[একটা কপি পেস্ট লেখা। কিন্তু সকলের পড়া উচিৎ। মাইনাচ দিতে চাইলে আপিত্ত নাই নির্দিধায় দিতে পারেন।]
স্কুল-কলেজের ছাত্রী এবং কর্মজীবী নারীদের উত্ত্যক্তকারী বখাটে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে পারিবারিক, সামাজিক ও আইনগতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ইভটিজিং বা মেয়েদের উত্ত্যক্তকরণ একটি গুরুতর সামাজিক ব্যাধি। যারা ইভটিজিং বা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে তারা দুর্বৃত্ত। তাদেরকে নির্বৃত্ত করতে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বখাটেদের উৎপাত আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়া এবং তা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, চিত্রনায়ক, চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। আন্তঃমন্ত্রণালয় আয়োজিত এ মতবিনিময় সভা গতকাল মঙ্গলবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বখাটে প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে। এদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের প্রতি সপ্তাহে একদিন আচরণ বিধির ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বখাটেদের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশ থেকে দোকানপাট উচ্ছেদ করতে হবে, যেখানে বসে বখাটেরা আড্ডা জমায়।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বানকে সমর্থন করেন এবং যেকোন মূল্যে বখাটেদের প্রতিরোধ করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, সরকারের দৃঢ় অবস্থান নারী অধিকারের পক্ষে। যেকোন মূল্যে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। একটি সভ্য সমাজে স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থলগামী মেয়েরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং কোন উপায়ান্তর না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য খুবই লজ্জাকর ও কলঙ্কজনক।
তিনি ইভটিজিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও আইনি প্রতিরোধ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে বলেন, প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের বাইরে কঠোর আইন প্রণয়ন করে দুর্বৃত্তদের দমন করা হবে। তিনি দুর্বৃত্তদের খারাপ পথ ছেড়ে ভাল পথে আনার উদ্যোগ নিবেন বলেও উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে তিনি অভিভাবকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ইভটিজিং কোন লঘু অপরাধ নয়, এটি গুরুতর অপরাধ। এর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি ইভটিজিং প্রতিরোধে স্থানীয় কমিশনারদের না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, একাজে কমিশনারদের জড়ানো হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ কমিশনারদেরই ভাবমূর্তিই সমাজে ভাল না।
'সংবাদ'-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পার হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, শিক্ষা খাতে বৈষম্য দূর হয়নি। এসব কারণেই বখাটেদের উৎপাত বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক, পারিবারিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক ও নারী সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলে তা মোকাবেলা করতে হবে।
সংসদ সদস্য তারানা হালিম দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রাম্য সালিশীর মাধ্যমে ইভটিজিংয়ের ঘটনার সুরাহা হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই ধরনের অপরাধের বিচার আইনের মাধ্যমে হতে হবে।
তিনি কমিউনিটিভিত্তিক বখাটেদের তালিকা প্রণয়ন করে ডিসি'র কার্যালয়ে জমা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলো এখন ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের কাছেও ছাত্রীরা নির্যাতিত হচ্ছে।
সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাদীক্ষার মান অত্যন্ত দুর্বল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনা সৃষ্টি করতে হবে।
বিএফইউজের সভাপতি, অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সামাজিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের অভাবে ইভটিজিংয়ের মতো একটি ব্যাধি চরম আকার ধারণ করেছে।
বখাটের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা মহিলাদের নির্যাতন করে এবং মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে তারা মানুষ নয়।
দৈনিক কালেরকণ্ঠ সম্পাদক আবেদ খান বলেন, যারা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে তারা বখাটে নয়, তারা দুর্বৃত্ত। সামাজিক অবক্ষয় ও অস্থিরতার জন্যই এদের তৎপরতা বাড়ছে।
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ইভটিজিং বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে বেশি বেশি সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও খেলাধুলা চর্চা। পাশাপাশি বিদেশী স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে।
নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, বিদেশী চ্যানেল বন্ধের ব্যাপারে আমি একমত নই। কারণ দেশের চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠানের মান ভালো হলে বিদেশী চ্যানেলের খারাপ অনুষ্ঠানের দর্শক এমনিতেই কমে যাবে।
নাট্যব্যক্তি মামুনুর রশিদ বলেন, অবিলম্বে সেলফোনের বিজ্ঞাপন ও ভারতীয় চ্যানেলগুলোকে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে। সেলফোনের অশালীন বিজ্ঞাপন ও ভারতীয় চ্যানেলের অনুষ্ঠান মানুষকে খারাপের দিকে উস্কে দিচ্ছে। বিদেশী চ্যানেলে হিংসা, বিদ্বেষ ও খনুখারাবি বেশি প্রচার করা হচ্ছে।
মানস'র সভাপতি ড. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়া হয় না। কেবল সার্টিফিকেট দেয়া হয়। তিনি বখাটের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে স্কুল-কলেজে অভিযোগ বাক্স খোলার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে বলেন, ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলের মেয়েদের পোশাকে শালীনতার ব্যবস্থা করতে হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব নেই। এখন সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ফলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে মূল্যবোধ জন্মাচ্ছে না। তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দৈনিক প্রথমআলোর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, অভিনেত্রী লায়লা হাসান, মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



