দোকানির কাছে দেয়াশলাই চাইতে গিয়ে ছেলেটির মনে পড়ল তার পকেটেই একটা রয়েছে। সারাদিনের এত পরিশ্রমের পর সিগারেটের প্রথম টানটা শরীরের প্রতিটি শীরায় একটা মৃদু অনুভুতি পৌছে দিল। ছেলেটির বোনের আজ গায়ে হলুদ। একমাত্র ভাই হিসেবে সকল দায়েত্বের বোঝাটা তাকে হাসিমুখে মাথাপেতে নিতে হয়েছে। আজ সারারাত ধরেই অনেক গানবাজনা আর মজা হবে ভাবতেই দয়েত্বের বোঝাটা তার কাছে বেশ হালকা মনে হয়। গায়ে হলুদের সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে গানের শিল্পীরা তাদের বাদ্যযন্ত্রগুলো স্টেজের উপর সেট করছে আর এই ফাকেই ছেলেটি তার বন্ধুদের সাথে পাড়ার চায়ের দোকানে চা-সিগারেটের তৃঞাটা মিটিয়ে নিছ্ছে। বাসা থেকে বলেছিল গানবাজনা খরচ একটু কম করতে, তারপরও লেজার লাইটের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। বোনের গায়ে হলুদ বলে কথা! চা শেষ না হতেই তারা ড্রামের শব্দ শুনতে পেল। হ্যামিলনের বাঁশির মত এ শব্দ ছেলেটিকে তার বন্ধুসহ এবং আরও অনেককেই কাছে টেনে আনল। ঘন্টখানেকের মধ্যেই গানের সাথে সাথে একদল যুবকযুবতির নৃত্যের তালে পরিবেশটা জমজমাট হয়ে উঠল। শীতের রাতে যেন একটুখানি গরমের রাজত্ব। গানের প্রতিটি শব্দ, বাজনার প্রতিটি ধ্বণী যেন নৃত্যরত মানুষগুলোর প্রতিটি রোমকুপের ভিতর চৌচীর করে ফেলছে। জীবনে কতই না আনন্দ !
সেখান থেকে একটু দুরে সাদা তিনতলা একটা বাড়ি। তার দোতালায় যে দস্পতী ভাড়া থাকে, তাদের জীবনের শ্রেষ্ট সম্পদ, তাদের চার বছর বয়সি ছোট মেয়েটা বিছানায় পড়ে আছে। শেষ নিঃশ্বাষটা ছোট্ট বুকটার ভিতরে কোথও লুকিয়ে আছে বলে ডাক্তার এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাছ্ছে। শিয়রর কাছে মায়ের বুক ফেটে যাছ্ছে তারপরও চিৎকার করে কাঁদতে পারছে না, যদি তার ছোট্ট সোনামনিটার বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা নিঃশ্বাষটা কান্নার শব্দে বের হয়ে যায়। খুব কাছের আত্বীয়স্বজনেরা বিছানার চারপাশে ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে। পাশের বাড়ির গানবাজনার আওয়াজে সবাই কিছুটা বিরক্ত। তাদের থেকে একটু দুরে দরজার কাছাকাছি উসকো-খুসকো চুলের যে লোকটা পাথরের মত বসে, সে শিশুটির বাবা। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিছানার দিকে। মনের সাথে যুদ্ধ করছে বিছানা থেকে চোখটা সরিয়ে নিতে। পাশের বাড়িটার থেকে ভেসে আসছে উন্মত্ব বাদ্যযন্ত্রের বিকট শব্দ, পরিবেশটার সাথে যা একেবারেই বেমানান। এ শব্দের প্রতিটা ধ্বণী যেন তার আসহায় বুকে শেলের মত আঘাত হানছে। তার খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে "আমার হৃদয় ভাঙার দিনে তোমরা সমবেদনা না জানাও অন্তত নিরব থাক। আমাকে একটু নিরবে কষ্ট পেতে দাও।" সে ভেবে দিশেহারা হয়ে পরে, তার এমন অসহায় একটা দিনে, তার কষ্টের একটুখানি কিরণ কেন তার নিকট প্রতিবেশীকে স্পর্শ করে না? এ প্রশ্নটা উত্তরের অপেক্ষায় কোথায় যেন লুকিয়ে থাকে। হয়তবা শিশুটার সাথে পারি দেয় অন্য ভুবনে...।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



