ছবিঃ ইফতারির জন্য মুসল্লীর প্রস্তুতী ৷
দেখতে দেখতে পবিত্র রমজান শেষ হয়ে এল ৷ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রোজার মাস পালন হয়েছে। আমাদের এখানে বেশ ঘটা করে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন ইফতারি ছিল রোজার প্রধান আকর্ষন | বিদেশে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ইফতারির আয়োজন হয়। সে বেশ রকমারী পদ, সরবত থেকে শুরু করে পেয়াজু ভাজা, তরমুজ, মুড়ি বুট সবই পরিবেশিত হয়েছে ৷ ইফতারির আয়োজন খুব বেশি ভারি হয় না। এর পরই মগরিবের নামাজের পর্ব ৷ নামাজ শেষে রাতের ডিনার পরিবেশন হয়। একেক দিন একেক দেশের খাবার দেয়া হয়। মেডিটেরিয়ান হাম্মাস বা দেশী ঝাল বিরিয়ানী কি নেই , সবই চলে।
ছবিঃ রাতের ডিনার পর্ব ৷
এখানে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ মুসল্লী জমায়েত হন ৷ মাঝে মাঝে নন মুসলীমরাও আসেন এই আয়োজনে ৷ আসেন শহরের মেয়র , পুলিশ প্রখান, এলাকার সাংসদ প্রতিনিধি ৷ অনেক সময় অফিসের সহকর্মীরা আসেন ইফতারীতে সামিল হতে ৷
বাচ্চাদের জন্য থাকে বিশেষ আকর্ষন ৷ যদিও এরা বিভিন্ন ভাষার পরিবার থেকে এসেছে তবুও এরা সহজেই একত্রে খেলায় মেতে উঠে। অপেক্ষাকৃত বড় বাচ্চারা বাস্কেটবল বা ফুটবল খেলে ৷ সারাদিন রোজার পর কিভাবে এরা খেলাধুলা করে সে এক বিশ্বয় ৷ ছোট বাচ্চাদের জন্য প্লে গ্রাউন্ড আর বিভিন্ন ইনডোর গেমের আয়োজন আছে।
রাতের খাবারের পরে চলে আড্ডা, এশা ও তারাবী নামাজ , আবার আড্ডা প্রায মধ্যরাত পর্যন্ত। দেখা যায় একই ভাষাভাষীরা তাদের সার্কেলে আড্ডা দিচ্ছেন ৷
প্রায় প্রতিদিনই চলে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন । সে তালিকায় আছে বাংংলাদেশের জন্য ফ্রী ডায়াবেটীস সেন্টার, আফগান রিফোজী সহায়তা সংগঠন, ডক্টরস উইট আউট বর্ডারস, আফ্রিকা সংগঠন ইত্যাদি ৷ মুসল্লীরা মুক্ত হস্তে যাকাত ইত্যাদি এখানে দান করেন ৷
গত দু বছর এরকম জমায়েত হয়নি কোভিডের জন্য ৷ এজন্য এবার অপেক্ষাকৃত বেশী মানুষ এ ধরনের আয়োজনে অংশগ্রহন করেছে।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে অনেক ভাষার মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি। সেই তালিকায়, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, জাম্বিয়া, সেনেগাল, ফিনল্যান্ড, রোহীংগ৷, উইগোর ও প্যালেসটাইনের মুসলীম আছেন ৷
বাংলাদেশে রোজার দিনে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। রোজা শেষে নিজের পরিবারের সাথে ঈদ করার জন্য বেশী ভাড়াতে মানুষ বাস, লঞ্চ চড়ে। তবুও দিনশেষে বাংলাদেশে রোজা বা ঈদের আনন্দের কয়েক শতাংশ ও বিদেশে অনুভুত হয় না।
সেই ছোট বেলার ছোলা , বুট, পেয়াজুর মন মাতানো সুবাস পুরানো দিনের ভাজে আটকে গেছে। বিদেশে ঝকঝকে তকতকে রঙ্গীন সন্ধ্যার সাথে সেই পুরোনো আধা আলোকিত, সহোদর বেস্টিত খুনসুটি ময় রোজার সন্ধ্যার আকাশ পাতাল পার্থক্য ৷
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৫