somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন আরব নগরী ‘পেত্রা’র ইতিহাস!

২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পেত্রার মুল আকর্ষণ "খাজানাতে ফেরাউন" মন্দির বা ফারাও রাজাদের ধন ভান্ডারের দিন এবং রাতের ছবি



প্রাচীন আরব নগরী ‘পেত্রা’। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, সম্পূর্ণ এই নগরীটি মূলত পাথরের। যার আরেকটি বড় পরিচয়, এটি বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের মাঝে একটি। যে স্থানের ছবি আমরা সবাইই কমবেশি দেখেছি কোন না কোন সময়। গ্রিক ভাষায় যায়গাটিকে লিখা হয় ‘πέτρα’ নামে এবং আরবি ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘আল বুত্তা’।

যায়গাটি লোহিত/মৃত সাগর থেকে প্রায় ৮০ কিমি দূরে জর্দানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি গ্রাম ‘ওয়াদি মুসা’-র ঠিক পূর্বে হুর পাহাড়ের নীচে অবস্থিত।


দূর থেকে পেত্রা নগরী সম্মুখভাগের একাংশ। রোদ পরে আছে যেই যায়গাটিতে সেটিই পেত্রার মুল প্রাসাদ বা রাজকীয় প্রাসাদ।


এই যায়গা গুলিই একসময় পেত্রা নগরীর জনবহুল সড়ক ছিল।

একসময় নগরীটি অত্যন্ত সুন্দর সুরক্ষিত একটি দুর্গ ছিল। যার চারধারে উচু পাহাড়ি দেয়াল, কিছুদুর পরপর বর্গাকার, গোলাকার উচু উচু স্তম্ভ, পাহাড়ের গায়ে খোঁদাই করা পাথুরে কারুকার্য, পাহাড় কেটে কেটে নিপুন ভাবে ১২ ফিট কোথাও কোথাও আরও উচু রুম তৈরির ব্যাপার গুলো বিশ্বের মানুষের কাছে আজও রহস্যময় এবং বিখ্যাত করে রেখেছে যায়গাটিকে। এক সময় এই নগরীর চারপাশের উচু পাহাড় গুলিতে প্রচুর পরিমানে ঝর্নাও ছিল, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা যায়। এছাড়াও শত সহস্র বছরের স্মৃতি তো যায়গাটিতে মিশে আছেই।


পেত্রার মুল শহরে প্রবেশের একটি দরজা। নাম "হার্ডিয়েন ফটক"


৩ হাজার মানুষের জন্য নির্মিত নাট্যশালা। যেটিকে বর্তমান স্টেডিয়ামের প্রাচীন রূপ বলা যায়।

পেত্রা নগরীর মুল গুহার ঠিক পাশেই রয়েছে কঠিন পাহাড়ের উপর কারুকার্জ করা দালান গুলো। যার মাঝে ‘খাজনেত ফেরাউন’ নামের মন্দিরটি অন্যতম। মন্দিরটি আবার একসময় ফারাও রাজাদের ধনভান্ডার নামেও পরিচিত ছিল। দালান, মন্দির ছাড়াও এই নগরীতে বিনোদনের জন্য স্টেডিয়ামের মতো তৈরি করা একটি নাট্যশালাও রয়েছে, যেখানে প্রায় ৩ হাজার দর্শক একসাথে বসতে পারবে।
নগরীটি এমন সুবিধাজনক যায়গায় নির্মিত হয়েছিল, যেখান থেকে পশ্চিমের গাঁজা, উত্তরের বসরা ও দামেস্ক, মৃত/লোহিত সাগরের পাশের আকুয়াবা ও লিউস সহ মরুভূমির উপর দিয়ে পারস্য উপসাগরে যাওয়ার প্রধান সব বাণিজ্যিক পথ গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো পেত্রারা। মূলত একারণেই নগরীটি অর্থনৈতিক ভাবে বেশী সমৃদ্ধ এবং নিরাপত্তার দিক দিয়েও অনেক সুরক্ষিত ছিল।


এই দালানটিকে বলা হয় 'সাধুসংঘ'। তখনকার সাধু, সন্ন্যাসীরা এখানেই বসবাস করতো।


খুব কাছ থেকে পেত্রা নগরীর একটি বাড়ীর ছবি। পাশ দিয়ে পাহাড় কেটে বানানো সিঁড়ি উঠে গেছে। এটিকে রাস্তাই বলা যায়।

পেত্রার ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়,
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ পর্যন্ত এটি ছিল আরবের নাবতাইন রাজ্যের রাজধানী। তখনই নগরীটি সম্পূর্ণ সমৃদ্ধ নগরীরূপে ছিল, পেত্রারা সবথেকে শক্তিশালী ছিল। পরবর্তিতে রোমান শাসনের সময় রোমানরা সমুদ্র কেন্দ্রিক বাণিজ্য শুরু করলে পেত্রাদের আধিপত্য কমে যায় একইসাথে অর্থনৈতিক ভাবে পেত্রারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এবং ১০৬ খ্রিটাব্দে এসে রোমানরা এটিকে দখল করে তাদের ‘আরব পেত্রাইয়া’ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে শহরটির কিছুটা উন্নতি সাধন করা হলেও, পরবর্তীতে পেত্রার প্রতিদ্বন্দ্বী শহর ‘পামিরা’ পেত্রাদের অধিকাংশ বাণিজ্য দখল করে ফেললে পেত্রার গুরুত্ব একেবারেই কমে যায়। সপ্তম শতকের দিকে মুসলমানরা এটিকে দখল করলেও দ্বাদশ শতকে ক্রুসেডারটা এটিকে দখল করে। এভাবে সময়ের ব্যাবধানে, যুদ্ধ বিদ্রোহ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে পেত্রা নগরী একসময় প্রায়ই ধ্বংস হয়ে যায়।


পেত্রা নগরীর দালান গুলোর ভিতরের দৃশ্য। যে রুম গুলো কোথাও ১২ ফিট কোথাও তার থেকে উচু করে নির্মাণ করা হয়েছিল।


পেত্রার প্রাসাদের ভিতরের এমন মোজাইক করা মেঝে দেখতে পাওয়া যায়। ধারনা করা হয় পঞ্চম শতকে 'বাজেনটাইনদের' আমলে এই মোজাইক করা হয়।

মধ্যযুগে এসে পেত্রার ধ্বংসাবশেষ আবার মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হতে থাকে। ত্রয়োদশ শতকে মিসরের সুলতান বাইবারস পেত্রার ধ্বংসাবশেষ দেখতে যান।
এরপর বহু বহু বছর নগরীটি মানুষের আলচোনার বাইরে থাকার পর ১৮২২ সালে সুইস পরিব্রাজক জোহান লুডিগ বুর্খার্দত এটিকে পশ্চিমা বিশ্বের নিকট নতুন ভাবে উপস্থাপন করেন এবং ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে ‘বৈশ্বিক ঐতিহ্যবাহী স্থান’ হিসেবে ঘোষণা করে।
যে ঘোষণায় বলা হয়,
সম্পদ আর ক্ষমতায় পেত্রারা যে একসময় কতটা সমৃদ্ধ ছিল তা প্রমাণ করতে পেত্রাদের ধ্বংসাবশেষই যথেষ্ট।

তথ্যঃ উইকি, গুগল।
ছবিঃ গুগল।

*****
এটি এমন একটি যায়গা, সরাসরি না দেখে যার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ সম্ভব না। তাই একটা সাইটের লিংক দিলাম (Click This Link) , যেটাতে ভিজিট করলে আপনি সশরীরে পেত্রায় না যেতে পারলেও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারবেন। এরাবিয়ান মিউজিকের সাথে সাথে কখন যে পেত্রা নগরীতে হারিয়ে যাবেন, টেরই পাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×