somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির পাতায় সেই তিনি :নূর ইসলাম সোহাগ

১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৬ সকাল ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্্রতিদিনির মত গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সুর্য়ের আলো উকি মারছে। অবাক হ্ওয়ার কারণ নেই, প্রতিদিনকার আলোর মত এই আলো,প্রতিদিনকার ভোরের পাখির ডাকের মত এই ডাক। এটি একটি নতুন দিনের আলাপন। গত দিনের সব স্মৃতি আজ মুছে গেছে। মুছে গেছে সব কোলাহল। কম্পিউটার চলছেতো চলছে। বিদু্যত চলে গেল! তারপর...তারপর মুছে গেল সব স্মৃতি। তেমনি মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেল 10,এপ্রিল 2002 সালের একটি দিন। এই বিশ্বমন্ডলে মানুষইতো সবচেয়ে বেশী জ্ঞানের অধিকারী। আবার মানুষই অতি তাড়াতাড়ি সবকিছু ভুলে যায়, কিন্তু আজো মানুষের কৌতুহল রয়ে গেছে,নদী কি মোহনায় এসে পিছনের পথকে ভুলতে পারে........!
দিনটি আলো জলসানো সুন্দর দিন। স্কুল থেকে লোক এসেছে আমি এবং আমার ছোট চাচা যেন স্কুলে যাই। মাত্র স্কুল ছুটি হল,এখন আবার স্কুলে যেতে বলার কারণ কী? কারণ আমাদের অজানা। সবে মাত্র এসে গা এলিয়ে দিয়েছিলাম এই সুফলা মায়ের বুকের শীতল মাটিতে। স্কুল থেকে ডেকেছে তাই কষ্ট হলেও যেতে হবে। একটা কথা আছে দুঃখের সংবাদ বাতাসের আগে চলে। স্কুলে পা দেয়ার আগেই জানতে পারলাম দূখের সংবাদটি যে, আমাদের মহান শিক অকুন্ঠ শ্রদ্ধার পাত্র, সে সফল পুরুষ জনাব সফি উল্যাহ(বিএসসি) স্যার আর নেই। গত 8ও 9 তারিখ তিনি প্রচন্ড জ্বরে ভুগেছেন। থাকতেন তিনি আমাদের স্কুলের ছাত্রাবাসের একটি ক।ে সেই করে পাশের রুমে থাকত কয়েকজন ছাত্র। যারা থাকতো তারা পরীাথর্ী হওয়ায় সবাই বাড়ি চলে গিয়েছিল। শুধু আমাদের সিনিয়র মাসঊদ ভাই ছিলেন। মাসঊদ ভাই নিজের সাধ্যমত সেবা ও ডাক্তারের ব্যবস্থা করেন। ঘটনার দিন সকাল 9টায় আমরা ছাত্র_ছাত্রীরা সবাই স্যারকে হোস্টেলে গিয়ে দেখেও আসি। স্যারকে জেলা শহর মাইজদীতে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই কয়েকজন শিক তার সাথে যাবেন বিধায় স্কুল চার ঘন্টায় ছুটি হল।
এবার আসি পূর্বের কথায়। স্কুলে গিয়ে জানতে পারলাম বিকাল 4টায় স্যারের কফিন আসবে তাই অন্যান্য স্যারদের খবর দিলাম এবং অঝর ধারার বৃষ্টি চোখে নিয়ে অপোর কঠিন মহুর্ত গুলো পার করতে লাগলাম। অবশেষে কফিন আসল,জানাযা হল এবং নিয়ে যাওয়া হল তার বাড়িতে সমাধিস্থ করার জন্য। এভাবে থেমে গেল চলমান কম্পিউটারের সব কাজ। বিদায় নিল তার কর্ম শক্তি বিদু্যত। আর সেই সাথে স্মৃতি ডিভাইস মানুষ ভুলে গেল তার জীবনের সব কাজ। তার কর্মশক্তি বিদু্যত থাকা আবস্থায় তিনি রেখে গেছেন কৃতিময় জীবন। তার থেকে আমরা আমাদের মেীলিক অধিকার শিার হাতে খড়ি।
আমাদের গ্রামের নাম রামপুর। এটি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানায় আবস্থিত। অন্য 64 গ্রামের মত আমাদের গ্রামখানিও সুজলা_সুফলা,নেই গাড়ির কালো ধোঁয়া,নেই কোলাহল,আছে দিগন্ত জোড়া মাঠ,সাথে আছে সংস্কৃতির সুনাম। এরই মাঝে গড়ে উঠেছে বামনী ঊচ্চ বিদ্যলয়। যার প্রতিষ্ঠাকালীন নাম বামনী মাইনর স্কুল। আমাদের এই শিা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয় 1914ইং সালে। 1914সাল থেকে 1965সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকজন শিক প্রধান শিক হিসাবে শিকতা করেছেন। 1965সাল থেকে 2002সালের 10ই এপ্রিল পর্যন্ত একটানা 37 বছর দায়িত্ব পালন করেন জনাব সফি উল্যাহ(বিএসসি) স্যার। স্যার মহান শিক হিসাবে জ্ঞান,প্রজ্ঞা,মানবতা,উদারতা ও সততার যে দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন তা অতুলনীয়। আশ-পাশের এমন কোন গ্রাম নেই ,এমন কোন বাড়ি নেই যে বাড়িতে তার কোন ছাত্র নেই। তিনি জাতিকে উপহার দিয়েছেন 37 টা সফল ব্যাচ। তার 37 বছরের চাকুরী জীবনে কেউ কোন অন্যায় কাজ পায়নি,যার উজ্জ্বল সাী তার সহকর্মীরা,তার ছাত্ররা এবং গ্রামবাসী। হাস্য রসিকতা হলেও জনাব শরীফ স্যারের মুখের বর্ণনা থেকে জানা যায় তার সততার কথা ঃ ঘটনাটা হল একদিন হেড স্যার স্কুলের বাগান থেকে কলা কেটে পিয়নকে দিয়ে বাজারে পাঠালেন বিক্রির জন্য,কিন্তু পথে শরীফ স্যার মজা করে 3টা কলা খেয়ে পেলেন। হেড স্যার এটা দেখে পেলেন। অবশেষে মাস শেষে শরীফ স্যার যখন বেতন নিতে আসেন,তখন হেড় স্যার তার বেতন থেকে কলা প্রতি 2টাকা করে কেটে নেন। শরীফ স্যার প্রথমে বুঝতে পারেননি। তিনি 6টাকা কম কেন জানতে চাওয়াতে স্যার তাকে বললেন আপনি আমার কাছ থেকে যত টাকা ইচ্ছা খান আমি আপনাকে কিছু বলবোনা,কিন্তু আপনি স্কুলের কলা খেয়েছেন যা আমার ও না,আপনার ও না,এটা স্কুলের সম্পত্তি। এতে কারো অধিকার নেই। সব ভালো মানুষের শত্রু থাকে এবং সম্ভবত স্যারেরও ছিল, যাদের একটি মহল তার বিরুদ্বে ষড়যন্ত্র করেছিল। চেয়েছিল তার সাজানো বাগানের ফুলকে তছনছ করে দিতে,কিন্তু যখন তাকে পরপারে ছেড়ে দিয়ে তারা হেড় স্যারের বাড়িতে যায় তখন তাদের মাথায় যেন সষ্ট্রার তৈরি বিদু্যত আঘাত করেছিল। সেদিন তারাও কেঁদেছিল অঝর ধারায়। যে ব্যক্তি রামপুর গ্রামে 37 বছর থেকে আলো জ্বেলেছিল,তার বাড়িতে যে কুটিরে আলো জ্বলার কথা সেই কুটির যেন তার শ্রদ্বায় ও দুঃখে নুয়ে পড়তে বসেছিল।
যে ব্যক্তি এই সমাজ,গ্রাম,দেশ ও জাতির জন্য এতো করল,সে আজ এই সমাজের মানুষের কাছে বিদু্যতবিহীন কম্পিউটার। তাই আজ আমি এবং আমরা স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্বা জ্ঞাপন করে তাকে ও তার প্রাপ্তিকে অবমূল্যায়ন করতে চাইনা। শুধু রামপুর নয় তথা কোম্পানীগঞ্জ বাসীর কাছে এইটুকু অনুরোধ থাকবে যেন প্রতিবছর 10ই এপ্রিলকে আঞ্চলিক শোক দিবস হিসাবে ঘোষনা করা হয়। আল্লাহ যেন স্যারের বেহস্ত নসিব করেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×