার করলে শুধু আবিস্কারক হিসাবে নাম থাকে কিন্তু পেটেন্ট হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে- টাকা পয়সা সব পায় বিশ্ববিদ্যালয়)। এই পেটেন্ট এর লাইসেন্সিং কিনে নেয় দুইটা প্রতিস্ঠান- মডার্না এবং জার্মান কোম্পানি BioNTech (ড: শাহিন)। যখন এফডিএ এই দুই প্রতিস্ঠান এর ভ্যাকসিন অনুমোদন দিবে.. পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শত শত মিলিয়ন অথবা বিলিয়ন ডলার আয় করবে।
বিস্তারিত এখানে
UPENN invention paves way for Covid vaccine
প্রফেসর ওয়াইসম্যান ২০১৮ সনে mRNA ভ্যাকসিন এর উপর একটি 'যুগান্তরী' আর্টিকেল লিখেন বিখ্যাত জার্নাল নেচার এ। ঐ আর্টিকেলেই তিনি লিখেন কিভাবে mRNA ভ্যাকসিন দিয়ে কোন ভাইরাস আউটব্রেক কে খুব দ্রুত কন্ট্রোল করা যাবে। উনি লিখেন
"Finally, the recent launch of the Coalition for Epidemic Preparedness Innovations (CEPI)
provides great optimism for future responses to emerging viral epidemics. This multinational public and private partnership aims to raise $1 billion to develop platform-based vaccines, such as mRNA, to rapidly contain emerging outbreaks before they spread out of control"
পেপার টা পড়তে পারেন এখান থেকে
mRNA vaccine review by Dr. Weissman
আমাকে যদি অপশান দেওয়া হয় কোন ভ্যাকসিন নিব? আমি বেছে নিব অক্সফোর্ডের/এস্ট্রাজেনেকা এর ভ্যাকসিন কেননা তাদের ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে টাইম টেস্টেড নিরাপদ টেকনোলজি ইউজ করে। mRNA ভ্যাকসিন এর আগে পৃথিবী কখনও দেখে নাই... একেবারেই নতুন টেকনোলজি ....লং টার্ম সাইড ইফেক্ট কি হবে কেউ জানে না..। এবার যে ট্রায়াল হল, সেটা মাত্র কয়েক মাসের জন্য হল।
যদিও অক্সফোর্ড এর ভ্যাকসিন এবং mRNA ভ্যাকসিন উভয়ই করোনা ভাইরাস এর একটা প্রোটিন- স্পাইক প্রোটিন কে টার্গেট করে ভ্যাকসিন বানিয়েছে কিন্তু সেই স্পাইক প্রোটিন মানুষের শরীরে তৈরী করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মেথড ইউজ করা হয়েছে। অক্সফোর্ড বানাচ্ছে DNA থেকে আর ড: শাহিন এবং মডার্না বানাচ্ছে mRNA থেকে। যেভাবেই স্পাইক প্রোটিন বানানো হোক না কেন, শরীরের ইমমিউন সিস্টেম যখন স্পাইক প্রোটিন দেখবে, যেহেতু আমাদের শরীরে কোনদিন স্পাইক প্রোটিন দেখে নাই, তাই প্রতিরোধ করার জন্য কিলার টি সেল তৈরী করবে। এই টি সেল পরে স্পাইক প্রোটিন থাকা ভাইরাস দ্বারা ইনফেক্টেড হলে, ইনফেক্টেড সেল কে ধ্বংস করে দিবে। আবার অন্য দিকে স্পাইক প্রোটিন দেখার পর ইমিউন সিস্টেম এন্টিবডি বানানোর বি সেল ও তৈরী করে এবং এই এন্টিবডি ভাইরাস কে পরে শরীরে প্রবেশ করতে বাধা দিবে।
যাহোক mRNA ভ্যাকসিন এর কিছু নেগেটিভ দিক দেখছি: যেহেতু শরীরের বাইরে (ল্যাবে) DNA থেকে mRNA তৈরী করে, সেই mRNA কে শরীরে পুশ করা হয়, ল্যাবে তৈরীর সময় প্রায়স একটা mRNA আরেক টা mRNA এর সাথে জোড়া লেগে যায়। যদি এই জোড়া লাগা mRNA কে শরীরে পুশ করা হয়, তাহলে শরীর ভীষন ভাবে রিয়াক্ট করে কেননা mRNA-mRNA এক সাথে দেখলে শরীরে type 1 interferon নামক রেসপন্স তৈরী করে যেটা শরীরের নর্মাল সেল কে ও ধ্বংস করে (অটো ইমিউন এটাক)...এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না..আর যাদের অলরেডি ডায়াবেটিস আছে, তারা কিছুটা সাবধনতা অবলম্বন করা উচিত বলেই মনে করি। যদিও আমি মনে করি শরীরে পুশ করার আগে জোড়া লাগা mRNA গুলি কে পৃথক করা হবে (যেটা টেকনোলজিক্যালি চেলেন্জিং)। পৃথক করা হলেও, কিছু জোড়া লাগা mRNA (residual) এর থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এই ভ্যাকসিন কে কেন এত ঠান্ডা রাখতে হবে??? সেটা হল যে শুধু mRNA ভ্যাকসিন কে ইনজেক্ট করলে কখনই এটা শরীর এর কোষে প্রবেশ করবে না..।কোষের বাইরেই ভাসতে থাকবে যেটা খুবই ডেন্জারাস... কোষের এর বাইরে নর্মাল mRNA কখনই থাকে না। থাকলেই তারা টাইট কোষের মেমব্রেন কে লুজ করে দেয় আর এতে ইনজেকশন এর স্হানে এবং শরীর এর নানা জায়গায় পানি এসে যেতে পারে ( edema). কোষের বাইরে থাকা mRNA রক্ত জমাট করে ক্লট করার মত ইফেক্ট ও দেখা গেছে। mRNA কে কোষে প্রবেশ করানোর জন্য mRNAকে এক ড্রপ চর্বি এর সাথে মিশানো হয় আর চর্বি খুব সহজেই কোষের মেমব্রেন এর সাথে মিশে যেতে পারে আর তাতেই mRNA কোষে ঢুকে পড়ে আর কোষ এই mRNA থেকে স্পাইক প্রোটিন বানানো আরম্ভ করে। এত ঠান্ডা রাখতে হয় যাতে চর্বি/mRNA কমপ্লেস্ক স্ট্যাবল থাকে (না ভাংগে)। হালকা গরমে চর্বি থেকে mRNA আলাদা হয়ে গেলে, mRNA ভ্যাকসিন আর কোষে প্রবেশ করবে না। আমার মতে হয়ত ১০০% mRNA চর্বি এর সাথে থাকবে না, কিছু mRNA কোষের বাইরে থাকবে ইনজেক্ট করার পর, পরে সেটাই বিপদের কারন হতে পারে... যারা ইনজেক্শন দিবে তার কতটা পারদর্শী সেটাও বিবেচ্য।
যাহোক, আমার অভিনন্দন রইল ড: শাহিন এবং মর্ডানার ড: রসি এর প্রতি কেননা উনারা খুব দ্রুতই mRNA ভ্যাকসিন এর আসল কাজ (ক্যান্সার ভ্যাকসিন তৈরী) এর প্ল্যাটফর্ম কে করোনা ভ্যাকসিন এর কাজে রূপান্তরিত করাতে আজ বিশ্বে আশা দেখা যাচ্ছে যে আবার আমরা 'নর্মাল' লাইফে ফিরে যেতে পারব।
এই কাজের জন্য যখন নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে, তখন হয়ত মডার্না এবং ড: শাহিন কে না দিয়ে এই টেকনোলজির মূল আবিস্কারক ড: Weissman and ড: Karikó পেতে পারেন যেটা মডার্না র মালিক নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন। মজার কথা ড: Karikó অনেক দিন ধরেই ড: শাহিন এর কোম্পানীতে চাকরী করছেন এবং বলা হচ্ছে যে ড: Karikó পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর টেকনলজি ড: শাহিন এর কোম্পানীতে নিয়ে গিয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০২