মানুষের চাহিদা এবং চাহিদা পূরনের প্রচেষ্টা চিরকালই একটা চলমান প্রক্রিয়া। শিশুকাল থেকে আমরা এ প্রক্রিয়ার সাথে অভ্যস্থ। আমরা যদি আমাদের চাহিদা গুলোকে প্রধানত দু' টি ভাগে ভাগ করি তাহলে এর একটি যদি হয় জৈবিক অন্যটি হবে মানবিক। মানুষের প্রেম, ভালোবাসা,অনন্দ,আবেগ,অনুভূতির সাথে সাথে অন্য যে মানবিক চাহিদাটি আমাদের সকলেরই রয়েছে সেটি হচ্ছে সামাজিক চাহিদা। আমরা যারা সমাজে সভ্য হিসাবে বসবাস করতে চাই তারা কমবেশি সমাজকে কিছু দিতে চাই এবং নিতেও চাই। কিন্ত এ চাওয়া পাওয়ার মধ্যে এক ধরনের অতৃপ্ততা সবসময়ই থেকে যায়। স্কুল জীবনে বিভিন্ন গঠনমূলক কাজ করার মানসিকতা থাকলেও সুযোগ এবং সীমাবদ্ধতার অভাবে আমাদের প েঅনেক কিছুই হয়ে উঠে না এবং আমাদের প্রতিভাগুলো বেড়ে উঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। কলেজ জীবনের মধুরতম সময়গুলো অনেক সময়ই কাজে লাগানো যায় না চলমান রাজনীতির অভিশাপের কারণে। আর উচ্চ শিার েেত্র আমরা যেটা বুঝি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়েন তাদের সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের মোটামুটি একটা সুযোগ থাকলেও রাজনীতির ছায়া এখানেও এ ধরনের কর্মকান্ড বিঘি্নত করে। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের েেত্র অধিকাংশ গুলোকেই বন্ধী কারাগারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। সবমিলিয়ে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে আমরা অধিকাংশ শিার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামক একটি অভিশপ্ত প্রতিষ্ঠানের অধীনে বিভিন্ন কলেজে উচ্চ শিার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকি। অযৌক্তিক সিলেবাসের কবলে পড়ে আমাদের দফারফা শেষ হলেও পাশ করার পর আমাদের মূল্যায়ন করা হয় বেশ খানিকটা অযোগ্য হিসাবেই। এতসব প্রতিকূলতা আর হতাশার মাঝে খুব একটা সামাজিক চাহিদা অর্জন করা কিংবা পূরণ করা কোনটাই হয়ে উঠে না। আমরা যারা চলমান রাজনীতির ছায়া থেকে দূরে থাকতে চাই তারা জাতীয় কিংবা আঞ্চলিক একটি অরাজনৈতিক কিংবা সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থেকে নিজেদেরকে তুলে ধরতে চাই। গ্রাম থেকে আসা কোন ছাত্রের প েএকটি জাতীয় সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া খুবই অবাস্তব। ফলে যে চাহিদাটি খুব বেশি অনুভূত হয় তা হচ্ছে আঞ্চলিক সংগঠন/ মিলনায়তন। 2001 সালে আমরা যখন জগন্নাথ কলেজে অনার্সে ভর্তি হই শুরুর দিক থেকেই এ ধরনের একটি অভাব আমাদেরকে প্রবল ভাবে নাড়া দেয়। সৌভাগ্যের বিষয় এই যে সব বিভাগ মিলে আমরা কোম্পানীগঞ্জের যে 7/8 জন ছাত্র ভর্তি হয়েছিলাম তারা সবাই একই কলেজ থেকে আসা। ফলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে আমরা একে অপরের খুব ভালো বন্ধু না হলেও এখানে এসে আমরা খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম। উল্লেখ করা যেতে পারে এখানে আমাদের এক সিনিয়র ভাইকে পেলাম যিনি তৎকালীন সরকারী দলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাধে আমাদের সবার কাছে এক নামে পরিচিত ছিলেন। একটি কেন্দ্র বিন্দুর অভাব বোধ এবং পরিচিত সে বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরনা থেকে আমরা আমাদের কলেজ ভিত্তিক "ঢাকাস্থ কোম্পানীগঞ্জ ছাত্র কল্যাণ পরিষদ" নামে একটি কল্যাণমূলক সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করলাম। বিভিন্ন পরিপাশ্বিক কারণে সে সংগঠন বেশিদূর এগুতে পারেনি। তবে জগন্নাথ কলেজটি নেতৃত্বস্থানীয় কলেজ হওয়ার সুবাধে আমাদের সংগঠনটিকে বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে ঢাকার সবগুলো প্রতিষ্ঠান কে নিয়ে "কোম্পানীগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার" নামে একটি বৃহত্তর সংগঠনের শুভ সূচনা করা সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক 3টি প্রতিষ্ঠান(ঢাবি,ডিএমসি,বুয়েট) নিয়ে ুদ্র একটি সংগঠন নামমাত্র কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল। তাদের আচার-আচরণ এমন ছিল যে সংগঠন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সমমানের প্রতিষ্ঠানে অধ্যরতদের জন্য। ফলে তাদের ওই সীমানার মধ্যে আমাদের মত কলেজ,মাদ্রাসা কিংবা অপরাপর প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিার্থীদের অংশগ্রহন করার কোন সুযোগ ছিলনা। 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়' নামটির অহকাংরে আমাদের সমাজপতিদের অনুরোধও তখন তারা অগ্রাহ্য করেছিল। আমাদের প্রতি এ ধরনের বিমাতা সুলভ আচরণকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করে 'কোম্পানীগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার এসোশিয়েসন' এর দূর্গম পথচলা শুরু হয়। নিজস্ব সংবিধান, নিজস্ব স্টাইল আর 'স্বপকেট ব্যয় নির্বাহ' এবং চাঁদা বিহিন সংগঠন পরিচালনা নীতির কারণে সর্বপরি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ উধের্্ব থাকায় শুরু থেকেই সংগঠনটি সবার আস্থা কুড়াতে সম হয়। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি নতুন নতুন পরিকল্পনা আর তার সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে সংগঠনটি আজ চার বছর অতিক্রম করে পাঁচ বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। শুরু থেকে সোহাগ, রফিক, মহিউদ্দিন,মিঠু,টিংকু,জসিম,বিল্লাহ পরবর্তীতে মারুফ,রহিম,পুলক প্রমুখ ভাইদের সক্রিয় অংগ্রহন এবং নেতৃত্বে সংগঠনটি একটি সম্মানজনক অবস্থায় আসতে পেরেছে বলে আমার দৃষ্টিতে প্রতিয়মান হয়েছে। সংগঠনের বিভিন্ন দূর্যোগপূর্ণ সময়ে দায়িত্ব অথবা দায়িত্বের বাহিরে থেকেও কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বর্তমান সভাপতি মোস্তাফিজ বিল্লাহ মারুফ বিশেষ প্রশংসার দাবী রাখে। আমি ব্যক্তিগতভাবে শুরু থেকে সংগঠনটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। তৎকালীন 'সাপ্তাহিক আজকের যোগাযোগ' এবং পরবর্তীতে 'দৈনিক ঢাকা রিপোর্ট' এ কাজ করার সুবাধে মিডিয়া পলিসি ছাড়াও সংবিধান এবং সংগঠনের ভেীত কাঠামো তৈরীতে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। কর্মব্যস্ততার কারণে বর্তমানে সক্রিয়ভাবে সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা সম্ভব না হলেও দূর থেকে সংগঠনটির ধারাবাহিক সফলতা কামনা করি। ফলে সংগঠনটির সার্বিক উন্নয়নে কিছু প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা হলঃ-
1। সংবিধান অনুসারে কার্যকরী কমিটি সংগঠনটির পরিচালক। বছরে একবার সাধারণ সভা তথা নির্বাচনের দিন ছাড়া সাধারণ সদস্যদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করার খুব একটা সুযোগ থাকে না। ফলে সংগঠন কিংবা সংগঠনের মৌলিক কার্যক্রম সম্পর্কে অধিকাংশেরই কোন ধারণা থাকে না। এেেত্র কার্যকরী পরিষদের নিয়মিত সভার সাথে সংযুক্ত করে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে একটি কার্যক্রম মূল্যায়ন সভার আয়োজন করা হলে সাধারণ সদস্যদের সাথে সংগঠনের নিয়মিত যোগাযোগ রা হবে এবং প্রতিবছর সম্পূর্ণ নতুন করে যারা সদস্য হবে তারাও সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে ধারনা নিতে পারবে।
2।'পারষ্পরিক সমপ্রিতি বৃদ্ধি ও ছাত্রকল্যাণ' এ শ্লোগানের উপর ভিত্তি করেই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পারষ্পরিক সমপ্রিতি বৃদ্ধির কথা যদি বলা হয় তবে অন্য দশটা সংগঠন থেকে এর কার্যকারীতা অনেক বেশি। এছাড়া প্রতিবছর বনভোজনের আয়োজন করা এবং এবছর একটা ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্দ্যোগ সমপ্রিতি বৃদ্ধির েেত্র অগ্রনী ভুমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। ম্যাগাজিন প্রকাশের েেত্র আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে এভাবে বড় পরিসরে বার্ষিক একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ না করে মাসিক/ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে একটি নিয়মিত প্রকাশনা করা গেলে সংগঠনের সদস্যরা সহ অপরাপর ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত লেখনীর মাধ্যমে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে। ছাত্র কল্যানের কথা যদি বলা হয় তবে সেটা দু'ধরনের, প্রথমটা সংগঠন অথবা সংগঠনের বাহিরে গরীব মেধাবীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান। আমার জানামতে সংগঠনের ইতিহাসে এধরনের কয়েকটি কার্যক্রম ইতোমধ্যে হয়ে গেছে এবং সামনে আরো উদ্দ্যোগ আছে বলে শুনেছি। দ্বিতীয় যে কল্যাণ সেটি হচ্ছে নিজেদের কল্যাণ, সংগঠনের যারা সদস্য তাদের মৌলিক উন্নয়ন। বক্তার েেত্র একজন ভালো বক্তা, উপস্থাপনার েেত্র একজন ভালো উপস্থাপক, সর্বপরি প্রতিটা বিষয়ে যাতে এ সংগঠনের সদস্যরা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে ভালো পারফরমেন্স দেখাতে পারে এবং নিজেদের গড়ে তুলতে পারে সে বিষয়ে উদ্দ্যোগ এবং বিভিন্ন আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে।
3। বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিটা েেত্র আজ তথ্য প্রযুক্তি বিশেষ করে কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে। ফলে সাধারণ একটা চাকুরীর েেত্র সাধারণ শিাগত যোগ্যতার পাশাপাশি কম্পিউটার শিার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ থাকে। ফলে বাস্তবতার নিরিখে এ সংগঠনের যারা সদস্য তাদের সবাইকে কম্পিউটার,পাশাপাশি ইন্টারনেট এবং ইমেইল এর মৌলিক ব্যাপার সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে এবং সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে যাতে তারা এর ব্যবহার শিখে নেয় এবং ব্যবহার করে। এর ফলে চাকুরীর বর্তমান কঠিন বাজারেও একাডেমিক+কারিগরী, দু'টো শিার কল্যাণে কোন সদস্যকে ন্যুনতম একটা চাকুরী পেতে খুব একটা অসুবিধা হবে না।
4। একটা সংগঠনকে দীর্ঘমেয়াদী চালিয়ে নিতে হলে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কোন বিকল্প নেই। উন্নয়ন মূলক কোন কর্মকান্ড পরিচালিত না হলে সংগঠনের জন্য নিয়মিত ফান্ড গঠন করা বা সংগঠনকে নিয়মিতভাবে চালিয়ে নেয়া দূরহ হয়ে পড়বে। তাই কিন্টারগার্টেন, কারিগরী শিা, হস্তশিল্প ভিত্তিক যেকোন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সংগঠনের যেমন নিয়মিত একটা উন্নয়ন হবে পাশাপাশি এর সদস্যরা প্রকল্পগুলোর সাথে জড়িত থেকে নিজেদের ন্যুনতম আর্থিক অভাব অনটনগুলো মেটাতে পারবে। সংগঠন পরিচালনার সাথে যারা জড়িত তারা ছাড়াও পৃষ্ঠপোষকদের এ বিষয়টির প্রতি নজর দেয়ার আহবান জানাই।
সর্বপরি চাঁদা নির্ভর তথা কথিত কোন সংগঠন না হয়ে একটি উন্নয়নমুখী বাস্তবধর্মী সামাজিক তথা ছাত্র সংগঠন হিসেবে "কোম্পানীগঞ্জ স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন" স্বগৌরবে টিকে থাকবে এবং ছাত্র কল্যাণের বিশেষ ব্রতী নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে এ প্রত্যাশা এবং শুভ কামনা ব্যক্ত করি।
-জীবন রহমান
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০