somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকে বাঁচতে দাও

০৯ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভূমিকে বাঁচতে দাও
__মুআম্মার আল-গাদ্দাফী


এই ক্ষুদ্র গ্রহে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটা হচ্ছে ভূমি। ভূমির কোনো বিকল্প নেই। ভূমি ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও বাঁচতে পারব না। আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু আছে, যা না হলেও আমাদের চলে যায়, তেমন অপুরণীয় কোনো ক্ষতি হয়ে যায় না। কিন্তু ভূমি .. জমিন ?.. জমি ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না। সুতরাং ভূমিকে দয়া কর, ভূমিকে বাঁচতে দাও। সাধবান জমি ধ্বংস কর না। তাহলে তোমরা এই জীবনে বেঁচে থাকার যাবতীয় শর্ত হারাবে। বায়োলজিক্যাল জীবন, যার অন্যতম, বরং প্রধানতম মানুষের জীবন, তার প্রধান উৎস খাদ্য্ত কঠিন, নরম, তরল.. সব প্রকারের খাদ্য। জীবনের প্রধান অবলম্বন খাদ্যের গোলার নামই জমিন। জমিন জীবনের খাদ্যের একমাত্র এবং বিকল্পহীন আধার, খাবার পাত্র। সুতরাং ফলনশীল কৃষি জমিন ধ্বংস করা মানে আমাদের একমাত্র খাদ্য গোলায় আগুন দেয়া। অনুরূপ কৃষি জমিন ধ্বংস করা মানে আমাদের একমাত্র পান উৎস ভেঙ্গে ফেলা। জমি জীবনের শ্বাসযন্ত্র, আমাদের ফুসফুস। তাই জমি ধ্বংস করা মানে নিজেদের ফুসফুসে ছুরি মারা, শ্বাসরোধ করে আত্মহত্যা করা। আকাশও জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। আকাশ পানি দিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে সহযোগিতা করে। তবে আমাদের জীবনে ভূমি ছাড়া আকাশ অর্থহীন। যদি জমিন না থাকে তাহলে আসমান ছাপিয়ে বৃষ্টি এলেও কোনো লাভ আছে ?.. মহাশূন্যের অন্য কোথাও হয়তো অক্সিজেন পাওয়া যাবে। কিন্তু সেখানে যদি ভূমি না থাকে তাহলে সেই অক্সিজেনের কোনো মূল্য নেই... ইতিহাসের যাবতীয় তৎপরতা, যুদ্ধ বিগ্রহ, মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের বা প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষে যাবতীয় লড়াইও এই ভূমিকে নিয়েই। ভূমি বা জমিনই দ্বন্ধমুখর এই ইতিহাসের অক্ষ, প্রধান কেন্দ্রবিন্দু... অগ্রসর মানুষ এখন মহাশূন্যের অনেক অজানা এলাকা আবিস্কার করছে, মহাশূন্যকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। কিন্তু ভূমি ছাড়া মহাশূন্যের কোনো মূল্য আছে ? জমিনের কাজে যদি মহাশূন্যকে ব্যবহার করা যায় তাহলেই কিন্তু এই সৌর-জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটা অর্থবহ স্বার্থকতা তৈরি হয়।

ভূমিই আমাদের প্রকৃত মাতা, তার গর্ভেই আমাদের জন্ম, তার মমতাময়ী কোলেই আমাদের বেড়ে ওঠা। তার সোনালী মুঠো থেকে খাবার খেয়ে এবং তার আঁজলা থেকে পানি পান করেই আমরা বেঁচে আছি। সুতরাং এই মমতাময়ী মায়ের অবাধ্য হয়েও না। তার সাথে কোনো অন্যায় আচরণ কর না। তার শরীর জখম কর না, তার মাথার চুল হাতের আঙ্গুল কেটে ফেল না। তবে কিছু দিন পর পর তার হাত-পায়ের নখগুলো কেটে দেবে, তার গায়ে ময়লা জমলে তা পরিষ্কার করবে। রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে তার সেবা করবে, ঔষধ-পথ্যের ব্যবস্থা করবে। তোমরাই বল তার এই মমতাময়ী বুকের উপর কি ভারি কিছু চাপিয়ে দেওয়া যায় ? তার পাজরের উপর প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড এই সব পাথরগুলো রাখা উচিৎ ? না .. না.. কখনো এই অন্যায় কর না। মায়ের প্রতি দয়া কর। মায়ের প্রতি কোনো অবহেলা কর না। এমন সোনার মা হারালে কয়েক জীবন কেঁদে বুক ভাসিয়েও আর মা ফিরে পাবে না। যে কোল তোমাদের সর্ব প্রথম আশ্রয় দিয়েছে, যে দোলনায় দোলে দোলে কেটেছে তোমাদের শৈশব তার উপর জুলুম কর না। বরং তার অবাধ্য সন্তানরা যে তার বৃদ্ধ নু্যব্জ ঘারে ভারি ভারি এই সব বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে তা সরিয়ে তাকে হালকা কর। সাবধান ! তোমাদের শেষ আশ্রয়, একমাত্র ঠিকানাটা বোকার মত ভেঙ্গে ফেল না। পরে শত অনুতাপ করেও কোনো লাভ হবে না।

ভূমি যদি হয় গর্ভবতী, প্রসবা, তাহলেই তা প্রকৃত জমি হয়ে ওঠে, আমাদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় এবং অনিবার্যতার এই চরিত্র লাভ করে। কিন্তু জমি যদি কোনো কারণে তার গর্ভ ও প্রসব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাহলে তা মূল্যহীন হয়ে যায়। আমরা যদি তার মুখ ইট-পাথরে ঢেকে দিয়ে, গায়ে পিচ ঢিলে তার প্রসব ক্ষমতা নষ্ট করে ফেলি তাহলে জমি বন্ধ্যা হয়ে যায়, গাছ-পালা-মিষ্টি পানি প্রসব করতে পারে না। তার গর্ভ থেকে মানুষ, প্রাণী, জীবনের জন্য উপকারী কোনো উপাদান বেরিয়ে আসে না। এই জমি মূল্যহীন। এই জমি মৃত জমি। মৃত জমির গর্ভে জীবন জন্ম নিতে পারে না। প্রাণহীন ভূমির বুকে কোনো প্রাণ প্রস্ফুটিত-বিকশিত হতে পারে না।

সুতরাং ভূমিকে বাঁচতে দাও। জমিকে হত্যা কর না। ইট-পাথর-পিচ দিয়ে ফসলি কৃষি জমি ঢেকে দেওয়া মানে জমিকে খুন করা। জমিকে খুন করা আর নিজ হাতে গলা টিপে নিজেকে হত্যা করা একই কথা। যারা ভূমি কন্যাকে জীবন্ত কবর দেয় তারা কি সুস্থ মানুষ ?.. জমিকে মেরে ফেললে কিভাবে বাঁচবে তোমরা ?... কোত্থেকে আসবে তোমাদের খাদ্য-পানি ? জমিকে বাঁচাও। ফসলি-কৃষি জমি না বাঁচলে তোমরাও বাঁচতে পারবে না। জমির উর্বরতা, ফলন ক্ষমতা নষ্ট করা মানেই জমিকে খুন করা। যারা নানাভাবে জমির উর্বরতা ও ফলন ক্ষমতা নষ্ট করে তারা ভূ-মাতার অবাধ্য সন্তান, খুনী, তারা মাতৃ হত্যার মত ভয়ংকর, নিকৃষ্টতম অপরাধে অপরাধী।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×