দিনটি আলো জলসানো সুন্দর দিন। স্কুল থেকে লোক এসেছে আমি এবং আমার ছোট চাচা যেন স্কুলে যাই। মাত্র স্কুল ছুটি হল,এখন আবার স্কুলে যেতে বলার কারণ কী? কারণ আমাদের অজানা। সবে মাত্র এসে গা এলিয়ে দিয়েছিলাম এই সুফলা মায়ের বুকের শীতল মাটিতে। স্কুল থেকে ডেকেছে তাই কষ্ট হলেও যেতে হবে। একটা কথা আছে দুঃখের সংবাদ বাতাসের আগে চলে। স্কুলে পা দেয়ার আগেই জানতে পারলাম দূখের সংবাদটি যে, আমাদের মহান শিক অকুন্ঠ শ্রদ্ধার পাত্র, সে সফল পুরুষ জনাব সফি উল্যাহ(বিএসসি) স্যার আর নেই। গত 8ও 9 তারিখ তিনি প্রচন্ড জ্বরে ভুগেছেন। থাকতেন তিনি আমাদের স্কুলের ছাত্রাবাসের একটি ক।ে সেই করে পাশের রুমে থাকত কয়েকজন ছাত্র। যারা থাকতো তারা পরীাথর্ী হওয়ায় সবাই বাড়ি চলে গিয়েছিল। শুধু আমাদের সিনিয়র মাসঊদ ভাই ছিলেন। মাসঊদ ভাই নিজের সাধ্যমত সেবা ও ডাক্তারের ব্যবস্থা করেন। ঘটনার দিন সকাল 9টায় আমরা ছাত্র_ছাত্রীরা সবাই স্যারকে হোস্টেলে গিয়ে দেখেও আসি। স্যারকে জেলা শহর মাইজদীতে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই কয়েকজন শিক তার সাথে যাবেন বিধায় স্কুল চার ঘন্টায় ছুটি হল।
এবার আসি পূর্বের কথায়। স্কুলে গিয়ে জানতে পারলাম বিকাল 4টায় স্যারের কফিন আসবে তাই অন্যান্য স্যারদের খবর দিলাম এবং অঝর ধারার বৃষ্টি চোখে নিয়ে অপোর কঠিন মহুর্ত গুলো পার করতে লাগলাম। অবশেষে কফিন আসল,জানাযা হল এবং নিয়ে যাওয়া হল তার বাড়িতে সমাধিস্থ করার জন্য। এভাবে থেমে গেল চলমান কম্পিউটারের সব কাজ। বিদায় নিল তার কর্ম শক্তি বিদু্যত। আর সেই সাথে স্মৃতি ডিভাইস মানুষ ভুলে গেল তার জীবনের সব কাজ। তার কর্মশক্তি বিদু্যত থাকা আবস্থায় তিনি রেখে গেছেন কৃতিময় জীবন। তার থেকে আমরা আমাদের মেীলিক অধিকার শিার হাতে খড়ি।
আমাদের গ্রামের নাম রামপুর। এটি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানায় আবস্থিত। অন্য 64 গ্রামের মত আমাদের গ্রামখানিও সুজলা_সুফলা,নেই গাড়ির কালো ধোঁয়া,নেই কোলাহল,আছে দিগন্ত জোড়া মাঠ,সাথে আছে সংস্কৃতির সুনাম। এরই মাঝে গড়ে উঠেছে বামনী ঊচ্চ বিদ্যলয়। যার প্রতিষ্ঠাকালীন নাম বামনী মাইনর স্কুল। আমাদের এই শিা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয় 1914ইং সালে। 1914সাল থেকে 1965সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকজন শিক প্রধান শিক হিসাবে শিকতা করেছেন। 1965সাল থেকে 2002সালের 10ই এপ্রিল পর্যন্ত একটানা 37 বছর দায়িত্ব পালন করেন জনাব সফি উল্যাহ(বিএসসি) স্যার। স্যার মহান শিক হিসাবে জ্ঞান,প্রজ্ঞা,মানবতা,উদারতা ও সততার যে দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন তা অতুলনীয়। আশ-পাশের এমন কোন গ্রাম নেই ,এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়িতে তার কোন ছাত্র নেই। তিনি জাতিকে উপহার দিয়েছেন 37 টা সফল ব্যাচ। তার 37 বছরের চাকুরী জীবনে কেউ কোন অন্যায় কাজ পায়নি,যার উজ্জ্বল সাী তার সহকর্মীরা,তার ছাত্ররা এবং গ্রামবাসী। হাস্য রসিকতা হলেও জনাব শরীফ স্যারের মুখের বর্ণনা থেকে জানা যায় তার সততার কথা ঃ ঘটনাটা হল একদিন হেড স্যার স্কুলের বাগান থেকে কলা কেটে পিয়নকে দিয়ে বাজারে পাঠালেন বিক্রির জন্য,কিন্তু পথে শরীফ স্যার মজা করে 3টা কলা খেয়ে পেলেন। হেড স্যার এটা দেখে পেলেন। অবশেষে মাস শেষে শরীফ স্যার যখন বেতন নিতে আসেন,তখন হেড় স্যার তার বেতন থেকে কলা প্রতি 2টাকা করে কেটে নেন। শরীফ স্যার প্রথমে বুঝতে পারেননি। তিনি 6টাকা কম কেন জানতে চাওয়াতে স্যার তাকে বললেন আপনি আমার কাছ থেকে যত টাকা ইচ্ছা খান আমি আপনাকে কিছু বলবোনা,কিন্তু আপনি স্কুলের কলা খেয়েছেন যা আমার ও না,আপনার ও না,এটা স্কুলের সম্পত্তি। এতে কারো অধিকার নেই। সব ভালো মানুষের শত্রু থাকে এবং সম্ভবত স্যারেরও ছিল, যাদের একটি মহল তার বিরুদ্বে ষড়যন্ত্র করেছিল। চেয়েছিল তার সাজানো বাগানের ফুলকে তছনছ করে দিতে,কিন্তু যখন তাকে পরপারে ছেড়ে দিয়ে তারা হেড় স্যারের বাড়িতে যায় তখন তাদের মাথায় যেন সষ্ট্রার তৈরি বিদু্যত আঘাত করেছিল। সেদিন তারাও কেঁদেছিল অঝর ধারায়। যে ব্যক্তি রামপুর গ্রামে 37 বছর থেকে আলো জ্বেলেছিল,তার বাড়িতে যে কুটিরে আলো জ্বলার কথা সেই কুটির যেন তার শ্রদ্বায় ও দুঃখে নুয়ে পড়তে বসেছিল।
যে ব্যক্তি এই সমাজ,গ্রাম,দেশ ও জাতির জন্য এতো করল,সে আজ এই সমাজের মানুষের কাছে বিদু্যতবিহীন কম্পিউটার। তাই আজ আমি এবং আমরা স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্বা জ্ঞাপন করে তাকে ও তার প্রাপ্তিকে অবমূল্যায়ন করতে চাইনা। শুধু রামপুর নয় তথা কোম্পানীগঞ্জ বাসীর কাছে এইটুকু অনুরোধ থাকবে যেন প্রতিবছর 10ই এপ্রিলকে আঞ্চলিক শোক দিবস হিসাবে ঘোষনা করা হয়। আল্লাহ যেন স্যারের বেহস্ত নসিব করেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



