এয়ারপোর্টে বসে মানুষ দেখতে আমার কখনো ক্লান্তি লাগেনা।কানেকটিং ফ্লাইটের জন্য কোনো এয়ারপোর্টে বসে বসে শুধুমাত্র মানুষ দেখে তিন/চার ঘন্টা সময় অনায়াসে পার করে দিতে পারি।
ব্যাস্ত মানুষ,গা ছেড়ে এদিক ওদিক ঘুরা-ফেরা করা মানুষ,শপিং প্রিয় মানুষ,সাদা-বাদামি-কালো রংয়ের মানুষ।
ঢাকা এয়ারপোর্টের একটা জিনিস খুব আগ্রহ নিয়ে দেখি।প্রিয়জনকে বিদায় দিতে আসা মানুষজনের কান্নাকাটি,নুতন বউয়ের 'ভুলোনা আমায়' টাইপের বিষাদ মাখা চেহারায় সদ্য সংসার শুরু করা মানুষটিকে বিদায় জানানো,ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে মায়ের আশির্বাদ-সব কিছুর মাঝে এত শত মমতা লুকানো যে আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে দেখতেই থাকি,দেখতেই থাকি।
একবার এক সদ্য বিবাহিতা মেয়েকে কাঁদতে-কাঁদতে বলতে শুনলাম,'প্লেনটা আমার চোখের সামনে দিয়ে উড়ে চলে গেলো আর আমি কিছুই করতে পারলামনা।' মেয়েটার অসহায় আর্তনাদ,কষ্ট এসব ছাপিয়ে ওর বলার ভঙ্গিটাতেই হেঁসে দিয়েছিলাম।আমরা মানুষরা বড় অদ্ভুত।
মেয়েটার কষ্ট আমাকে ছোঁয়নি।কারো কষ্টই আসলে কেউ ছুঁতে পারেনা।যার যার কষ্ট নিয়ে মানুষের একা একাই পথ চলা-শেষ দিন পর্যন্ত।
হুইল চেয়ারে বসে সন্তানকে বিদায় দিতে আসা 'মা' হয়তোবা জানেনইনা এটাই তাদের শেষ দেখা।মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিছুদিন পর পর কফিনে ফিরে আসা মানুষগুলোর আত্মা কি শেষবারের মতো মা'কে দেখতে চেয়েছিলো?
কিংবা বাবা'কে?
ওই মানুষটি কি শেষবারের মতো হাঁটতে চেয়েছিলো বাড়ির সামনে দিয়ে চলে যাওয়া মেঠো পথ ধরে-এলোমেলো,উদ্দেশ্যবিহীন?
আমার ফেরার পথ নির্দিষ্ট,আমার গন্তব্য নিশ্চিত।
আমার গৃহবন্দী বাবা যখন বলেন,বাড়িতেই থেকে যা,কত কিছু করার আছে এখানে।আমি তখন এটা-ওটা ছুতো খুঁজে দু/চারদিন বেশি থাকার অজুহাত খুঁজি।বিদায় দিতে পেছন পেছন অনেকদুর আসা 'আম্মা' যখন বলেন,সময় পেলেই চলে আসিস।আমার গন্তব্য তখন নিশ্চিত হয়ে যায়।
প্রিয় মানুষদের সাথে আর কখনো দেখা হবেনা এ কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে আমি না হয় মরেই যাবো।
মালেয়শিয়ান এয়ারওয়েজের নিখোঁজ হওয়া যাত্রীরা জানতেই পারলোনা তাদের ফিরে আসার আশায় কত অশ্রু গড়াতে গড়াতে এতোদিনে শুকিয়েই গেছে।
চলে যাওয়া কত সহজ অথছ ফিরে আসা এত কঠিন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



